ক্রেস্টে ভেজাল : তোলপাড়
তালুকদার হারুন : মহান মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদান রাখার জন্য বিদেশী বন্ধু ও সংগঠনকে দেওয়া ক্রেস্টে ভেজালের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। সরকারের ভেতর ও বাইরে এ নিয়ে প্রচ- সমালোচনার ঝড় বইছে। মন্ত্রীরা বিষয়টি বিব্রত। জানা গেছে, এ নিয়ে ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনপ্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়েও এ নিয়ে দু’দিন ধরে চলছে নানা আলোচনা। গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন মন্ত্রী নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন বলে জানা গেছে। শুধু তাই নয়, দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, শিল্পী সাহিত্যিকরা এ ঘটনায় ক্ষব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। তাদের মতে, এ ঘটনা জাতি হিসেবে আমাদের চরমভাবে লজ্জায় ডুবিয়েছে। তারা দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।
গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েন সরকারের শীর্ষ আমলা মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইঞা। তিনি বলেন, ক্রেট তৈরির বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাজ ছিল না। প্রতিটি কাজের একটি বিভাজন থাকে। আমাদের কাজ ছিল সাইটেশন ও দাওয়াত কার্ড তৈরি করা এবং আসন বিন্যাস করা। কিছু কাজ করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাই কে কী করেছে, সেটা আমার বলার বিষয় নয়।
এই কেলেঙ্কারির দায় কার? মন্ত্রিপরিষদ সচিব বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে না বললেও ঘটনাটি সরকারকে লজ্জার ডুবিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের একজন মন্ত্রী দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ক্রেস্ট নিয়ে সৃষ্ট কেলেঙ্কারিতে বিদেশী মেহমানদের কাছে সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। জাতির সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সাহস তারা পায় কি করে। এ ঘটনা বিদেশী মেহবানদের কাছে ছোট করা হয়েছে। এ সঙ্গে জড়িত সকলেরই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।
উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ক্রেস্টের স্বর্ণের ১২ আনাই মিছে!’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, শিল্পী-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট নাগরিক ও সংগঠনকে সম্মাননার সময় দেওয়া ক্রেস্টে যে পরিমাণ স্বর্ণ থাকার কথা ছিল, তা দেওয়া হয়নি। আর ক্রেস্টে রূপার বদলে দেওয়া হয় পিতল, তামা ও দস্তামিশ্রিত সঙ্কর ধাতু।
জাতীয় মান সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় এই ক্রেট জালিয়াতির তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সাত পর্বে দেওয়া ওই সম্মাননার তৃতীয় পর্বে ৬১ ব্যক্তি ও সংগঠনের জন্য তৈরি করা ক্রেস্ট সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিএসটিআইয়ের কাছে পরীক্ষার জন্য পাঠায়। সেখানে ওই জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। বিদেশিদের সম্মাননা প্রদান-সংক্রান্ত নীতিমালায় বলা আছে, প্রতিটি ক্রেস্টে এক ভরি (১৬ আনা) স্বর্ণ ও ৩০ ভরি রূপা থাকবে। কিন্তু বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় দেখা গেছে, এক ভরির (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) জায়গায় ক্রেস্টে স্বর্ণ পাওয়া গেছে মাত্র ২ দশমিক ৩৬৩ গ্রাম (সোয়া তিন আনা)। এক ভরির মধ্যে প্রায় ১২ আনাই নেই। আর রূপার বদলে ৩০ ভরি বা ৩৫১ গ্রাম পিতল, তামা ও দস্তামিশ্রিত সঙ্কর ধাতু পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মিজানুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, সম্মাননার ক্রেস্ট বিএসটিআইয়ে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল কি না- তা তার জানা নেই। এ সংক্রান্ত ক্রয় কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব গোলাম মোস্তফা বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন। কত ভরি স্বর্ণ দেওয়ার কথা ছিল, বিল কত দেওয়া হয়েছিল তা গোলাম মোস্তফা সঠিক বলতে পারবেন।
জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ঘটনাটি আমার দায়িত্ব গ্রহণের আগে। জালিয়াতির ঘটনা আমার কানেও এসেছে। বিষয়টি লজ্জাজনক। প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর সঙ্গে জড়িতরা যেই হোক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়।
- See more at: http://www.dailyinqilab.com/2014/04/08/171357.php#sthash.QCj4a2Q9.dpufগতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েন সরকারের শীর্ষ আমলা মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইঞা। তিনি বলেন, ক্রেট তৈরির বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাজ ছিল না। প্রতিটি কাজের একটি বিভাজন থাকে। আমাদের কাজ ছিল সাইটেশন ও দাওয়াত কার্ড তৈরি করা এবং আসন বিন্যাস করা। কিছু কাজ করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাই কে কী করেছে, সেটা আমার বলার বিষয় নয়।
এই কেলেঙ্কারির দায় কার? মন্ত্রিপরিষদ সচিব বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে না বললেও ঘটনাটি সরকারকে লজ্জার ডুবিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের একজন মন্ত্রী দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ক্রেস্ট নিয়ে সৃষ্ট কেলেঙ্কারিতে বিদেশী মেহমানদের কাছে সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। জাতির সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সাহস তারা পায় কি করে। এ ঘটনা বিদেশী মেহবানদের কাছে ছোট করা হয়েছে। এ সঙ্গে জড়িত সকলেরই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।
উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ক্রেস্টের স্বর্ণের ১২ আনাই মিছে!’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, শিল্পী-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট নাগরিক ও সংগঠনকে সম্মাননার সময় দেওয়া ক্রেস্টে যে পরিমাণ স্বর্ণ থাকার কথা ছিল, তা দেওয়া হয়নি। আর ক্রেস্টে রূপার বদলে দেওয়া হয় পিতল, তামা ও দস্তামিশ্রিত সঙ্কর ধাতু।
জাতীয় মান সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় এই ক্রেট জালিয়াতির তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সাত পর্বে দেওয়া ওই সম্মাননার তৃতীয় পর্বে ৬১ ব্যক্তি ও সংগঠনের জন্য তৈরি করা ক্রেস্ট সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিএসটিআইয়ের কাছে পরীক্ষার জন্য পাঠায়। সেখানে ওই জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। বিদেশিদের সম্মাননা প্রদান-সংক্রান্ত নীতিমালায় বলা আছে, প্রতিটি ক্রেস্টে এক ভরি (১৬ আনা) স্বর্ণ ও ৩০ ভরি রূপা থাকবে। কিন্তু বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় দেখা গেছে, এক ভরির (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) জায়গায় ক্রেস্টে স্বর্ণ পাওয়া গেছে মাত্র ২ দশমিক ৩৬৩ গ্রাম (সোয়া তিন আনা)। এক ভরির মধ্যে প্রায় ১২ আনাই নেই। আর রূপার বদলে ৩০ ভরি বা ৩৫১ গ্রাম পিতল, তামা ও দস্তামিশ্রিত সঙ্কর ধাতু পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মিজানুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, সম্মাননার ক্রেস্ট বিএসটিআইয়ে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল কি না- তা তার জানা নেই। এ সংক্রান্ত ক্রয় কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব গোলাম মোস্তফা বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন। কত ভরি স্বর্ণ দেওয়ার কথা ছিল, বিল কত দেওয়া হয়েছিল তা গোলাম মোস্তফা সঠিক বলতে পারবেন।
জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ঘটনাটি আমার দায়িত্ব গ্রহণের আগে। জালিয়াতির ঘটনা আমার কানেও এসেছে। বিষয়টি লজ্জাজনক। প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর সঙ্গে জড়িতরা যেই হোক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়।
0 comments:
Post a Comment