সত্য জানি, সত্য মানি এবং সত্যের সাথে থাকি। সকল খবর হোক সত্য ও নিরপেক্ষ।

সত্যকে অস্বীকার কারনে, গত চার দশকে জাতি হিসাবে আমরা মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে পারিনি । স্বাধীনতার প্রায় অধ শতাব্দীতে জাতি তার কাঙ্তিত সাফল্য পায়নি।

মোর নাম এই বলে ক্ষ্যাত হোক – আমি তোমাদেরই লোক

যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এ জাতি সমৃদ্ধিলাভ করেছে - আমরা তাদের ভুলব না । তোমরা অমর হয়ে থাকবে জাতীর ভাগ্যাকাশে। আমাদের ভালবাসা ও দোয়া রইল।

IT BD SOFT. একটি বিশ্বস্থ আইটি ট্রেনিং সেন্টার

------Pls visit http://itbdsoft.tk ------- কম্পিউটার শিক্ষা প্রসার ও বিকাশে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। শিক্ষা হোক সবার জন্য উম্মুক্ত ও সহজলভ্য।

পযটন হোক – জাতীয় উন্নতির একমাত্র হাতিয়ার।

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া। কক্সবাজার, সুন্দরবন, কুয়াকাটা, নীলগিরি সহ হাজারো দৃষ্টি নন্দন অপার সৌন্দার্য ছড়িয়ে আছে এ জমিনে – জানি ও সমৃদ্ধ করি দেশমাতৃকাকে।

IT BD SOFT. একটি বিশ্বস্থ আইটি ট্রেনিং সেন্টার

------Pls visit http://itbdsoft.tk ------- কম্পিউটার শিক্ষা প্রসার ও বিকাশে / এছাড়াও আমরা ডোমিন- হোষ্টিং বিক্রি /আপনার সাইটের ভিজিটর বাড়ানো / সাইটিকে কে গুগল টপে আনতে আমাদের সাহায্য নিন।

Thursday, June 12, 2014

সব ফলেই বিষ

সব ফলেই বিষ

হাসান সোহেল : কেমিকেল যুক্ত ফলের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দেশের বিভিন্নবাজারে ফলের দোকানে গতকালও অভিযান চালানো হয়। এই অভিযানকে আরও জোরদার করতে এবং রাজধানীতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ফলের প্রবেশ ঠেকাতে পুলিশের অভিযানও শুরু হয়েছে। বুধবার রাত থেকেই রাজধানীর ৮টি প্রবেশপথে বিশেষ চেকপোস্ট বসিয়ে এই অভিযান চালানো হচ্ছে। গাবতলী, সায়েদাবাদসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ৮টি স্থানে এ অভিযান চলবে বলে বিএসটিআই জানায়।
এদিকে অভিযান চালিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ফরমালিনের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেই ঘটনাস্থলে ধ্বংস করা হচ্ছে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এসব ফল। সামাজিক সংগঠন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর পক্ষ থেকেও জনস্বার্থে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার থেকে ফল সংগ্রহ করে বিষাক্ত ফরমালিনের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাদের সংগ্রহ করা নমুনার মধ্যে শত ভাগ জামে, ৯৫ ভাগ লিচুতে এবং ৬৬ ভাগ আমে বিষাক্ত ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অন্যান্য ফলেও ফরমালিন পাওয়া গেছে বলে পরীক্ষায় উঠে এসেছে। পবা’র পক্ষ থেকে খাদ্যে ফরমালিন মেলানোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও বিক্রেতাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া যথেষ্ট নয় বলে উল্লেখ করা হয়। এ ক্ষেত্রে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ (ক) ধারা ব্যবহার করে জড়িতদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদ- বা যাবজ্জীবন কারাদ-ের বিধান কার্যকরের দাবি জানানো হয়েছে।  
অপরদিকে আগারগাঁও হলিডে মার্কেটে ফর্মালিন ও কেমিকেলমুক্ত সাশ্রয়ী মূল্যের মৌসুমী ফলের বাজারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মোঃ মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি সারা দেশে আরো বিষমুক্ত দেশী ফলের বাজার চালু করার আহবান জানিয়েছেন। এছাড়া ফরমালিন প্রতিরোধে এই সংসদ অধিবেশনেই আইন পাস হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।   
রাজধানীতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ফলের প্রবেশ ঠেকাতে গতকাল রাত থেকেই শুরু হয়েছে অভিযান। ফলের চালান আসে নগরীর এমন আটটি প্রবেশমুখে চৌকি বসিয়ে চালানো হবে তল্লাশি। স্থানগুলো হলো পোস্তগোলা ব্রীজ, যাত্রাবাড়ী থানার সাইনবোর্ড, ডেমরা থানার সুলতানা কামাল ব্রীজের পশ্চিম পাশে ডেমরা চৌরাস্তা, বাবুবাজার ব্রীজ, সদরঘাট, ওয়াইজঘাট, গাবতলীর পর্বতা সিনেমা হলের সামনে, আব্দুল¬াহপুর ব্রীজ ও ধউর ব্রীজ। ক্ষতিকর ফল ধ্বংস করার পাশাপাশি থাকবে জরিমানাসহ তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা।  
ডিএমপি জানায়, ফরমালিনযুক্ত ফল, মাছ ও তরি-তরকারি বিক্রয়, খাদ্যে ভেজাল দেয়া, অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে খাবার সংরক্ষণ, পচা ও বাসি খাবার বিক্রয়, ভেজাল গুঁড়া মসলা তৈরি ও বিক্রয় ও নকল খাদ্যজাতীয় দ্রব্য তৈরি ইত্যাদি জনস্বাস্থ্যহানিকর কার্যকলাপের বিরুদ্ধে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। রাজধানীবাসীর জন্য বিষমুক্ত ফল নিশ্চিত করতে শুরু হচ্ছে এই অভিযান। অভিযানে পুলিশকে সব ধরনের সহায়তা দেবে প্রশাসন ও বিএসটিআই। 
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের দুই লাখ টাকা জরিমানা ও দুই বছর পর্যন্ত কারাদ- দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে। প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, ২০১৩ সালে বিশুদ্ধ খাদ্য আইনে খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল দেয়ার জন্য মৃত্যুদ- পর্যন্ত শাস্তির বিধান রয়েছে। সাধারণত রাতেই রাজধানীতে প্রবেশ করে ফলের বড় চালান। তাই আপাতত রাতে সীমাবদ্ধ থাকলেও প্রয়োজনে অভিযানের সময়সূচি দিনেও নির্ধারণ করা হতে পারে। 
এদিকে পবা গতকাল বুধবার রাজধানীর কলাবাগানে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ফলে ফরমালিনের উপস্থিতি পরীক্ষা করে আশঙ্কাজনক তথ্য দিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে পবা’র নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবদুস সোবহান জানান, ১ থেকে ১০ জুন পর্যন্ত ঢাকার ৩৫টি এলাকা থেকে আম, জাম, লিচু, আপেল ও মালটা সংগ্রহ করে এই পরীক্ষা চালানো হয়েছে। পরীক্ষায় ১৪টি নমুনা জামের সব ক’টিতেই ফরমালিন পাওয়া গেছে। 
পবা জানায়, জাম, আম ও লিচু ছাড়াও আপেলে ৫৯ শতাংশ, ৬৯ শতাংশ মালটা ও ৮৭ শতাংশ আঙুরে ফরমালিন মিলেছে। ঢাকার পাশাপাশি গত ২২ ও ২৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের কয়েকটি বাজার থেকে ফলের নমুনা সংগ্রহ করে পবা। সংগৃহীত সফেদা, আনারস ও আঙুরে শত ভাগ ফরমালিন পেয়েছে পবা। এ ছাড়া ৩৩ ভাগ আপেল, ৭৭ ভাগ মালটা ও ৫০ ভাগ কমলায় ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়ার কথা জানিয়েছে সংগঠনটি।
অপরদিকে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মোঃ মসিউর রহমান রাঙ্গা রাজধানীসহ সারা দেশে আরো বিষমুক্ত দেশী ফলের বাজার চালু করার আহবান করেছেন। একই সঙ্গে সেবাধর্মী এ কর্মকা-ে রাজধানীবাসীসহ সকলের সহায়তার কথা জানিয়েছেন। 
গতকাল আগারগাঁও হলিডে মার্কেটে ফরমালিন ও কেমিকেলমুক্ত সাশ্রয়ী মূল্যের মৌসুমী ফলের বাজারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে তিনি এ আহবান জানান। সমবায় অধিদপ্তরের সমবায় বাজার কনসোর্টিয়াম লিঃ-এর সদস্যদের উদ্যোগে রাজধানীবাসীর জন্য এই মৌসুমী ফলের বাজার চালু করা হয়। প্রতিমন্ত্রী এই বাজার থেকে ফরমালিনমুক্ত ফল ক্রয় করেন। অতিরিক্ত সমবায় নিবন্ধক সর্দার মোঃ জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সমবায় নিবন্ধক মোঃ হুমায়ুন খালিদ, কনসোর্টিয়ামের সহ-সভাপতি নাজমুল আলম ভূঁইয়া জুয়েল ও পরিচালক রবিউল ইসলাম। 
মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক আগ্রহে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় অধিদপ্তর জনকল্যাণে কনসোর্টিয়ামটি গঠন করায় দেশের সমবায়ীদের জীবনমান উন্নয়ন ঘটছে। এ বাজারে রাজশাহী ও চাঁপাই নবাবগঞ্জের সমবায় সমিতির সদস্যদের বাগান থেকে বিভিন্ন জাতের দেশী আম, দিনাজপুর হতে সুস্বাদু বোম্বাই লিচুর সমারোহ ঘটেছে। বাজারটিতে সমবায় অধিদপ্তর ও বিএসটিআই সার্বিক সহায়তা করছে। 
এ সময় বিএসটিআই’র একটি প্রতিনিধি দল ওই বাজারের ফলে কেমিকেল আছে কিনা তা পরীক্ষা করেন। তবে, ওই সময়ে এই বাজারে কোন ফলে ফরমালিন বা অন্য কোন কেমিকেলের আধিক্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন বিএসটিআই’র সহকারী পরিচালক মোঃ রিয়াজুল হক। একই সঙ্গে রাত থেকে তাদের অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি। 
উল্লেখ্য, সমবায় অধিদপ্তর দেশের নিত্যপণ্য সামগ্রীর বাজার স্থিতিশীল ও ভোক্তা-উৎপাদক স্বার্থ রক্ষায় সমবায় বাজার কনসোর্টিয়াম লিমিটেড গঠন করে। এ সংগঠন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষি সমবায়ীদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি ক্রয় করে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে সমবায় বাজারে বিপণনের মাধ্যমে মুনাফালোভী মধ্যস্বত্ব ভোগীদের সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে শুরু করেছে। এতে করে ভোক্তা সাধারণ ও উৎপাদকগণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকৃত হচ্ছেন।
সূত্র - দৈনিক ইনকিলাব।

Monday, June 9, 2014

ফলে বিষ ভীতি

ফলে বিষ ভীতি

হাসান সোহেল ও সায়ীদ আবদুল মালিক : বিষ মেশানো ফলে সয়লাব বাজার। ক্রেতারা ভয়ে মৌসুমী এসব ফল কিনতে সাহস পাচ্ছে না। আবার  অনেকেই বাজার থেকে কেনা এসব ফল খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। রয়েছে মৃত্যু ঝুঁকিও। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ, বাঙ্গি, আনারসসহ বিভিন্ন ফলে মেশানো হচ্ছে মরণঘাতী এই কেমিক্যলি। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত ফরমালিন মেশানো ফলের বাজারে অভিযান চালালেও তা একেবারেই লোক দেখানো। এদের বিরুদ্ধে নেয়া হচ্ছে না কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। 
এদিকে, নজরকাড়া রঙে বাজারে রয়েছে হরেকরকম ফল। এসব ফলের রং টকটকে লাল কিংবা গাঢ় হলুদ। মৌ মৌ গন্ধ। দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। ক্রেতারা আকৃষ্ট হয়ে বেশি দাম দিয়েও এসব ফল ক্রয় করছেন। বাহারি রংয়ের এই ফল গাছ পাকা নয়। এ ফলে মাছি কিংবা মৌমাছি কোনটাই বসতে দেখা যায় না। চোখে পড়ে না, দেখা মেলে না পিঁপড়ারও। এর কারণ এসব ফল কার্বাইড ও ফরমালিন মিশ্রিত। কেমিক্যাল নামে বিষ মিশিয়ে এই ফল বিক্রি হচ্ছে সারা দেশের শহর, বন্দর, গ্রাম, গঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। শুধুমাত্র ফলের পচন এড়াতে মেশানো হচ্ছে মানবদেহে ক্যান্সারবাহী এই বিষাক্ত কেমিক্যাল। আর বিষ মেশানো এসব ফল খাচ্ছে দেশের কয়েক কোটি মানুষ। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের সামনেই চলছে এই বিষ মেশানোর কাজ। কিন্তু কারোরই নেই সেদিকে নজর। সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে এইসব ফল খাওয়া এবং ক্রয় নিয়ে ভীতি বিরাজ করছে। অনেক ক্রেতা ভালো-মন্দ বিচার না করতে পেরে ক্রয় করছেন এসব মৌসুমী ফল। খেয়ে ভুগছেন বিভিন্ন অসুখে। রাজধানীর প্রতিটি বাজারে বিক্রি হচ্ছে এসব কেমিক্যাল মিশ্রিত ফল। এমনকি ফরমালিন মুক্ত সাইনবোর্ড টানিয়ে মৌসুমী ফল বিক্রি হচ্ছে তাও কতটুকু ফরমালিনমুক্ত এ নিয়েও প্রশ্ন জনমনে। কারণ এ ধরনের মুক্ত বাজারেও মিলছে বিষাক্ত এ বিষ মিশ্রিত ফলের সমারোহ। তাই এ ধরনের বাজারগুলোতে শোভা পাওয়া ফলগুলো ভেজালুমক্ত কি না সে ব্যাপারে কোনো দিকনির্দেশনা নেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসটিআই’র। এছাড়া যারা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন তারাও এই বিষ খাচ্ছেন। তারপরও নেয়া হচ্ছে না কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের দু’একটা অভিযান দেখা গেলেও তা শুধুমাত্র লোক দেখানো। 
এদিকে সামনে রমাজন মাস। রমজানে এসব ফলের কদর বেশি। এই মাসেই মুসলমানরা প্রতিদিন ইফতারির সময়ে রকমারি ফল দিয়ে তাদের রমজানের ক্লান্তি দূর করেন। কিন্তু এসব ফলে ফরমালিনের অধিক্য থাকায় উদ্বিগ্ন দেশের মুসলমানরা। সরকার ২ বছর আগে ফরমালিন আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করলেও ফরমালিন নামের বিষের ভয়াবহতা কমেনি। এর আগেও হাইকোর্ট থেকে এ বিষয়ে কয়েকদফা নির্দেশনা থাকলেও কোনো কাজ হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসটিআই-এর একটি সূত্র জানিয়েছে, জনবল সঙ্কটের কারণে তাদের অভিযান চালানোয় সমস্যা হচ্ছে। জনবল কিছুটা বাড়ানো হলেও এখনো পর্যাপ্ত  নয়। তাই কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে এ ধরনের অভিযান চালানো সহজ নয়। যদিও গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার বেনজির আহমেদ কিছুটা আশার বাণী শুনিয়েছেন। তিনি জানান, আগামী বুধবার থেকে রাজধানীর আটটি প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান চালাবে পুলিশ। মাত্রাতিরিক্ত ফরমালিনের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেই ঘটনাস্থলে ফল ধ্বংস করা হবে। অপরদিকে গতকাল সংসদে ফরমালিনের ব্যবহার ঠেকাতে এ বিষয়ক আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। 
সংসদ অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ফরমালিন থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যায় সেসব বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আইন সংশোধন করে কঠোর সাজার সংশোধনী প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সংসদের চলতি অধিবেশনেই সংশোধিত আইনটি পাস হবে। এছাড়া সম্প্রতি এফবিসিসিআই’র এক আলোচনা সভায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত ফরমালিন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইনে মন্ত্রিসভা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় যাবে। এরপর আইনটি সংসদে যাবে। সংসদের আগামী বাজেট অধিবেশনে  ফরমালিন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন পাসের উদ্যোগ নেয়া হবে। 
বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্যদ্রব্যে রাসায়নিক এই পদার্থ (বিষ) ব্যবহারে ক্যান্সার, প্যারালাইসিস, কিডনির রোগ, লিভার সিরোসিস এবং নানা মরণব্যাধিতে আক্রান্তের হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। একই সঙ্গে ভেজাল এই ফলমূল খেয়ে দিন দিন শিশুদের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া গর্ভবতী মেয়েদের ক্ষেত্রেও মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। সন্তান প্রসবের সময় জটিলতা, বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে, প্রতিবন্ধী শিশুরও জন্ম হতে পারে। এ  থেকে প্রতিকার পেতে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। বাজারে ফলমূল দেখে-শুনে কিনতে হবে। 
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন ফলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, অভিজাত সুপার শপ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তের ফলের দোকান কিংবা নিম্নবিত্তের ফুটপাত বাজার সবখানেই এই বিষাক্ত ফলের সমারোহ। কেমিক্যালে পাকানো কলা অথবা হিট দেয়া বেলের সাথে আছে বিষাক্ত পেয়ারাসহ হরেক ফল। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাগান থেকে অপরিপক্ব ফল পেড়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে তা ঢাকায় পাঠাচ্ছেন। বর্তমানে বাজারে রাজশাহী, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম ও লিচু বলে যা বিক্রি হচ্ছে তার সবই কার্বাইডে পাকানো বলে স্বীকার করেছেন ওই অঞ্চলের একাধিক ফলের আড়তদাররা। 
রাজশাহীর শাল বাগান এলাকার পাইকারি ফল ব্যবসায়ী ফরিদ আহমেদ জানান, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাগানগুলোতে এখনো আম পাকতে শুরু করেনি। স্বাভাবিকভাবে আম পাকতে আরো অন্তত ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগবে। তিনি বলেন, ঢাকার অসৎ ব্যবসায়ীরা অগ্রিম টাকা দিয়ে গাছ থেকে চাষিদের দিয়ে অপরিপক্ব আম পেড়ে কার্বাইড দিয়ে ঢাকা নিয়ে যাচ্ছেন। যা ঢাকা পৌঁছেতে গিয়ে পেকে হলুদ বর্ণ ধারণ করছে। ফরিদ আহমেদ আরো জানান, এখানকার গাছ পাকা আম কখনো এতোটা হলুদ হয় না, যতটা ঢাকার দোকানে শোভা পায়। লিচু সম্পর্কে তিনি বলেন, খরায় এবার লিচুর ফলন কম। অতিরিক্ত তাপে লিচু পাকার আগেই গাছে ফেটে নষ্ট হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে স্থানীয় জাতের গুটি লিচু উঠলেও তা এখন শেষ পর্যায়ে। ৪/৫ দিন হলো বোম্বাই জাতের লিচু বাজারে আসলেও তার পরিমাণ কম। বেশির ভাগ লিচুই ফরমালিন ও বিষ দিয়ে বাগান থেকে ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, মার্কেটগুলোতে ভেজাল আম মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বাজারে আসে। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায় জুন মাসের ১ তারিখ থেকে। কিন্তু অভিযানের মধ্যেও দেখা যায় ফরমালিনমুক্ত ফলের মার্কেটেও ফরমালিনযুক্ত ফল। অভিযানের কারণে তাৎক্ষণিক কিছুটা ফরমালিনের আধিক্য কমলেও অভিযানের পরপরই আবার মার্কেগুলোতে বিক্রি হচ্ছে কেমিকেলযুক্ত বিষাক্ত বিভিন্ন ফল। এছাড়া অভিযান চলাকালীন কয়েকদিন এসব বাজারে বিক্রি বন্ধ থাকলেও কিছু দিন পর আবার বিক্রি চলে পুরোদমে। 
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কার্বাইড মেশানো আম দেখতে অনেকটাই চাকচিক্য এবং ন্যাচারাল কালার হবে। এর গায়ের রং হবে চকচকে। দেখে বোঝার উপায় নেই এ আমে কেমিক্যাল মেশানো হয়েছে। বিষাক্ত কার্বাইড মেশানো আম নাকের কাছে ধরলে আসল গন্ধ পাওয়া যাবে না। খেয়েও পাওয়া যাবে না এর আসল স্বাদ। তাদের মতে, বিষাক্ত এসব আম চেনার অন্যতম উপায় হলো ২/৩ দিনের মধ্যে এ আমের চামড়া শুকিয়ে যাবে। কার্বাইডমুক্ত আম শুকালে সুঘ্রাণ পাওয়া যাবে। এ আমের খোসা অপেক্ষাকৃত সবুজ হবে। রাজশাহীর হিমসাগর, ল্যাংড়া বা ফজলি আমের খোসা সবুজ না হলে বুঝতে হবে, তাতে কার্বাইড মেশানো হয়েছে। 
পল্টন বায়তুল মোকাররমের উল্টো পাশের ব্যবসায়ী আকমল হোসেন জানান, ফলে ফরমালিন আছে কি না বলতে পারবো না। আমরা আড়ত থেকে আনি, তারা ভালো বলতে পারবেন। ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন জানান, আম প্রথমে রাজশাহী আসে। রাজশাহী থেকে ধাপে ধাপে বিক্রি পর্যন্ত সপ্তাহ চলে যায়, মাঝখানের এই সময় আম টিকিয়ে রাখতে অনেক সময় মেডিসিন দেয়া হতে পারে।
পলাশী বাজারে একটি ফলের দোকান থেকে আম কিনছিলেন মোহাম্মদ শাহজাহান। ফরমালিনমুক্ত আম কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, এই আম কেনা ছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই। তিনি বলেন, মৌসুমী ফল বাজারে এসেছে তাই কিনতে হচ্ছে। পরিবারের সবাই আম খেতে চাইছে তাই কিনেছি। এখন এসব ফলে ভেজাল আছে কী না তা বের করা সরকারের দায়িত্ব। কেমিক্যাল দিয়ে নাকি কেমিক্যাল ছাড়া আম পাকানো হয়েছে, তা তো আর আমরা বুঝতে পারি না। বিক্রেতাদের কথা বিশ্বাস করে আম কিনতে হচ্ছে। 
মালিবাগে ফল কিনতে আসা গৃহিণী তানিয়া আক্তার বলেন, ফলে ফরমালিন থাকবে এ আর নতুন কি? জেনে শুনেই বাৎসরিক এ মৌসুমী ফলের নামে বিষ কিনে নিয়ে যাচ্ছি। ভালো ফল পাবার নির্ভরতা কোথায়? তিনি অভিযোগ করে বলেন, কোনো আইন বা উদ্যোগ ফরমালিন বন্ধ করতে পারছে না। সাজানো গোছানো মৌসুমী ফলের নামে বিষ বিক্রি হচ্ছে। আমরা বাধ্য হয়ে এ ফল কিনছি, তাও আবার চড়া দামে। এ ক্ষেত্রে সরকারের যেন কিছুই করার নেই। আর আইন হলেও তাতো আর দেশে বাস্তবায়ন হয় না। 
ধানমন্ডি ক্লাব, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের মাঠ, মালিবাগ, পল্টন, গুলিস্তান, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ি, শনিরআখরা, ফার্মগেটসহ নগরীর বিভিন্ন জায়গায় চলছে এখন কার্বাইডমুক্ত আমের মেলা। আয়োজক ও বিক্রেতারা অবশ্য এ মেলায় জোর গলায় বলছে, তাদের এখানে বিক্রি হওয়া আম শতভাগ কার্বাইডমুক্ত আর বাইরে বিক্রি হওয়া আম কার্বাইডযুক্ত। অবশ্য বাইরের বিভিন্ন দোকানিরা এটা মানতে নারাজ। তারা জানান, মেলায় কিছু কিছু আমে কার্বাইড দেয়া হয়। যাত্রাবাড়ী ও কারওয়ান বাজার আমের আড়তে গিয়ে পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকায় আসা বেশির ভাগ আমেই কার্বাইড মেশানো হয়। তবে কার্বাইড গাছ থেকে পেড়েই স্প্রে করে দেয়া হয়। এতে ঢাকায় আসতে আসতে আম পেকে যায়। আবার কাঁচা আম ঢাকায় এনেও ক্ষতিকর কার্বাইড দিয়ে পাকানো হয়। দু-একজন ব্যবসায়ী অস্বীকার করলেও বেশির ভাগ ব্যবসায়ী ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে আমে কার্বাইড মেশানোর স্বীকারোক্তি পাওয়া গেছে। এমনকি গতকালও রাজধানীর কলাবাগান এবং ধানমন্ডি মাঠের পাশে ফরমালিনমুক্ত ফলের দোকান থেকে আমসহ বিভিন্ন ধরনের ফরমালিনযুক্ত ফল ধ্বংস করা হয়েছে। 
এদিকে মৌসুমী ফলের অন্যতম আকর্ষণ লিচু বাজারে এসেছে পুরোদমে। দেশের সর্বত্র এখন পাকা লিচুতে ভরপুর। বাজারের আসা লিচুর ওপরের রং এবং দেখতে তাজা হলেও ভেতরে পরিপক্বতার কারণে তার স্বাদ ও গন্ধ কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবেই দেশের মানুষ বাজার থেকে ফল কিনে প্রতারিত হচ্ছেন অহরহ। আর এসব পাকা লোভনীয় লিচু ক্রেতা কিনে নিয়ে তার সাথে যে বিষও কিনে নিয়ে যাচ্ছে তাও তারা বুঝতে পারছে না।
বাজারের এসব লোভনীয় লিচু গাছে পাকার আগেই যাতে বাড়তি রঙে রঙিন হয়ে ওঠে সে কারণে গাছে বিষাক্ত রাসায়নিক কার্বাইড দিয়ে স্প্রে করা হয় আর যা মানুষের দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। মেলায় কিংবা বাজারের আমগুলোয় ভেজালবিরোধী অভিযান চালানো হবে কি না জানতে চাইলে বাংলাদেশ স্টান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) সহকারী পরিচালক রিয়াজুল হক বলেন, বাজার ও আমের আড়তে গত ৮দিন ধরে আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। 
সম্প্রতি অবাধে ফলসহ খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন মেশানো ও বিক্রি করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। ফলমূল ও খাদ্যদ্রব্যে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ফরমালিন মেশানো, অপব্যবহার, অবাধে বিক্রি বন্ধ করতে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ারও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। ফরমালিন আমদানি নিষিদ্ধসহ এর অপব্যবহারের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে আইন প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছে এফবিসিসিআই। 
জানা যায়, সরকার প্রায় দুই বছর পূর্বে ফরমালিন আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করলেও ফরমালিন নামের বিষের ভয়াবহতা কমেনি। এর আগেও হাইকোর্ট থেকে এ বিষয়ে কয়েকদফা নির্দেশনা থাকলেও কোনো কাজ হয়নি। এদিকে গত বছরের ১ জুলাই মন্ত্রিপরিষদের সভায় ‘নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩’ এর খসড়ায় খাদ্যে ভেজাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর দায়ে সাত বছর কারাদ-ের বিধান রেখে আইন করার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে সাজার মেয়াদ বেড়ে দ্বিগুণ হবে, অর্থাৎ ১৪ বছর। যদিও এই আইনের বাস্তবায়ন কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। 
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ফল পাকাতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড বা ইথোফেনের মতো বিষাক্ত জিনিসের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। একই সঙ্গে ফলকে আকর্ষণীয় করতে ব্যবহার করা হচ্ছে  কেমিক্যাল জাতীয় রং। আর পচনরোধে স্প্রে করা হয় ফরমালিন। ফলে এখন আর কোনো ফল পচে না। মাসের পর মাস আঙ্গুর থোকায় থোকায় ঝুলে থাকে দোকানে। নির্ধারিত লাভ ছাড়া বিক্রি না হলে ক্ষতি নেই। আম, কলা, নাসপাতি, আপেল, কমলা এমনকি কাঁচাবাজারের টমেটোও শক্ত হয়ে থাকে দিনের পর দিন।
একটি বেসরকারি পরিবেশবাদী সংগঠন ‘পরিবেশ বাঁচাও’ আন্দোলনের সরেজমিন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব ভীতিকর তথ্য। তাদের মতে, নগরীতে বিক্রি হওয়া আমের শতকরা ৯৪ ভাগই ফরমালিনযুক্ত। শুধু আম কেন? জাম ও লিচুতেও ফরমালিনের উপস্থিতি শতভাগ। এছাড়া মালটা, আপেল, আঙুর, কমলা, টমেটো, তরল দুধ ও মাছেও ফরমালিনের উপস্থিতি রয়েছে। 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, ফরমালিনের কারণে লিভারে হেপাটাইটিস ও লিভার পচন বা সিরোসিস হতে পারে। এ ছাড়া অ্যালার্জিক সমস্যা হতে পারে। কার্বাইড মেশানো ফল খেলে বাচ্চা ও গর্ভবতী মায়েদের বেশি ক্ষতি হয়।
এক সময়ে ভেজালবিরোধী অভিযানে সাড়া জাগানো ম্যাজিস্ট্রেট রোকন উদ-দৌলা সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, জনসচেতনতা মূলত সৃষ্টি করেছে দেশের গণমাধ্যম। মিডিয়ার কারণেই মানুষ সচেতন হয়েছে। এর পেছনে মিডিয়ার অবদানের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। তাহলে মানুষ আরো সচেতন হবে। পাশাপাশি জনগণকে সরকারি কর্মকর্তাদের কাজে সহযোগিতা করতে হবে। ভেজালবিরোধী অভিযান ঝিমিয়ে পড়া সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশ, জনগণ ও জাতির স্বার্থে ভেজালবিরোধী অভিযানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। পাশাপাশি সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। 
বিএসটিআই’র মহাপরিচালক ইকরামুল হক বলেন, বাজারে বিষাক্ত কেমিক্যাল যুক্ত মৌসুমী ফল যেন না ঢুকতে পারে সে জন্য আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের ১২ জন অফিসার প্রতিদিন নিরলসভাবে এ কাজটি করে যাচ্ছে। মোসুমী ফলের মৌসুমে তাদের অন্য কাজ থেকে এনে এ কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, শুধু মাত্র মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জেল, জরিমানা ও লাইসেন্স বাতিল করলেই এ কাজ থেকে তাদের বিরত রাখা যাবে না। তাই জনগণের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তাহলে এ নীতিগর্হিত কাজটি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করেন। 
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবুল হোসেন মিঞা বলেন, ফরমালিন যুক্ত ফল প্রতিরোধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। মহানগরসহ বিভাগ, জেলা ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকায় বাজার মনিটরিং কার্যক্রমও অব্যাহত আছে। একই সঙ্গে এ ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করতে প্রচারমূলক কাজও অব্যাহত রয়েছে।  
ক্যাব সভাপতি কাজী ফারুক বলেন, এ দেশে আদালতের যে হয়রানিমূলক ব্যবস্থা, তা এড়াতেই ভোক্তারা মামলার ঝামেলায় যেতে চায় না। বর্তমানে মোবাইল কোর্ট আইনের প্রয়োগের কারণে কিছুটা অগ্রগতি ঘটলেও জনসচেতনতা তৈরিতে আরো সময় লাগবে। একই সঙ্গে আমলাতন্ত্রের একটি অংশ ফরমালিন ব্যবহারের পক্ষে ভূমিকা রাখছেন বলেও উল্লেখ করেন।
অপরদিকে বাংলাদেশ স্টান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) সহকারী পরিচালক রিয়াজুল হক বলেন, বাজারে আসা মৌসুমী ফলে ভেজাল ধরতে মাঠে ভ্রাম্যমাণ আদালত নামানো হয়েছে। রাজধানীর নানা স্থানে অভিযান চালিয়ে কেমিক্যাল মেশানোর দায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে প্রচুর আমসহ নানা মৌসুমী ফল ধ্বংস ও জেল-জরিমানা করা হয়েছে। 
অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভেজালবিরোধী অভিযান এ মাস চলবে। নিয়মিত অভিযান ছাড়াও যখনই খবর পাই তখনই আমরা মাঠে নামবো। একই সঙ্গে আসন্ন রমজান মাসকে নিয়ে বিএসটিআই’র বিশেষ অভিযান চলবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
-সুত্র - দৈনিক ইনকিলাব।

Saturday, June 7, 2014

খাবার মানেই বিষের ভয়


খাবার মানেই বিষের ভয়

খাদ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক ভেজাল নিয়ে দেশজুড়ে ঘরে-বাইরে, জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-আতঙ্কের শেষ নেই অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে- বেঁচে থাকার জন্য প্রধান মৌলিক চাহিদা যে খাদ্য- সেই খাদ্য সামনে নিয়ে বসলে প্রথমেই মনে প্রশ্ন জাগে- ভেজাল নেই তো! বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানো না তো! কিন্তু কিছু করার নেই। এ রকম ভয়ের মধ্যেই চলছে আমাদের খাওয়া-দাওয়া। পরিণতিতে শরীরে বাসা বাঁধছে জটিল রোগ-বালাই; ঘটছে মৃত্যু পর্যন্ত।



বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নানাভাবে খাদ্যে ভেজাল বা বিষাক্ত রাসায়নিকের প্রবেশ ঘটে। সামান্য কিছুটা প্রাকৃতিকভাবে হলেও বেশির ভাগই হয়ে থাকে অসচেতন কৃষক আর স্বার্থান্বেষী, অতি মুনাফালোভী, অসাধু ব্যবসায়ীর মাধ্যমে। এর মধ্যে কিছু বিষাক্ত রাসায়নিক কৃষিতে ব্যবহারের ফলে পানি, মাটি বা গাছ হয়ে খাদ্যশস্যের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে; আবার কিছু রাসায়নিক একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সরাসরি বিভিন্ন ফল, শাকসবজি, মাছ-মাংস-দুধ, মসলাসহ নানা খাদ্যে ভেজাল, আকর্ষণী বা মুনাফাবর্ধক উপাদান হিসেবে প্রয়োগ করে থাকে।
খাবার মানেই বিষের ভয়
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত খাদ্য নিরাপত্তা গবেষণাগারে সম্প্রতি দেশি-বিদেশি একদল গবেষক ৮২টি খাদ্যপণ্য নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী, গুলশান এলাকাসহ আরো বেশ কিছু বড় বড় বাজার থেকে এসব খাদ্যের নমুনা (স্যাম্পল) সংগ্রহ করা হয়। এতে গড়ে ৪০ শতাংশ খাদ্যেই মানবদেহের জন্য সহনীয় মাত্রার চেয়ে ৩ থেকে ২০ গুণ বেশি বিষাক্ত উপাদান শনাক্ত হয়।
ওই গবেষণার ফলাফল অনুসারে ৩৫ শতাংশ ফল ও ৫০ শতাংশ শাকসবজির নমুনাতেই বিষাক্ত বিভিন্ন কীটনাশকের উপস্থিতি মিলেছে। এ ছাড়া আম ও মাছের ৬৬টি নমুনায় পাওয়া গেছে ফরমালিন। চালের ১৩টি নমুনায় মিলেছে মাত্রাতিরিক্ত বিষক্রিয়া সম্পন্ন আর্সেনিক, পাঁচটি নমুনায় পাওয়া গেছে ক্রোমিয়াম। হলুদের গুঁড়ার ৩০টি নমুনায় ছিল সীসা ও অন্যান্য ধাতু। লবণেও সহনীয় মাত্রার চেয়ে ২০-৫০ গুণ বেশি সীসা পাওয়া গেছে। মুরগির মাংস ও মাছে পাওয়া গেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর এন্টিবায়োটিকের অস্তিত্ব। এ ছাড়া চারটি প্যাকেটজাত জুসের নমুনায় পাওয়া গেছে বেঞ্জয়িক এসিড, যা স্বাস্ব্যহানিকর।
'ইম্প্রুভিং ফুড সেফটি অব বাংলাদেশ' প্রকল্পের সিনিয়র ন্যাশনাল অ্যাডভাইজার অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সারা দেশের পরিস্থিতি এখনো আমরা দেখতে পারিনি। তবে ঢাকায় আমরা গবেষণার মাধ্যমে যে ভয়াবহ চিত্র পেয়েছি তা সরকারের কাছে উপস্থাপন করেছি। এখন এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করার দায়িত্ব সরকারের।'
গবেষক দলের সূত্র জানায়, যখন এ গবেষণা হয়, তখন বাজারে দেশীয় মৌসুমি ফল ছিল না। তাই ওই সময় প্রাপ্ত ফলের মধ্যে আপেল ও আঙ্গুরে সবচেয়ে বেশি বিষাক্ত রাসায়নিক পাওয়া গেছে। তবে তখনো বাজারে থাকা কিছু আমে ক্ষতিকর রাসায়নিক পাওয়া গিয়েছিল। ব্রয়লার মুরগি ও চাষ করা মাছের মধ্যে রুই-কাতল জাতীয় মাছে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ফরমালিন ছিল বিভিন্ন মাছে। শুঁটকিতেও মিলেছে বিষাক্ত রাসায়নিক। এ ছাড়া হলুদ ও লবনে সীসাসহ আরো কিছু ধাতব উপাদান প্রয়োগের মাধ্যমে এগুলো চকচকে ও ভারী করা হয়।
প্রবীণ চিকিৎসক ও জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুল মালিক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা এখন কিছুই যেন নির্ভয়ে-নিশ্চিন্তে খেতে পারছি না। বাজার থেকে কিছু কিনতে গিয়েই থমকে দাঁড়াতে হয়, দ্রব্যটি নিরাপদ না বিষযুক্ত- সেই চিন্তায়। এমনটা তো চলতে পারে না! তাই মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবন রক্ষায় দেশে এখন এক নম্বর ইস্যু হওয়া দরকার নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি। খাদ্যই যদি নিরাপদ না হয়ে বিষযুক্ত হয়, তবে মানুষ বাঁচবে কী করে?'
এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, বিষয়টি নিয়ে মানুষের মধ্যে সর্বজনীন উৎকণ্ঠা-আতঙ্ক থাকলেও পরিস্থিতি রোধে সমষ্টিগত কোনো উদ্যোগ নেই। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে নানা ইস্যুতে আন্দোলন হলেও সবচেয়ে বড় এই ইস্যুকে সামনে নিয়ে কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক সংগঠনও এগিয়ে আসছে না। ফলে রাষ্ট্রের আইন ও আদালতের নির্দেশনাও আশানুরূপ সুফল বয়ে আনছে না। রাষ্ট্র বা সরকারের একার পক্ষে এ অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। দরকার দলমত নির্বিশেষে এই ইস্যুকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা।
প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক এ বিষয়ে নিজের মত প্রকাশ করে বলেন, রাষ্ট্র বা সরকার আইন করলেও মানুষ অনেক সময়ই তা মানে না। এ ক্ষেত্রে কেবল সরকারকে দুষলেই হবে না, মানুষের সচেতনতা খুবই জরুরি। পাশাপাশি আইনের সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে কি না তা-ও দেখতে হবে।
রফিক-উল হক উদারহণ দিয়ে বলেন, 'খুন করলে ফাঁসি হতে পারে, সবাই জানে। তার পরও তো সমাজে খুন বন্ধ হচ্ছে না। আমরা তো দেখছি মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে, অনেক ফল-সবজি-মাছ নষ্ট করা হচ্ছে, তার পরও তো একই অবস্থা আবার চলে।'
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ফল-ফসলের মাধ্যমে মানুষের শরীরে বিষাক্ত রাসায়নিক ছড়ানোর দায় কৃষি বিভাগের। কারণ কৃষিতে কী ধরনের কীটনাশক-বালাইনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে তা দেখভালের দায়িত্ব তাদের। এ ক্ষেত্রে তাদের আইন আছে, কর্তৃপক্ষ আছে। যদি ওই আইনের আওতায় নিয়মমাফিক কীটনাশক-বালাইনাশক কিংবা সার প্রয়োগ করা না হয়, যদি এসবের যথেচ্ছ ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে তাহলে এ বিষয়ে তাদের দিক থেকেই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
এদিকে কেবল 'ইম্প্রুভিং ফুড সেফটি অব বাংলাদেশ' প্রকল্পের মাধ্যমেই নয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে এর আগে ২০১২ সালে পাঁচ হাজার ৩১২টি খাবারের নমুনা পরীক্ষা করে এর মধ্যে দুই হাজার ৫৫৮টিতেই বা ৪৯ শতাংশে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক বা ভেজালকারী উপাদান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন গবেষণায়ও মাঝেমধ্যে বিভিন্ন খাদে বিষাক্ত রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
মৎস্য সম্পদ অধিদপ্তরের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে মাছে ব্যবহৃত কীটনাশকের মধ্যে ৬০ শতাংশ চরম বিষাক্ত, ৩০ শতাংশ অপেক্ষাকৃত কম বিষাক্ত এবং মাত্র ১০ শতাংশ বিষাক্ত নয়। আর কৃষিজমিতে ব্যবহৃত কীটনাশকের প্রায় ২৫ শতাংশই জমিসংলগ্ন জলাশয়ের পানিতে মেশে। এ ছাড়া ওই কীটনাশক প্রয়োগের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি বা উপকরণ পরিষ্কার করতে গিয়ে আরো কিছু কীটনাশক পুকুর বা নালার পানিতে চলে যায়। এতে একদিকে যেমন সরাসরি মাছ ও মাছের ডিমের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে, অন্যদিকে পানিতে থাকা মাছের খাদ্য ফাইটোপ্লাংকটন (উদ্ভিদকণা) ও জুপ্লাংকটন (প্রাণিকণা) তাৎক্ষণিক মরে যায়। ফলে জলজ প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়, মাছের খাদ্য নষ্ট হয়, পানি নষ্ট হয়। আবার মাছ থেকে তা মানবদেহে চলে যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান- আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহামুদুর রহমান বলেন, ডিডিটি, অ্যালড্রিন, ক্রোমিয়াম, কার্বামেট, আর্সেনিক, সীসা- সবই মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশেষ করে খাদ্যজাত কৃষিতে কীটনাশকের ব্যাপক অপপ্রয়োগ এখন দেশের জনস্বাস্থ্যকে বিশাল ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। অন্তত কৃষিপণ্যকে কীটনাশক থেকে রক্ষা করা গেলে মানুষ অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত হতে পারে।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, কেবল এবারকার গবেষণায়ই নয়, এর আগেও আইইডিসিআরসহ বিভিন্ন গবেষণায় বাংলাদেশে বিভিন্ন খাদ্যে বিষাক্ত দ্রব্য প্রয়োগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। তিনি জানান, খাদ্যে যেসব রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া যায়, তাতে পাকস্থলী, কিডনি ও লিভারের রোগ এবং ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার 'ইম্প্রুভিং ফুড সেফটি অব বাংলাদেশ' কার্যক্রমের সিনিয়র ন্যাশনাল অ্যাডভাইজার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সবাই চায় নিরাপদ খাদ্য। কিন্তু এটা নিয়ে এত দিন তেমন কোনো কাজ ছিল না। এ ক্ষেত্রে যেসব সিস্টেম বিদ্যমান, তাও দুর্বল। রাজনৈতিক বা সামাজিক অঙ্গীকারও তেমন ছিল না। তবে বর্তমান সরকারের দিক থেকে নিরাপদ খাদ্যের ব্যাপারে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট আছে বলেই নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ করা হয়েছে। এখন এই আইনের আওতায় বিধিমালা প্রণয়ন ও কর্র্তৃপক্ষ তৈরির মাধ্যমে আইন প্রয়োগ শুরু হলে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা করি।'

ওই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, কেবল আইনের দিকে তাকিয়ে থাকলেই হবে না। এমন ইস্যুতে জনসচেতনতাও বড় ফ্যাক্টর। তাই সামাজিকভাবে খাদ্যে ভেজাল ও বিষ প্রয়োগের বিরুদ্ধে শক্ত ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।

সুত্র দৈনিক কালের কন্ঠ

ফলের সব গুণ বিফলে

ফলের সবপুষ্টি গুণ বিফলে

পাকাতে কার্বাইড তাজা রাখতে ফরমালিন


রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
শেয়ার - মন্তব্য (0) - প্রিন্ট
রাজশাহীর একটি আড়তে আমে রাসায়নিক ছিটানো হচ্ছে।ফাইল ছবি
অ-অ+
রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জকে দেশের আমের রাজধানী বলা হয়। এই আমের রাজধানীতে রয়েছে নানা জাতের ও নামের আম। কোনোটা লাল টুকটুকে, আবার কোনোটা হলুদ বর্ণের। গোপালভোগ, রানীপ্রসাদ, মোহনভোগ, খিরসাপাত, ফজলি, লখনা, ল্যাংড়া, আম্রপালিসহ প্রতি জাতের আম হরেক স্বাদে ভরা। মোহনীয় স্বাদের এই আম কার না ভালো লাগে? কিন্তু দিন বদলে যাচ্ছে। সেই আম, বিশেষ করে বাজারে ওঠা আম ক্রমেই যেন আতঙ্কের নামে পরিণত হচ্ছে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর ছোবলে তিন-চার বছর ধরে চলছে ভেজালের কায়কারবার। গাছ থেকে নামানোর পর অপরিপক্ব আম পাকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্যালসিয়াম কার্বাইড নামের এক ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য। আবার আম পচনরোধে মেশানো
হচ্ছে ফরমালিন। অন্যদিকে গাছে থাকা অবস্থায় পোকামাকড়ের হানা থেকে আম রক্ষায় ছিটানো হয় নানা ধরনের কীটনাশক। ফলে আমের রাজধানীতেই এখন ভেজালমুক্ত আম পাওয়া দায়। শুধু আম নয়, অনেক ফলই আমের পরিণতি বরণ করছে। লিচু, কলা, পেঁপে, বরই, স্ট্রবেরি, আনারস, টমেটোসহ দেশি অনেক ফলই ভেজাল আর দূষণমুক্ত পাওয়া দায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর ফলে শরীরে ক্যান্সারসহ নানা রোগবালাইয়ের বাসা তৈরি করে। শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় সবচেয়ে বেশি।
আম : রাজশাহীর বানেশ্বর, নওহাটা, দুর্গাপুরসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে ব্যবসায়ী ও আমচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব বাজারে আম উঠতে শুরু করেছে অন্তত ২০ দিন আগে। প্রথমে লখনা আর আটি (গুঁটি) জাতীয় আম দিয়ে বাজার শুরু হয়। এরপর আসতে শুরু করে গোপালভোগ ও হিমসাগর জাতের আম। এরই মধ্যে রাজশাহীর অধিকাংশ বাগান থেকে লখনা ও গোপালভোগ বিদায় নিয়েছে। যদিও এখনই এ দুটি জাতের আমের প্রধান মৌসুম। কিন্তু তার আগেই উচ্চ মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা আম পরিপক্ব না হতেই সেগুলো বাজারজাত করেছে। আর সেই অপরিপক্ব আম পাকাতে ব্যবহার করা হয়েছে নিষিদ্ধ ক্যালসিয়াম কার্বাইড। এই আম পাঠানো হয়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে। কার্বাইড দেওয়ার ফলে কাঁচা ও অপরিপক্ব আমও সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই পেকে যায়। সেই সঙ্গে রঙে এসেছে আরো চাকচিক্য।
ব্যবসায়ী ও চাষিরা জানান, বাজারে এখন পরিপক্ব গোপালভোগ, মোহনভোগ ও খিরসাপাত (হিমসাগর) জাতসহ নানা জাতের আম নামছে। এর ফলে আম পাকানোর জন্য কার্বাইড ব্যবহারের পরিমাণ কমে গেছে। ফলে দ্রুত আম না পাকাতে ও পচনরোধে এখন মেশানো হচ্ছে ফরমালিন। এক সপ্তাহ ধরে রাজশাহীর বাজারগুলোতে নানা কায়দায় ফরমালিন মেশানো হচ্ছে আমে।
সূত্রমতে, ২০১১ সালের ২৬ মে রাজশাহীর রেঞ্জ ডিআইজিকে আমে রাসায়নিক মেশানোর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। কিন্তু তার পরও থেমে নেই অবৈধ এ প্রক্রিয়ায় আম বাজারজাতকরণ।
জানতে চাইলে ডিআইজি মীর শহিদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, 'আমে কার্বাইড মেশানোর বিরুদ্ধে কাজ করতে রাজশাহীর প্রতিটি জেলার পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের জেলায় জেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথাও বলা হয়েছে। এর পরও বিভিন্ন জায়গায় এ অবৈধ কাজ হচ্ছে বলে শুনেছি।'
রাজশাহীর বৃহত্তর আমবাজার বলে পরিচিত বানেশ্বর বাজারে গতকাল ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি মণ গোপালভোগ আম বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার ৬০০ টাকা, হিমসাগর দুই হাজার ৪০০ দুই হাজার ৮০০ টাকা, লখনা আম এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা ও আটি জাতের আম বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার টাকা থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে। অথচ গত বছর এই সময় গোপালভোগের বাজার ছিল সর্বোচ্চ এক হাজার ৮০০ টাকা, হিমসাগর দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা, লখনা এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা মণ। কিন্তু এবার শুরু থেকেই আমের বাজার গতবারের চেয়ে অনেকটা বেশি বলে পাইকারি ব্যবসায়ীরা অপরিপক্ব হলেও কার্বাইড দিয়ে বিপুল পরিমাণ আম বাজারজাত করছে। ফলে পরিপক্বতা আসার আগেই আটি, গোপালভোগ, লখনাসহ কয়েকটি জাতের আম ব্যাপক হারে বাজারজাত করায় এখন সেগুলো প্রায় শেষের দিকে।
রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে কিছুদিন ধরে চালানো অনুসন্ধানে আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, রাজশাহীর আমচাষিরা সাধারণত আমে কার্বাইড ব্যবহার করেন না। বাইরে থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী বা আমের বাগান লিজ নেওয়া ব্যবসায়ীরাই আমে কার্বাইড মিশিয়ে বাজারজাত করে চলেছেন। তাঁরা গাছ থেকে আম নামানোর সঙ্গে সঙ্গেই ক্যালসিয়াম কার্বাইড স্প্রে করছেন অথবা আমের ঝুড়িতে কার্বাইডের প্যাকেট ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। ফলে অপরিপক্ব আম হলেও মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পেকে উজ্জ্বল রং ধারণ করছে। এই রাসায়নিক প্রয়োগে আম সহজে পচে না।
বানেশ্বর বাজারের ব্যবসায়ী আসলাম আলী জানান, যেসব জাতের আম এখানো অপরিপক্ব, সেগুলো গাছ থেকে পাড়ার পরই ছিটানো হচ্ছে কার্বাইড। আবার যেগুলো পোক্ত হয়েছে, সেগুলোর পচনরোধে দেওয়া হচ্ছে ফরমালিন। সাধারণত রাজশাহীর বাইরে থেকে আসা পাইকারি অধিকাংশ ব্যবসায়ী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে আম বাজারজাত করতেই এগুলো করছেন।
দুর্গাপুরের আম ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, 'স্থানীয় ব্যবসায়ী বা আমচাষিরা আমে ফরমালিন বা কার্বাইড মেশান না। বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ীরা বা বানেশ্বর বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা এ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা কখনো নিজেদের লিজ নেওয়া বাগানে দিনের বেলা আম পাড়ার পর, আবার কখনো স্থানীয় আমচাষি বা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আম কিনে রাতের আঁধারে এগুলো করে বলে শুনেছি। না হলে এবার যে আমগুলো আগেভাগেই গাছ থেকে নামানো হয়েছে, তা পাকার কথা নয়।'
রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারের দিলসাদ আলী, হোসেন আলী, জিয়াউদ্দিনসহ আরো অনেক ব্যবসায়ী জানান, প্রতি ৫০ কেজি আম পাকাতে অন্তত ৫০ গ্রাম তরল ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করা হয়। এর ফলে উৎপন্ন তাপ ও অ্যাসিটিলিন গ্যাসের প্রভাবে আম পেকে যায় দ্রুত। এ ছাড়া আম গাছে থাকা অবস্থায় হোপার পোকা, আম ছিদ্রকারী পোকাসহ নানা ধরনের পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে, এমনকি আমের ঔজ্জ্বল্য ঠিক রাখতেও রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। সব মিলিয়ে আমের গুটি আসার পর থেকে নামানো পর্যন্ত কমপক্ষে চারবার স্প্রে করা হচ্ছে গাছে। তবে শেষবার আম পাকাতে যে কার্বাইড ও পচনরোধে যে ফরমালিন স্প্রে করা হচ্ছে, তার সঙ্গে কেবলই বাইরের আম ব্যবসায়ীরা জড়িত বলেও দাবি করেন ওই ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের রাজশাহী বিভাগীয় উপপরিচালক রেজাউল ইসলাম জানান, আমে ক্ষতিকারক রাসায়নিক মেশানো রোধে সপ্তাহে দুইবার বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে যখন অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে, তখন এ ধরনের কাজ কেউ করছে না। আবার অভিযান বন্ধ হলেই রাতের আঁধারে এগুলো করা হচ্ছে।
রেজাউল ইসলাম আরো জানান, কার্বাইড অ্যাসিটিলিন গ্যাস তৈরি করে। এ অ্যাসিটিলিন শিখা দিয়ে ঝালাইয়ের কাজ করা হয়। এটা মানবদেহে গেলে ক্যান্সারসহ নানা রোগ দেখা দিতে পারে। ফলে ব্যবহারকারী ও ভোক্তা- উভয়েই মারাত্মক ক্ষতির শিকার হতে পারে।
স্ট্রবেরি : স্ট্রবেরির রাজধানী বলে পরিচিত রাজশাহীতে গত শীত মৌসুমে প্রায় ৭০০ বিঘা জমিতে এ ফল চাষ হয়। তবে রসালো লাল টুকটুকে এ ফলটি যতটা না দেখতে সুন্দর এর চেয়েও ভয়ংকর এটি উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাত পর্যন্ত যে পরিমাণ কীটনাশক মেশানো হয়, সেটি। পাকা স্ট্রবেরি জমি থেকে সংগ্রহ করার পর এর স্থায়িত্বকাল থাকে সর্বোচ্চ ৩০ ঘণ্টা। কিন্তু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে এটি সরবরাহ করতেই লেগে যায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে কয়েক দিন। ফলে এটি নির্বিঘ্নে বাজারজাত করতে প্রয়োগ করা হয় ফরমালিন। এ ছাড়া এটি চাষ করতেও প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক স্প্রে করতে হয়। ফলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের জেলা শহরগুলোতে সরবরাহ করা পুরো স্ট্রবেরিটাই বিষে ভরা থাকে। স্ট্রবেরিচাষি মনির হোসেন বলেন, 'এই ফল চাষ করতে প্রচুর পরিমাণ কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। তা ছাড়া নরম জাতের এ ফলটি জমিতে পাকার আগেই নষ্ট হয়ে যেতে থাকে, ফরমালিন না মিশিয়ে উপায় থাকে না।'
কলা : রাজশাহীতে প্রচুর পরিমাণে কলা ও পেঁপেজাতীয় ফলেরও প্রচুর চাষ হয়। জেলার বানেশ্বর হাটেই প্রতিদিন অন্তত ৫০ লাখ টাকার কলা বেচাকেনা হয়। কলা চাষের জন্য জেলার পুঠিয়া, দুর্গাপুর, মোহনপুর, পবা, বাঘা ও চারঘাট বিখ্যাত। জমি থেকে কাঁচা কলা সংগ্রহ করে কৃষকরা ওই অবস্থায় তা বাজারজাত করেন। এরপর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা গাড়িতে ওঠানোর আগে আড়তের ভেতরেই সেগুলোতে কার্বাইড স্প্রে করেন। এতে কাঁচা কলা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পেকে হলুদ বর্ণের হয়ে যায়।
বরই-পেয়ারা-পেঁপে-লিচুতেও রাসায়নিক : বরই, পেয়ারা, পেঁপে ও লিচু চাষেও ব্যবহৃত হচ্ছে ক্ষতিকারক কীটনাশক। এসব ফল সাধারণত গাছে থাকা অবস্থায় পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। তবে ইদানীং গাছ থেকে নামানোর পর পেঁপে পাকাতেও কার্বাইড ব্যবহার করা হচ্ছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অন্যদিকে লিচু লাল টকেটকে রং ও আকার বড় করার জন্য এক ধরনের হরমোন ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে পাঠানোর সময় কখনো কখনো ফরমালিন ব্যবহার করা হয়। যদিও লিচুতে ফরমালিনের ব্যবহার বাড়েনি বলে দাবি করেছেন রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ড. আব্দুস সোবহান বলেন, 'হরমোন, কার্বাইড দিয়ে বিভিন্ন ফল পাকানো হলে সেগুলো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এগুলোর পরিমাণ অতিরিক্ত হলেই মানবদেহের জন্য ভয়ংকর হতে পারে। এ ক্ষেত্রে চোখের ক্ষতি হতে পারে, হৃদযন্ত্রের সমস্যা দেখা দিতে পারে, কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে ক্যান্সারসহ মানুষের প্রজনন ক্ষমতাও নষ্ট হতে পারে। আবার গর্ভকালীন অবস্থায় হরমোন প্রয়োগ করা ফল খেলে পেটের সন্তানও নষ্ট হতে পারে।'
টমেটো : রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে প্রতি শীত মৌসুমে অন্তত আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন টমেটো চাষ করা হয়। এই টমেটো শীতকালে হয় বলে এগুলো পোক্ত হলেও সহজে পাকে না। ফলে টমেটো পাকাতে এক ধরনের রাসায়নিক হরমোন ব্যবহার করা হয়, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন। হরমোন দিয়ে পাকানো লাল টকটকে রঙের টমেটো প্যাকেটজাত করে পাঠানো হয় ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। ওই সময় প্রতিদিন গোদাগাড়ী থেকে শত শত টন টমেটো যায় বিভিন্ন স্থানে।
গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী এলাকার টমেটোচাষি মুনসুর রহমান বলেন, 'অতিরিক্ত শীতের কারণে টমেটো পাকতে দেরি হয়। কাজেই কাঁচা টমেটো জমি থেকে তুলে এনে সেগুলোতে হরমোন মিশিয়ে পাকাতে হয়। হরমোন না মেশালে টমেটো ১৫ দিনেও পাকে না।'
মধুপুরে আনারসে বিষ প্রয়োগ : টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, আনারসচাষিদের ভাষ্য, অগ্রহায়ণ, পৌষ ও মাঘ মাসে মূলত আনারসের চারা রোপণ করা হয়। চৈত্র, বৈশাখ মাসেও রোপণ করা যায়। গাছ বেড়ে পরিপক্ব হলে প্রথম কেমিক্যাল প্রয়োগ করা হয়। এতে আনারস তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসে। আনারস বের হওয়ার সময় লালচে রং থাকে। সে রং কেটে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ধাপে কেমিক্যাল দেওয়া হয়। এতে ফল (আনারস) আকারে বড় হয়। ২০ থেকে ৩০ দিন পর তৃতীয় ধাপে পরপর দুই অথবা তিনবার কেমিক্যাল দেওয়া হয়। আনারস বড় হওয়ার জন্যই এই ধাপেও কেমিক্যাল দেওয়া হয়। ফলে রস এসেছে বোঝা গেলে শেষ ধাপের জন্য প্রয়োগ করা হয় কেমিক্যাল। এবার দেওয়া হয় আনারসকে দ্রুত পাকানোর জন্য। এই ধাপের কেমিক্যালে আনারসের রং হলুদ হয়ে আকর্ষণীয় দেখায়।
'পাকানোর জন্য কেমিক্যাল দেওয়ার ১০ দিনের মধ্যেই সব আনারস একবারে পেকে যায়। তখন একসঙ্গে সব আনারস বাজারে নেওয়া যায়। কেমিক্যাল না দিলে আস্তে আস্তে পাকবে। বাজার ধরতে অসুবিধা হবে।'
চাষিরা জানান, আনারস বড় করার জন্য প্লানোফিক্স, সুপারফিক্স, ক্রপসকেয়ার, অঙ্কুরসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল প্রয়োগ করা হয়। আর পাকানোর জন্য দেওয়া হয় রাইবেন, হারবেস্ট, প্রমোট, সারাগোল্ড, ইটিপ্লাস, অ্যালপেনসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল।
- See more at: http://www.kalerkantho.com/print-edition/special-kalerkantho/2014/06/08/93846#sthash.z69C1gU3.dpuf

কার্বাইড-ফরমালিন ছাড়া ফল নেই!

কার্বাইড-ফরমালিন ছাড়া ফল নেই!

ফলের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে বিষাক্ত  কেমিক্যাল ছাড়া কোন ফল নেই। খোদ বিক্রেতারাই এমনটি স্বীকার করছেন। পুরান ঢাকার বাদামতলীর ফলের আড়ৎগুলোতে সরজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশী ফল পাকানোর জন্য মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত কার্বাইড। আর বিদেশী ফল সংরক্ষণে মেশানো হচ্ছে ফরমালিন।

সারি সারি আমের ঝুড়ি। কোনটা সবুজ, কোনটা হলদে রঙের। কিন্তু হাত দিয়ে বোঝার উপায় নেই কোনটা কাঁচা, কোনটা পাকা। বিষাক্ত  কেমিক্যাল মিশিয়ে টাটকা রাখা হয়েছে এসব ফল। বিক্রয় সংশ্লিষ্ট সবাই এ প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। খুচরা ব্যবসায়ীরা আসছেন। দরদাম করে নিয়ে যাচ্ছেন। আর সাধারণ মানুষের আস্থা বিক্রেতার ওপরই। তাদের মাধ্যমেই জানছেন কোনটার কি অবস্থা। কোনটা কতদিনে পাকবে বিক্রেতারাই বলে দিচ্ছেন। টাকা দিয়ে তারা যে কেমিক্যাল মেশানো ফল কিনছেন ব্যবসায়ীরা স্বীকার না করলেও বুঝতে বাকি নেই সাধারন ক্রেতাদের। এটা জানার পরও যেন কিছুই করার নেই তাদের। ফলের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে বিষাক্ত  কেমিক্যাল ছাড়া কোন ফল নেই। খোদ বিক্রেতারাই এমনটি স্বীকার করছেন। পুরান ঢাকার বাদামতলীর ফলের আড়ৎগুলোতে সরজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশী ফল পাকানোর জন্য মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত কার্বাইড। আর বিদেশী ফল সংরক্ষণে মেশানো হচ্ছে ফরমালিন। তবে পাইকারি ও খুচরা বেশির ভাগ বিক্রেতাই এসব ক্ষতিকারক পদার্থ মেশানোর কথা অস্বীকার করেন। তাদের দাবি মালগুলো বাজারে ঢোকার আগেই বাদামতলী ঘাটে চেকপোস্ট বসিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ছাড়া হয়। তাদের এ দাবির সত্যতা জানতে সরজমিনে সেখানে গিয়ে কোন চেকপোস্ট চোখে পড়েনি। একের পর এক মালভর্তি ট্রাক আসছে কোন বাধা ছাড়াই। একজন সাধারণ ক্রেতা জানালেন, তারা জানেন এসব ফলে বিষাক্ত পদার্থ মেশানো হয়। এসব কথা চিন্তা করলে তাদের কখনওই ফল খাওয়া হবে না। কারণ রাজধানীর এমন কোন বাজার নেই যেখানে টাটকা ফল পাওয়া যাবে। তাই সব কিছু জানার পর যেখানে দামে কম পাওয়া যাবে সেখান থেকেই তারা ফল কিনবেন। আড়তের ইমতিয়াজ ফল ভাণ্ডারের বিক্রেতা মিন্টু ব্যাপারী জানান, এখানে কোন ফলেই ফরমালিন মেশানো হয় না। তবে একটু পরেই তিনি বলেন, ফল পাকানোর জন্য কার্বাইড মেশানো হয়। ক্রয়কৃত অপরিপক্ব ওই সব ফলে কার্বাইড না মেশালে পাকার আগেই পচন ধরে। তবে এ কাজ তারা নিজেরা করেন না বলেও দাবি করেন। আরেক পাইকারি বিক্রেতা আল- মদিনা ট্রেডার্সের মাসুদ জানান, আমরা এখান থেকে কিছুই মেশাই না। যেখান থেকে আমগুলো আসে সেখানেই মেশানো হয়। কোথা থেকে এ আমগুলো আসে জানতে চাইলে বলেন, এগুলো সাতক্ষীরা থেকে এসেছে। গাছ থেকে আমগুলো পাড়ার পরপরই তারা কেমিক্যাল মেশায়। এক্ষেত্রে তাদের কোন হাত নেই বলেও দাবি করেন। সেখানকার একজন বিক্রেতার মোবাইল নম্বর চাইলে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, তাদের সঙ্গে আমাদের কোন যোগাযোগ নেই। আমরা ড্রাইভারের সঙ্গে যোগাযোগ করেই মাল কিনি। আল-মদিনা মার্কেটের সামনে এক বিক্রেতার সঙ্গে ক্রেতা সেজে কথা বললে মেলে দুই ধরনের তথ্য। সংরক্ষণের জন্য কিনবো বললে তিনি সবুজ রঙের আমগুলো দেখান। বলেন, এগুলো দীর্ঘদিন রাখতে পারবেন। এগুলো ফরমালিন দেয়া অভিযোগ করে পরিবারের খাওয়ার জন্য ফরমালিনমুক্ত আম কিনবো বললে তিনি আরেকটি ঝুড়ি দেখান। তিনি বলেন, পরিবারের জন্য এ ঝুড়ি থেকে নেন। এখানে কোন কেমিক্যাল দেয়া নেই। এদিকে কলার আড়তে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই এক ব্যবসায়ী ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ফরমালিন ছাড়া কোন মাল আছে নাকি? এ সময় অন্য এক ব্যবসায়ী শান্ত গলায় বলেন, ভাই কেমিক্যাল না দিলে আপনারাই তো খেতে পারবেন না। তার আগেই নষ্ট হয়ে যাবে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ভ্রাম্যমাণ মোবাইল কোর্টের ভয়ে রাতের আঁধারে এসব বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানোর কাজ হচ্ছে। আর কেমিক্যাল মেশানোর কথা অকপটে স্বীকার করছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতেই দেশী ফলে কার্বাইড মিশিয়ে কৃত্রিমভাবে পাকানো হয়। এতে ফলগুলো লালচে বা হলুদাভ রঙ ধারণ করে। কেমিক্যাল না মেশালে ক্রেতারা আকৃষ্ট হন না। বেশি মাত্রায় ফরমালিন মেশানো হচ্ছে আপেল, আঙুর, কমলা ও মাল্টায়। মুখরোচক এ ফলগুলো বেশি দিন সংরক্ষণ করতে হয় বলে ফরামলিনের মাত্রাও থাকে  বেশি। বাবুবাজারের এক খুচরা ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান জানান, শুধু বিদেশী ফল নয়, লিুচতেও আজকাল ফরমালিন মেশানো হচ্ছে। তবে মওসুমের শুরুতে লিচুর আমদানি কম থাকায় এখনও ফরমালিনের ব্যবহার শুরু হয়নি বলে জানান তিনি। চাঁপাই নবাবগঞ্জের একজন আম ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতেই মূলত কার্বাইড মেশানোর কাজটি করা হয়ে থাকে। আর মহাসড়কে ফলের গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। রাস্তায় আটকে থাকার কারণে ফল দ্রুত পেকে যায় এবং অনেক সময় পচন ধরে। পচনের হাত থেকে রক্ষা করতে বাধ্য হয়েই  কেমিক্যাল মেশাতে হয়। অনেক সময় খুচরা বিক্রেতারা জানে না কতদিনে বিক্রি করতে পারবেন। আবার পাইকারি বিক্রেতারাও অনেক ক্ষেত্রে বিক্রির টার্গেট পূরণ করতে না পারায় সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ফরমালিন মেশাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ভ্রাম্যমাণ আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মধ্যে রাজধানীর সকল বাজার মনিটরিং করা সম্ভব হয় না। কারণ একটি বাজারে অভিযান চালাতে কয়েকটি দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় করতে হয়। ডিএমপি’র সঙ্গে বিএসটিআই’র কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ দলকে সঙ্গে রাখতে হয়। এই সমন্বয়ের কাজটি করতে গিয়ে সময়ের অভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় বাজারগুলোতে পৌঁছানোর আগেই বেচাকেনা  শেষ হয়ে যায়। তিনি জানান, ঢাকার বাইরে থেকে যেসব দেশী-বিদেশী ফল আসছে সেগুলোর মান পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার জেলা প্রশাসকদের নেতৃত্বে মোবাইল কোর্টগুলো তৎপর হলে কেমিক্যাল মেশানোর কাজটি কমিয়ে আনা সম্ভব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ডা. সাকলায়েন রাসেল ফলে কেমিক্যাল মেশানোর ভয়াবহতা সম্পর্কে বলেন, কার্বাইড, ফরমালিনসহ যে কোন কেমিক্যাল ক্ষতিকর। কেমিক্যালযুক্ত ফল খাওয়ার কারণে দেহের এমন কোন অঙ্গ নেই যেটা ক্ষতিহগ্রস্ত হয় না। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় লিভার ও কিডনি। মানুষ জটিল সব রোগে আক্রান্ত হয়। এ সব কেমিক্যালযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে এখন যুবক বয়সেই মানুষ কিডনি ও লিভারের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক সময় ক্যান্সারও হয়। বর্তমানে কিডনি বিকল হয়ে রোগী মৃত্যুর ঘটনা বেশি ঘটছে বলেও জানান তিনি। এ অবস্থায় করণীয় সম্পর্কে এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, আমাদের বিদেশী ফল খাওয়া থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে। যেসব দেশী ফলে কেমিক্যাল মেশানোর সুযোগ নেই বা প্রয়োজন পড়ে না মানুষকে সেসব ফল খেতে  উৎসাহিত করতে হবে। যেমন-  পেয়ারা, আমড়া, আমলকী, সফেদা। এসব ফল পুষ্টিগুণের দিক থেকে যে কোন ফলের চেয়ে সমৃদ্ধ।সূত্র -  দৈনিক   মানবজমিন