সত্য জানি, সত্য মানি এবং সত্যের সাথে থাকি। সকল খবর হোক সত্য ও নিরপেক্ষ।

সত্যকে অস্বীকার কারনে, গত চার দশকে জাতি হিসাবে আমরা মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে পারিনি । স্বাধীনতার প্রায় অধ শতাব্দীতে জাতি তার কাঙ্তিত সাফল্য পায়নি।

মোর নাম এই বলে ক্ষ্যাত হোক – আমি তোমাদেরই লোক

যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এ জাতি সমৃদ্ধিলাভ করেছে - আমরা তাদের ভুলব না । তোমরা অমর হয়ে থাকবে জাতীর ভাগ্যাকাশে। আমাদের ভালবাসা ও দোয়া রইল।

IT BD SOFT. একটি বিশ্বস্থ আইটি ট্রেনিং সেন্টার

------Pls visit http://itbdsoft.tk ------- কম্পিউটার শিক্ষা প্রসার ও বিকাশে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। শিক্ষা হোক সবার জন্য উম্মুক্ত ও সহজলভ্য।

পযটন হোক – জাতীয় উন্নতির একমাত্র হাতিয়ার।

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া। কক্সবাজার, সুন্দরবন, কুয়াকাটা, নীলগিরি সহ হাজারো দৃষ্টি নন্দন অপার সৌন্দার্য ছড়িয়ে আছে এ জমিনে – জানি ও সমৃদ্ধ করি দেশমাতৃকাকে।

IT BD SOFT. একটি বিশ্বস্থ আইটি ট্রেনিং সেন্টার

------Pls visit http://itbdsoft.tk ------- কম্পিউটার শিক্ষা প্রসার ও বিকাশে / এছাড়াও আমরা ডোমিন- হোষ্টিং বিক্রি /আপনার সাইটের ভিজিটর বাড়ানো / সাইটিকে কে গুগল টপে আনতে আমাদের সাহায্য নিন।

Tuesday, November 11, 2014

যুদ্ধাপরাধ ইস্যু ১৯৭৪ সালে নিষ্পত্তি হয়নি ঃ হামিদ মীর

যুদ্ধাপরাধ ইস্যু ১৯৭৪ সালে নিষ্পত্তি হয়নি ঃ হামিদ মীর
আমাদের সময়.কম : ১২/১১/২০১৪

৯৮২০৩থ১ডেস্ক রিপোর্ট : হামিদ মীর পাকিস্তানের একজন খ্যাতনামা সাংবাদিক, টেলিভিশন উপস্থাপক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা ও নিষ্ঠুরতার জন্য বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে সরব পাকিস্তানিদের অন্যতম তিনি। এ বিষয়ে গত সপ্তাহে তাঁরই লেখা এক নিবন্ধ অনুমতি ছাড়া সম্পাদনা করে প্রকাশের পর তিনি পাকিস্তানের উর্দু দৈনিক জংয়ে লেখা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন। মাত্র ৩০ বছর বয়সেই পাকিস্তানের একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা হামিদ মীর বর্তমানে পাকিস্তানের জিও নিউজের নির্বাহী সম্পাদক। গত রবিবার কালের কণ্ঠকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধাপরাধের বিচার, পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে। হামিদ মীরের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কালের কণ্ঠের কূটনৈতিক প্রতিবেদক মেহেদী হাসান। সাক্ষাৎকারটি আমাদেরসময় ডটকমের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

কালের কণ্ঠ : হামিদ মীর, গত বছরের মার্চ মাসে ঢাকায় শেরাটন হোটেলের বারান্দায় বসে আপনার সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময়ের একটি ঘটনা বলতে চাই। আপনি আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা নিতে আসা আরো কয়েকজন পাকিস্তানি আপনার কাছে এসে দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। এরপর আপনি আমাদের বলেছিলেন, তাঁরা ভয় পাচ্ছেন। কারণ বাংলাদেশ নিয়ে আপনার বক্তব্য আবার না ‘পাকিস্তানবিরোধী’ হয়ে যায়! বাংলাদেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা নেওয়ার পর আপনি পাকিস্তান ফেরার পর কি কোনো সমস্যায় পড়েছিলেন? আপনার সেদিনের সহযাত্রীদের মতো আপনি কি আজও বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলে ঝামেলায় পড়ার আশঙ্কা করছেন?

হামিদ মীর : প্রথমে আমি বলব, ২০১৩ সালে আমি পাকিস্তানের ‘হিলাল-এ-ইমতিয়াজ’-এর জন্য মনোনীত হয়েছিলাম। এটি পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে ওই পুরস্কার নেওয়ার জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু একই সময়ে বাংলাদেশ সরকারও আমার বাবা অধ্যাপক ওয়ারিস মীরকে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা জানানোর জন্য মনোনীত করে। ঢাকায় যেদিন বাবার সম্মাননা দেওয়া হবে সেদিন পাকিস্তানেও আমার পদক নেওয়ার কথা। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, বাংলাদেশেই আসব। আমার বাবা ১৯৭১ সালে সামরিক অভিযানের বিরোধিতা করেছিলেন। বাবার পক্ষে আমি তাঁর সম্মাননা নিলাম। আসমা জাহাঙ্গীর, সালিমা হাশমিসহ অন্যরাও সেদিন সম্মাননা গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু যখন আমরা পাকিস্তানে ফিরে যাই তখন আমি কিছু লেখক ও টেলিভিশন উপস্থাপকের রোষানলে পড়ি। আমি কেন পাকিস্তানের বড় পুরস্কারের প্রতি অনীহা দেখিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলাম- এটিই তাঁদের ক্ষোভের কারণ। তাঁরা রেগে গিয়েছিলেন। কেন আমি বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার দাবি করি? কেন আমি নৃশংসতায় জড়িত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কিছু কর্মকর্তার বিচার দাবি করি?
সামাজিক গণমাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে হুমকি আসতে শুরু করে। বাংলাদেশের সম্মাননা নেওয়া অন্য পাকিস্তানিরা সমালোচিত হয়েছেন। কিন্তু টেলিভিশনের অনুষ্ঠানগুলোতে আমাকে সংঘবদ্ধ আক্রমণ করা হয়েছে। কারণ আমি অন্যদের তুলনায় বেশি জনপ্রিয় ছিলাম।
গত ১৯ এপ্রিল করাচিতে আমার ওপর হামলা হয়। ছয়টি গুলি আমার শরীরে লাগে। এখনো আমার শরীরে দুটি গুলি রয়ে গেছে। জামায়াতে ইসলামীর এক নেতা আমাকে হাসপাতালে দেখতে এসেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘মিস্টার মীর, আমরা জানি যে আপনি সব সময় রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকার বিরোধিতা করেছেন। আর আপনি সমর্থন করেছেন সাবেক স্বৈরশাসক মোশাররফের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে বিচারকে। তবে আপনি অবশ্যই মনে রাখবেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ভূমিকার বিষয়ে আপত্তিকর কথা বলার কারণেই আপনার ওপর হামলা হয়েছে।’

কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশিরা, বিশেষ করে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গর্ব করে। যুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে, কারো দানে বা দয়ায় হয়নি। পাকিস্তানিরা ১৯৭১ সালকে কিভাবে দেখে? ১৯৭১ সাল কি এখনো পাকিস্তানের জন্য বড় ইস্যু? আমার মনে হয়, আপনারা যাঁরা নৃশংসতা, গণহত্যার বিরোধিতা করেছিলেন তাঁরা চাননি যে পাকিস্তান ভেঙে আলাদা রাষ্ট্র হোক। এ ধারণা কি ঠিক?

হামিদ মীর : ১৯৭১ সাল পাকিস্তানে কোনো ইস্যু নয়। একাত্তরের বাস্তবতা জানেন এমন সুশিক্ষিত পাকিস্তানির সংখ্যা খুব কম। বাকিরা মনে করেন, ১৯৭১ সালে ভারত পাকিস্তানে আক্রমণ করে এবং বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়। যখন আমরা তরুণ প্রজন্মকে সত্যটা শেখাতে চাই তখন ডানপন্থীরা আমাদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলেন।
আমরা মনে করি, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে সামরিক অভিযান শুরু করেছিল। পাঞ্জাবিদের অনেক আগেই বাঙালিরা ‘পাকিস্তান মুভমেন্ট’ শুরু করেছিল। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ যখন সংখ্যাগরিষ্ঠের গণতান্ত্রিক অধিকারকে সম্মান দেখাতে অস্বীকৃতি জানাল তখন সংখ্যাগরিষ্ঠরা পাকিস্তানকেই বিদায় জানিয়ে দিল। ১৯৭১ সালে আমি স্কুলে যেতাম। আমার দুটি বিষয় ভালো মনে আছে। আমার মা-বাবা সামরিক অভিযানের বিরোধী ছিলেন। পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ হওয়ার পর তাঁদের মন খুব খারাপ ছিল। তবে তাঁরা আমাকে বলেছিলেন, বাঙালিরা বিশ্বাসঘাতক নয়।

কালের কণ্ঠ : ১৯৭১ সাল বাংলাদেশের জন্য বড় ইস্যু। বাংলাদেশ সরকার গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। এ দাবি পূরণ করা পাকিস্তানের পক্ষে কতটা সম্ভব? ঐতিহাসিক ক্ষত কাটিয়ে উঠতে এটি কতটা সহায়ক হতে পারে?

হামিদ মীর : প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চায়। ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ মনে করেন, বাংলাদেশের কাছে দুঃখ প্রকাশে কোনো ক্ষতি নেই। রেলপথমন্ত্রী খাজা সাদ রফিক ও সরকারের আরেক মিত্র সিনেটর হাশিল বিজিনজু বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে সংসদে আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু গত বছর আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি তাঁদের জন্য কিছু সমস্যার সৃষ্টি করেছে। মোল্লার ফাঁসির বিরুদ্ধে সরকারকে বিবৃতি দিতে মন্ত্রিসভার বৈঠকে চাপ দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাতে অস্বীকৃতি জানান। তথ্যমন্ত্রী পারভেজ রশিদ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছিলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তান নাক গলাতে পারে না। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর দুজন সদস্য যখন কাদের মোল্লার সমর্থনে জাতীয় পরিষদে প্রস্তাব উপস্থাপন করলেন তখন সরকারদলীয় সদস্যরা নীরব থাকলেন। আর এতেই প্রস্তাব গৃহীত হলো। প্রধানমন্ত্রী সেদিন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন না। মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে রায় হওয়ার পর সরকার এখন আবার চাপে পড়েছে।
নিসার আলী নিজামিকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চুপ থাকতে বলেছেন। কৌতূহলের বিষয় হলো, অন্যতম বিরোধী নেতা ইমরান খান বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়ার পক্ষে থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে এই ইস্যুতে নীরব। এর কারণ হলো, খাইবার পাখতুন প্রদেশে তিনি জামায়াতে ইসলামী জোটের শরিক। নওয়াজ শরিফের সরকার টিকে গেলে তারা একদিন বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাইবে বলে আমি আশা করি।

কালের কণ্ঠ : মুক্তিযুদ্ধ ও এর পরবর্তী সময়ে ভারতের ভূমিকাকে কিভাবে মূল্যায়ন করেন?

হামিদ মীর : ১৯৭১ সালে ভারত পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করতে পেরেছিল মুক্তিবাহিনীর জন্যই। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি জেনারেলের আত্মসমর্পণ দলিল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মুক্তিবাহিনীর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। ভারতের সেনাবাহিনী এ ধারণাই দিতে চেষ্টা করেছে যে তারাই বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু তা ঠিক নয়।

কালের কণ্ঠ : যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গে আসা যাক। এ বিচার সম্পর্কে আপনার ব্যক্তিগত মত কী? পাকিস্তানিরাই বা একে কিভাবে দেখে?

হামিদ মীর : বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের ট্রাইব্যুনাল পাকিস্তানে বড় কোনো ইস্যু নয়। বড় সব দল এ বিষয়ে নীরব। কেবল আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা এর বিরোধিতা করছেন।

কালের কণ্ঠ : হ্যাঁ, আপনাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে অনেক কথাই বলছেন। বাংলাদেশ এর প্রতিবাদও জানিয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার কি আপনারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় মনে করছেন না?

হামিদ মীর : পাকিস্তানের বেশির ভাগ মানুষই যুদ্ধাপরাধের বিচারকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবেই দেখে। দ্বিতীয়ত, আমরা ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তিকে অগ্রাহ্য করতে পারি না। ভারতের কারাগারে ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। ওই চুক্তির আওতায় ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে হস্তান্তরের দাবি প্রত্যাহার করতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ তাঁদের বিচার করতে চেয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান স্বীকৃতি দেওয়ায় বাংলাদেশ তার অবস্থান বদলায়।
বি জেড খসরুর ‘দ্য বাংলাদেশ মিলিটারি ক্যু অ্যান্ড দ্য সিআইএ লিংক’ বইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সরকারি নথির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, পাকিস্তানকে সহযোগিতা করতে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে ব্যবহার করেছে। ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার বিষয়ে নীতি বদলাতে ভারত বাংলাদেশকে চাপ দেয়। কারিগরিভাবে ১৯৭১ সালের সামরিক অভিযান চালিয়েছিলেন মূলত পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তারা। জামায়াতে ইসলামী কেবল তাঁদের সহযোগিতা করেছে।
অনেক পাকিস্তানিই প্রশ্ন করেন, যদি সেনা কর্মকর্তাদেরই বিচার না হয়, তবে কেবল জামায়াতে ইসলামীর কেন? তবে এটিও উল্লেখ করার মতো বিষয় যে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে জনমত সৃষ্টিতে জামায়াতে ইসলামী ব্যর্থ হয়েছে।

কালের কণ্ঠ : পাকিস্তান ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে ফিরিয়ে নিয়ে বিচার করেনি। এখন কিছু পাকিস্তানি রাজনীতিক এবং বাংলাদেশ ও পাকিস্তান- দুই দেশের জামায়াতই বলছে, ১৯৭১ সালের ঘটনাবলির সমাধান ১৯৭৪ সালেই হয়ে গেছে। আপনিও কি তাই মনে করেন?

হামিদ মীর : না। হামুদুর রহমান কমিশন ১৯৭১ সালে বাঙালিদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালানো কিছু ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে। পাকিস্তানে তাদের কারোরই বিচার হয়নি।

কালের কণ্ঠ : যুদ্ধাপরাধ, নৃশংসতার কথা তো পাকিস্তানি লেখকদের বইয়েও স্থান পেয়েছে।

হামিদ মীর : জেনারেল নিয়াজি ১৯৭১ সালে ধর্ষণকে উৎসাহিত করেছিলেন- এর সাক্ষ্য দিচ্ছে অবসরপ্রাপ্ত পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজার লেখা বই ‘অ্যা স্ট্র্যাঞ্জার ইন মাই ওউন কান্ট্রি’। এটি আমাদের জন্য লজ্জার। ওই বইয়ের তথ্য নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কখনো ভিন্নমত পোষণ করেনি। আসলে ওই বইটি শর্মিলা বোসের মুখে চপেটাঘাতের শামিল। আরেকটি বই, মেজর জেনারেল আবু বকর উসামা মিথার লেখা ‘ফ্রম বোম্বে টু জিএইচকিউ’তে ১৯৭১ সালে নৃশংসতার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। পাকিস্তানিদের লেখা এসব বই খুনি ও ধর্ষকদের বিরুদ্ধে ইতিহাসের বিচার হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

কালের কণ্ঠ : সাম্প্রতিক সময়ে আপনার বিরুদ্ধে পাকিস্তানে ঘৃণ্য অপপ্রচার শুরু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশের টেলিভিশনের সঙ্গে আপনার কথোপকথনকে ভারতীয় টেলিভিশনের সঙ্গে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কথোপকথন বলে নতুন মাত্রা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এর কারণ কি শুধুই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আপনার অবস্থান?

হামিদ মীর : গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে প্রকাশ্যে ও গোপনে যোগাযোগ আছে এমন কিছু পাকিস্তানি সাংবাদিক ও টেলিভিশন উপস্থাপক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছেন। গত বছর বাংলাদেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও ক্লিপ তাঁরা ব্যবহার করছেন। অথচ ওই মিথ্যাবাদীরা দাবি করছেন যে আমি ভারতের কিছু টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাদের বিচার দাবি করেছি।
এআরওয়াই চ্যানেলের টিভি উপস্থাপক মুবাশির লুকমানসহ এসব ব্যক্তি বলছেন, হামিদ মীর ভারতের হয়ে কাজ করেন। আসলে তাঁরা আমাকে ঘৃণা করেন। কারণ আমি সব সময়ই গণতন্ত্রের সমর্থক ছিলাম। ওই মুবাশির লুকমান ২০০৭ সালে সাবেক স্বৈরশাসক মোশাররফের মন্ত্রিসভার মন্ত্রী হয়েছিলেন। কয়েক সপ্তাহ আগে তাঁর সরাসরি সম্প্রচারিত আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি প্রকাশ্যেই সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা গ্রহণ করতে বলেছিলেন। তিনি বিচারকদের ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করেছিলেন এবং বর্তমানে আদালত অবমাননার অভিযোগ মোকাবিলা করছেন। আমি এমন কিছু শক্তির নিশানায় পরিণত হয়েছি যারা চায়, সেনাবাহিনী পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করুক। আমি প্রকাশ্যেই এর বিরোধিতা করছি। কারণ আমি মনে করি, আরেকটি সামরিক অভ্যুত্থান পাকিস্তানের অবশিষ্ট অংশকেও ভাঙবে।

কালের কণ্ঠ : বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ও চ্যালেঞ্জগুলো কিভাবে দেখেন?

হামিদ মীর : বাংলাদেশ অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে একই সঙ্গে আমি মনে করি, সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারত- সবার জন্যই অভিন্ন সমস্যা হয়ে উঠছে। উগ্রবাদকে পরাজিত করতে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশকে অবশ্যই হাত মেলাতে হবে। আমাদের শান্তির শত্রুদের পরাজিত করতে অবশ্যই যৌথ কৌশল নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।

কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।

হামিদ মীর : কালের কণ্ঠ ও তার পাঠকদেরও ধন্যবাদ।

Saturday, September 6, 2014

চিকিৎসক হতে চাও?

চিকিৎসক হতে চাও?

আমি নতুনদের বলব ‘থিঙ্ক পজিটিভ’। হবে না, পারব না—এ ধরনের কথাবার্তা ভুলে যাও। সব সময় মনে করবে, আমি পারবোই।
মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় ১০০টি এমসিকিউ প্রশ্নের জন্য বরাদ্দ থাকে ১০০ নম্বর। এর মধ্যে জীববিজ্ঞান (প্রাণী+উদ্ভিদ)=৩০, রসায়ন (১ম + ২য়)=২৫, পদার্থবিজ্ঞান (১ম + ২য়)=২০, ইংরেজি=১৫, সাধারণ জ্ঞান=১০। এখানে নম্বর বণ্টন দেখেই বোঝা যাচ্ছে, জীববিজ্ঞান এবং রসায়নের গুরুত্ব বেশি। চলো, প্রতিটি বিষয়ে একটা ধারণা দেওয়া যাক।
আনিকা তাহসিন

জীববিজ্ঞান

প্রাণিবিজ্ঞান বই থেকেই বেশির ভাগ প্রশ্ন করা হয়। বিশেষ করে মানবদেহ অধ্যায়। তাই মানবদেহের খুঁটিনাটি তথ্যগুলো ভালোভাবে ঝালিয়ে নাও। পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে প্রতিটি তন্ত্র ও প্রক্রিয়াগুলোর ওপর। উদ্ভিদবিজ্ঞানের জন্য উদ্ভিদের ভিন্নতা, জৈবনিক প্রক্রিয়া এই বিষয়গুলো থেকেও বিগত বছরগুলোয় অনেক প্রশ্ন আসতে দেখা গেছে। কোন বিজ্ঞানী কোন মতবাদের জন্য বিখ্যাত, কোন সূত্রটি কত সালে আবিষ্কৃত হয়েছে, এসব তথ্য নখদর্পণে থাকতে হবে। তবে ভর্তি পরীক্ষার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, সংজ্ঞা, বইয়ের সব ছক বৈশিষ্ট্য, পার্থক্য—এই অংশগুলো থেকেও প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা বেশি।

রসায়ন

রসায়ন দ্বিতীয় পত্র থেকে প্রশ্ন করা হয় বেশি। যেসব বিক্রিয়া বিজ্ঞানের নামে নামাঙ্কিত, সেসব বিক্রিয়া ও তার আবিষ্কারের সাল খেয়াল রেখো। সবচেয়ে গুরুত্ব দাও মৌলের পর্যাবৃত্ত ধর্ম, ডি-ব্লক মৌল, জৈব অ্যাসিড, হাইড্রোকার্বন ইত্যাদি বিষয়ে। রাসায়নিক বন্ধন, তড়িৎ রাসায়নিক কোষ, অ্যালডিহাইড ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষ নজর দাও।

পদার্থবিজ্ঞান

পদার্থবিজ্ঞানে যেসব সূত্র খুব বেশি পরিচিত, আবার যেসব সূত্র ব্যবহার করে সহজে ছোট অঙ্ক কষা যায়, সেসব প্রশ্নই দেওয়া হয়। যেহেতু পরীক্ষার হলে ক্যালকুলেটর নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই, তাই এ জাতীয় প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর মনে রাখার বিকল্প নেই। সঙ্গে সঙ্গে পার্থক্য, একক মান ইত্যাদি যত ছক আছে, ভালোভাবে মনে রেখো।

ইংরেজি


Vocabulary-তে যে যত ভালো, এই অংশে নম্বর ওঠানোর সুযোগও বেশি। তাহলে Synonym-Antonym নিয়ে তেমন বেগ পেতে হবে। Right Form of Verb, Tense, Parts of speech থেকে প্রতিবছরই প্রশ্ন করা হয়। Narration, Voice, Phrase and Idioms, Preposition নিয়ে একটু বাড়তি মনোযোগ দাও।

সাধারণ জ্ঞান

বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঘটে যাওয়া আলোচিত ঘটনাগুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখার জন্য দৈনিক পত্রিকাগুলোয় প্রতিদিন চোখ বোলাও। এ ছাড়া ক্ষুদ্রতম, বৃহত্তম, প্রথম ও একমাত্র—এ ধরনের বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দাও। বিসিএস পরীক্ষার গত কয়েক বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করলে তা কাজে দেবে।

জরুরি কিছু কথা

কখনোই পড়োনি, এমন কিছু নতুন করে এখন আর পড়তে যেয়ো না। এতে সময় নষ্ট হয় বেশি। কিন্তু বিগত বছরগুলোয় বারবার এসেছে, এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ দিয়ে থাকলে, সেগুলো আয়ত্ত করে ফেলাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। সেই সঙ্গে পড়া বিষয়গুলোও বারবার দেখো। কারণ, অস্পষ্ট ধারণা নিয়ে পরীক্ষার হলে গেলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
নিশ্চয়ই তোমাদের জানা আছে, একটা ভুলের জন্য ০.২৫ নম্বর করে কাটা যাবে। অর্থাৎ চারটি ভুল উত্তরের জন্য তুমি হারাচ্ছ একটি সঠিক উত্তরের নম্বর।
এ জন্য পরীক্ষার হলে একটু কৌশলী হতে হবে। প্রথম ২৫ মিনিটে নিশ্চতভাবে জানা ৫০-৬০টি উত্তর দাগিয়ে নিতে পারো। পরের ২০ মিনিটে মোটামুটি সহজ, এ রকম ২০-৩০টি উত্তর দাগিয়ে ফেলতে পারলে ভালো হয়। ৭০-৮০টি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে ফেললে চিন্তামুক্ত লাগবে। এরপর ‘উত্তর এমন হতে পারে, কিন্তু মনে পড়ছে না’, এ রকম প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করার সময় পাবে। কোনো প্রশ্নের পেছনে অযথা অতিরিক্ত সময় নষ্ট করার কোনো মানে নেই। দ্রুত পরের প্রশ্নে চলে যাবে।
অনেকেই জিজ্ঞাসা করে থাকে, প্রস্তুতির জন্য দিনে কত ঘণ্টা পড়া উচিত। আমি বলব, যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না হয়, ততক্ষণ পড়া উচিত।
ভালো প্রস্তুতি নাও, ভালো পরীক্ষা দাও। সবার জন্য শুভকামনা।

মেডিকেলের ভুবনে স্বাগতম

ডা. মো. ইসমাইল খান
অধ্যক্ষ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ
বাংলাদেশে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা হয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে, সারা দেশে একই সঙ্গে। একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষা যেখানেই দিক না কেন, মেধাস্কোরের ভিত্তিতে সে সুযোগ পেতে পারে যেকোনো মেডিকেল কলেজে। মেধাভিত্তিক এ বাছাই পরীক্ষার মধ্য দিয়েই শুরু হয় চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নপূরণের যাত্রা। চিকিৎসা পেশা এক মহান পেশা। চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করার আগে সবাইকেই কিছু নিয়ম মেনে চলার শপথ নিতে হয়। সত্যিকার অর্থে মানবতার সেবার ব্রত নিজের মধ্যে থাকতে হবে।
মা-বাবার চাপে পড়ে এ পেশায় না আসাই ভালো। যে বয়সে একজন শিক্ষার্থী মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়, সে বয়সে তার নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়। তাই অভিভাবকদেরও বলছি, আপনার সন্তানের যদি চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছে না থাকে, তাহলে তাকে চিকিৎসক হওয়ার জন্য চাপ দেবেন না। চিকিৎসকের পেশাকে ভালোবেসে যারা এ পথে হাঁটতে চায়, তাদের জন্য রইল শুভকামনা।।
 সূত্র - আনিকা তাহসিন , দৈনিক প্রথম আলো

Tuesday, August 19, 2014

রাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্র’। ‘সরকারের মধ্যে সরকার’


সমান্তরাল সরকার!

এমপি কামাল মজুমদারের 'ব্যক্তিগত আদালত' ও উন্নয়ন কমিটি

এ যেন ‘রাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্র’।সরকারের মধ্যে সরকার’। 

বলা যায়, ‘সমান্তরাল সরকার’। 

আর এ ধরনের সরকার পরিচালনা করছেন খোদ রাজধানীতেই একজন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য। ঢাকা-১৫ আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার তাঁর এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে ‘উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি’ গঠন করে রীতিমতো নির্বাহী বা প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা শুরু করেছেন। তাঁর নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি সরকারি কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়ে তিনি এ কমিটির কথা জানান দিয়েছেন এবং মৌখিক বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন, যেন তারা যেকোনো দাপ্তরিক কাজ করার আগে এমপি গঠিত কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে। এ ছাড়া এর আগে থেকেই হুবহু আদালতের আদলে ‘সামাজিক বিচার কমিটি’ গঠন করে নিজের এলাকায় রীতিমতো বিচারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এমপি কামাল মজুমদার। এখানে মামলার আদলে অভিযোগ দায়ের করা হয়, সেটার তদন্ত হয়, শুনানি চলে, সাক্ষ্যগ্রহণ হয়, এরপর লিখিতভাবে রায়ও ঘোষণা হয়। অনেক ক্ষেত্রে রায় কার্যকরও করা হয়। আওয়ামী লীগের আগের আমলে তাঁর এই ‘আদালতে’ প্রধান বিচারপতি পদও ছিল। তবে সংশ্লিষ্ট সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি এর বিরুদ্ধে উকিল নোটিশ পাঠালে ওই পদ বাদ দেওয়া হয়, তবে বিচারক পদ থেকে যায়। এখন অবশ্য বিচার কমিটিতে একজন আহ্বায়ক, একজন সদস্যসচিব ও তিনজন সদস্য রয়েছেন। একজন বেতনভুক্ত পেশকারও রয়েছেন। তাঁরাই কথিত আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইন সভা, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ- রাষ্ট্রের এ তিনটি স্তম্ভের মধ্যে আইন সভা তথা সংসদের ক্ষমতা রয়েছে আইন প্রণয়নের। কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী এককভাবে কোনো সংসদ সদস্যের সেই ক্ষমতা নেই; আইন প্রয়োগ, বিচার করা বা নির্বাহী কাজের ক্ষমতা তো নেই-ই। কেউ তা করতে গেলে সেটা হবে বেআইনি ও অবৈধ।
বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ ধরনের কর্মকাণ্ড দেশের প্রচলিত আইনবিরোধী। স্থানীয় এমপির এমন নিজস্ব বিচারব্যবস্থা বন্ধ না করলে সরকারের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হবে; আবার সাধারণ মানুষের মধ্যেও ভীতি সৃষ্টি হবে।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর মিরপুর, কাফরুল ও ভাসানটেক এলাকায় গত পাঁচ বছরে এমপি কামাল মজুমদারের কথিত আদালতে ২৫৩টি অভিযোগ আমলে নিয়ে ২৩০টির রায় ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি ‘কেসগুলোর’ শুনানি চলছে। বিচারকাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্থানীয় সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের। এ আদালতের সমন পেয়ে হাজির না হলে কথিত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে নেওয়া হয় পদক্ষেপ। অনেক ক্ষেত্রে অভিযুক্তের অনুপস্থিতিতেই রায় ঘোষণা করা হয়। এমনকি জমিজমা-সংক্রান্ত কোনো ‘মামলা’য় যে পক্ষ জয় পায় তাদের জমিজমা এই ‘আদালতের’ পক্ষে দখল করে দেওয়া হয়েছে- এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। প্রচলিত আদালতের মতো কোনো মামলায় হারলে এখানে রিভিউ আবেদনও করা যায়।
জানা যায়, ১৯৯৬ সালে এ আদালতের প্রধানকে বলা হতো ‘প্রধান বিচারপতি’। পরে এক সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির উকিল নোটিশের পর এ উপাধি বাতিল করা হয়েছে। এ আদালতে রয়েছেন একজন পেশকারও (বেঞ্চ সহকারী)।
এমপির বিচার কমিটির মাধ্যমে জমিজমা, বাড়িঘর ও অর্থসংক্রান্ত অভিযোগের সমাধান করা হয়। কোনো অভিযোগ পেলেই সমন দিয়ে অভিযুক্তকে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় বিচার কমিটির পক্ষ থেকে। এ নির্দেশ না মানলে বিচার কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অমান্যকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
কামাল আহমেদ মজুমদারের বিচার কমিটিতে শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাসের ভাই সন্ত্রাসী জিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ কমিটির লোকজন বিচারের নামে চাঁদাবাজির সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। সব মিলিয়ে মিরপুর, কাফরুল ও ভাসানটেকে এমপির বিচার কমিটির অত্যাচারে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। কিন্তু কামাল মজুমদারের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।
বিচার কমিটি গঠনের সত্যতা স্বীকার করে ঢাকা-১৫ আসনের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় পাঁচটি ওয়ার্ড নিয়ে বিচার কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তারা আইনগত দিক দেখে বিচারকাজ পরিচালনা করে থাকে। আমার কাছে মানুষ এলে তাদের বিচার কমিটিতে পাঠিয়ে দিই। আমি নিজে বিচার করলে বদনাম হবে। এমপি ইলিয়াস মোল্লা ও আসলামুল হক নিজেই বিচার করেন। আমার পাঁচ ওয়ার্ডের বিচারকাজ পরিচালনা হয় মোহনা টিভির কার্যালয়ে। এ কমিটির রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের ব্যবস্থাও রয়েছে।’ এমপি দাবি করেন, ‘তাঁর বিচার কমিটির রায় প্রচলিত আদালতও আমলে নেন।’
উল্লেখ্য, মোহনা টিভি সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান।
বিচার কমিটির সদস্যসচিব আবুল খায়ের ভূঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, “এ আদালতের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম ক্ষমতায় আসার পর। সেই সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সামসুদ্দিন মোল্লাকে প্রধান ও আব্দুল করিম আকন্দকে সদস্যসচিব করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধানকে ‘প্রধান বিচারপতি’ আর অন্য সদস্যদের বলা হতো বিচারপতি। একটি কেসের রায়ের কপিতে প্রধান বিচারপতি লেখার পর সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি এমপি মহোদয়কে উকিল নোটিশ পাঠায়। এরপর আমরা তা পরিবর্তন করে আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব নাম দিয়েছি। কিন্তু আমাদের কার্যক্রম পুরোটাই আদালতের মতোই পরিচালিত হয়ে থাকে। আমাদের রয়েছে একটি বেঞ্চ সহকারী বা পেশকার। তাঁর নাম ওয়াজি উল্লাহ। বাদীর টাকায় তাঁর বেতন দেওয়া হয়। কারো কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায়ের কোনো নজির নেই।”
আদালত পরিচালনার ক্ষেত্রে আপনাদের ‘বিচারিক ক্ষমতা’ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাননীয় সংসদ সদস্যের বিচারিক ক্ষমতা রয়েছে। তাঁর দেওয়া ক্ষমতাবলেই আমরা আদালত পরিচালনা করে থাকি।’
জানা যায়, এ কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল ওহাব সদস্যসচিব আবুল খায়ের ভূঁইয়া এবং সদস্য আব্দুল আলী চৌধুরী, এম এ গফুর ও সিরাজউদ্দিন।
এলাকাবাসীর দাবি, কামাল মজুমদার ও তাঁর অনুসারীদের গঠিত এ বিচার কমিটির নামে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা এবং নির্বাহী ক্ষমতা আরোপের জন্য গঠিত আরেক কমিটির কারণে ইতিমধ্যে এলাকায় গণভীতি তৈরি হয়েছে। এমপির এই ‘মিনি আদালতের’  বিচারকাজের নজির এখানে তুলে ধরা হলো।
ঘটনা-১ : গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বোটানিক্যাল গার্ডেনের সাবেক পরিচালক এ বি এম বারেকের স্ত্রী লুৎফুন নেসা নাহারকে সামাজিক বিচার কমিটির পক্ষে একটি সমন (নোটিশ) দেন আহ্বায়ক আব্দুল ওহাব। সমনে বলা হয়, ‘জনাব আলহাজ শফিউদ্দিন নামের এক ব্যক্তি আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করেছেন। এ অভিযোগ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আপনাকে বিচার কমিটির কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, প্রমাণাদি ও সাক্ষীসহ উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হলো।’
সমনে উল্লেখ আছে, ঢাকা-১৫ আসনের এমপি কামাল আহমেদ মজুমদার কর্তৃক গঠিত সামাজিক বিচার কমিটির কার্যালয় মোহনা, প্লট-৮, রোড-৪, মিরপুর-৭। কিন্তু বিচার কমিটির সমনে সাড়া না দেওয়ায় নাহারকে আরো চারটি সমন দেওয়া হয়।
জানা যায়, শফিউদ্দিন গত ৬ ফেব্রুয়ারি কামাল মজুমদারের কাছে একটি আবেদন করেন। এ আবেদনের ওপর কামাল মজুমদার বিচার কমিটিকে বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি ও তাঁকে অবগত করার নির্দেশ দেন।
এ বি এম বারেক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০ বছর আগে নির্মাণ করা আমার বাড়ির দেয়াল ভেঙে এক প্রতিবেশীকে রাস্তা দেওয়ার অজুহাতে বিচার কমিটি নোটিশ দেয়। আমি বিজ্ঞ আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, স্বঘোষিত এ কমিটি আমাকে দালিলিক প্রমাণাদি নিয়ে হাজির হওয়ার যে নির্দেশ দিয়েছে তার কোনো এখতিয়ার  তাদের নেই। এটা বেআইনি নোটিশ। পরে আমি তাদের নির্দেশ না মানায় পরপর পাঁচটি নোটিশ দেয়। এরপর বিচার কমিটির লোকজন দলবল নিয়ে আমার দেয়াল ভাঙতে আসে। বাধ্য হয়ে আমি পুলিশের আশ্রয় নেই। পুলিশের সহয়তায় আমার রক্ষা হয়।’
এ ব্যাপারে বিচার কমিটির সদস্যসচিব আবুল খায়ের ভূঁইয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমপি সাহেবের নির্দেশে আমরা এ কমিটি করেছি। কমিটির কাছে কেউ অভিযোগ করলে তদন্ত করে দেখা হয়। এ জন্য আমরা উভয় পক্ষকে নোটিশের মাধ্যমে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দিই। বোটানিক্যাল গার্ডেনের সাবেক পরিচালকের স্ত্রীকেও আমরা পাঁচটি নোটিশ দিয়েছি। কিন্তু তিনি এতে সাড়া দেননি। এর পরও আমরা স্থানীয় লোকজনের সমন্বয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেছি এবং সব প্রমাণাদি পর্যালোচনা করে তাঁর অনুপস্থিতিতেই রায় দিয়েছি। এ বি এম বারেক ছাড়া এ পর্যন্ত আমাদের রায়ের ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি।’
ঘটনা-২ : বিচার কমিটির পক্ষ থেকে উসমান গণি নামের এক ব্যক্তিকে চিঠি দেওয়া হয়। তিনি চিঠির বিষয়ে সাড়া না দিলে কমিটির পক্ষ থেকে রায় দিয়ে তা কার্যকর করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। গত ১৬ জুন মিরপুর থানার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সামাজিক বিচার কমিটির আহ্বায়কের নেতৃত্বে শতাধিক লোকজন গিয়ে ৬০ ফুট প্রশস্ত রাস্তার পাশে উসমান গণি তালুকদারের মালিকানাধীন জমির সীমানাপ্রাচীর ভেঙে দেয়। এরপর পুলিশের সহায়তায় তাঁর জায়গা রক্ষা পায়। জানা যায়, উসমান গণি তালুকদার মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান।
উসমান গণি তালুকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিচার কমিটির নামে তারা আমাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে হাজির হতে নোটিশ দেয়। এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে জারি করা এ নোটিশে আমি সাড়া দেইনি। পরে বিচার কমিটির লোকজন দলবল নিয়ে এসে বেআইনিভাবে আমার সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলে। অবশেষে স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় তাদের হাত থেকে রক্ষা পাই।’
এমপির তৃণমূল প্রশাসন : সংসদ সদস্য কামাল মজুমদার তাঁর এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে কমিটি গঠন করেছেন, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি।’ গত কয়েক মাসের ব্যবধানে সব কয়টি ওয়ার্ডেই এ কমিটি গঠন করেছেন তিনি। কমিটি গঠনের পর চিঠি পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অফিস আদেশ দিয়েছেন তাঁর এলাকার সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী প্রকৌশলী, ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী, ডেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী, তিতাসের উপমহাব্যবস্থাপক ও থানার ওসিদের। চিঠিতে বলা হয়েছে, এলাকার রাস্তা-ঘাট, বিদ্যুৎ, পানির লাইন, গ্যাসের লাইনসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধার কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব এমপির কমিটির।
চিঠি থেকে জানা যায়, ৪ নম্বর ওয়ার্ড উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মতিউর রহমান মাইকেল, সদস্যসচিব মোফাজ্জল হোসেন, সদস্য শওকত হোসেন, আবু বকর ছিদ্দিক ও তাজুল ইসলাম। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে এ কমিটির আহ্বায়ক রেজাউল হক ভূঁইয়া বাহার, সদস্যসচিব মইজউদ্দিন, সদস্য করিমুল হক চৌধুরী মিঠু, তাজুল ইসলাম, শফিকুর রহমান, আবু জালাল, ফারুক আহমেদ, ফখরুল ইসলাম ভূঁইয়া ও খোকা মিয়া। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে আহ্বায়ক এম এ গফুর, সদস্যসচিব ইসমাইল হোসেন, সদস্য আলাউদ্দিন, আজগর আলী, ইসহাক মিয়া, আজহারুল হক ফেরদৌস, মকবুল হোসেন ও আমিনুল ইসলাম। ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিল্লাল উদ্দিন আহমেদ আহ্বায়ক ও খান বাবলু সদস্যসচিব আর সদস্য আব্দুল আলী চৌধুরী, মোহাম্মদ জাফরুল্লাহ, আব্দুর রউফ আলী, জহিরুল ইসলাম খান, সৈয়দ আজিজুল হক খসরু, আব্দুর রব ও ইয়াছিন মিয়া।
গত ৯ এপ্রিল ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির অনুমোদনপত্রে কামাল মজুমদার স্বাক্ষর করে বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকা ১৮৮, ঢাকা-১৫-এর কাফরুল থানাধীন রাস্তা-ঘাট উন্নয়ন, স্যুয়ারেজ লাইন উন্নয়ন, নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, শিক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার লক্ষ্যে এ কমিটি গঠন করা হলো।’
১৪ নম্বর উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব মো. মইজউদ্দিন বলেন, ‘এমপি মহোদয়ের নির্দেশে আমরা জনগণের সুখ-শান্তি দেখার কাজ করছি। আমরা ওয়াসার সুয়্যারেজ লাইন নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে জমা দিয়েছি, তা এমপি মহোদয়ের মাধ্যমে ওয়াসায় পাঠানো হয়েছে। এ কাজ ওয়াসা আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে করবে। এভাবে জনগণের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা কাজ করে থাকি।’
কামাল মজুমদারের দেওয়া চিঠির সত্যতা নিশ্চিত করেন ঢাকা ওয়াসার মডস জোন-৪-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জুলফিকার আলী। কমিটির পক্ষ থেকে কোনো ধরনের কাজের চাপ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এক আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘এ ধরনের চিঠি পাওয়ার পর আমরা খুবই বিব্রত হয়েছি। একজন সংসদ সদস্যের সরকারি দপ্তরের ওপর আস্থা থাকলে তিনি এ কমিটি গঠন করতেন না। কমিটি গঠনই শেষ নয়। উনার নির্বাচনী এলাকায় সরকারি যেকোনো প্রতিষ্ঠান কাজ করলে সংশ্লিষ্ট কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করারও মৌখিক নির্দেশনা রয়েছে।’
বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ ধরনের কমিটি গঠন করে সংসদ সদস্যের নেওয়া পদক্ষেপ সম্পূর্ণ বেআইনি।
সূত্র : তোফাজ্জল হোসেন রুবেল, দৈনিক কালের কন্ঠ।

Saturday, August 2, 2014

JSC & Junior Dhakhil Exam Rutine 2014 - নিন শেষ হবার আগে


Jsc 2014 Exam Rutine 

ফুরোনের আগেই নিয়ে নিন - জে.এস.সি ১৪ এর রুটিন 

অনেক দিন পর আবার এলাম - জে.এস.সি 2014 পরীক্ষার রুটিন নিয়ে। আগামী ২রা নভেম্বর ১৪ বাংলা ১ম পত্র পরীক্ষার মাধ্যমে শুরু হচ্ছে  জে.এস.সি ১৪ পরীক্ষা ৩রা নভেম্বর বাংলা ২য় পত্র, ৫ ও ৬ ই নভেম্বর ইংরেজী ১ম ও ২য় পত্র  এবং  শেষ হবে ১৮ ই নভেম্বর। 
এক নজরে দেখি সংক্ষিপ্ত রুটিন ঃ

তারিখ               বার               বিষয় ও পরীক্ষা শুরুর সময় 
                            সকাল ১০টা                বিকাল ২ টা

০২/১১/২০১৩   সোমবার        ১। বাংলা - ১ম পত্র
০৩/১১/২০১৩  মঙ্গলবার         ১। বাংলা - ২য় পত্র
০৫/১১/২০১৩   বুধবার         ১। ইংরেজি - ১ম পত্র
০৬/১১/২০১৩   বৃহঃবার         ১। ইংরেজি - ২য় পত্র
৯/১১/২০১৩   রবিবার        ১।  গনিত     বিজ্ঞান/ সাধারণ বিজ্ঞান
-----------------------------------------------

এভারে বাকিটা ডাউনলোড করে নিন, নীচের লিঙ্ক থেকে 

                                             

১৮/১১/২০১৩   মঙ্গল বার           বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়

এছাড়াও সরাসরি নীচের লিঙ্ক থেকে জে.এস.সি ১৪ পরীক্ষার রুটিন  PDF ফাইল ডাউনলোড করে নিতে পারেন।

অনুরূপ, জুনিয়র দাখিল পরীক্ষা 2014 এর  রুটিন ও এই সাইট থেকে

 জুনিয়র দাখিল পরীক্ষা 2014 এর  রুটিন এর 

                     PDF ফাইল ডাউনলোড করে নিতে পারেন.

আপনাদের সকলের মঙ্গল কামনায় শেষ করছি।

Monday, July 14, 2014

অনন্য উচ্চতায় পৃথিবীর আট কোটিপতি : যারা উত্তরাধিকারের জন্য সম্পদ রাখেননি

 অনন্য উচ্চতায় পৃথিবীর আট কোটিপতি

যারা উত্তরাধিকারের জন্য সম্পদ রাখেননি


 বিল গেটস, স্টিভ কেস, মার্ক বেনিয়ফ, আরউইন জ্যাকবস, পিয়েরে অমিডায়ার, গর্ডনমুর, এলন মাক্স ও ল্যারিপেজ।

হাজারো কোটি টাকা উপার্জন করেছেন তারা। কিন্তু এত টাকা কি শুধু সন্তানদের ভবিষ্যৎ চিন্তায় আয় করেছেন? আর এ টাকা নিয়ে তারা কী করবেন? প্রযুক্তি জগতের কোটিপতি এমন কিছু মহানুভব মানুষ আছেন যারা নিজেদের পরিবারের বাইরের মানুষের কথাও চিন্তা করেন। বিল গেটস, স্টিভ কেজ, মার্ক বেনিয়ফ, আরউইন জ্যাকবস, গর্ডন মুর, এলন মাস্ক ও ল্যারি পেজ সেই মহানুভব মানুষের তালিকায় শীর্ষে থাকবেন নিঃসন্দেহে। নিজেদের সন্তানের জন্য নয়, তাদের বেশিরভাগ অর্থসম্পদ তারা দান করেছেন মানুষের কল্যাণে।



প্রযুক্তি উদ্যোগের কল্যাণে কোটি কোটি টাকা আয় করা উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ ব্যক্তিগত বিমান কিনেছেন, বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন আবার কেউবা কিনেছেন পুরো দ্বীপ। তবে এই আটজন উদ্যোক্তা তাদের অর্থসম্পদকে মানবহিতৈষী কাজে লাগিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন। বিভিন্ন ফাউন্ডেশন ও ট্রাস্টের মাধ্যমে তাদের অর্থসম্পদ দাতব্য কাজে লাগিয়েছেন তারা। সম্প্রতি প্রযুক্তি ও ব্যবসাবিষয়ক ওয়েবসাইট বিজনেস ইনসাইডার এই আটজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস

নিজের সন্তানের কথা না ভেবে দাতব্য কাজে অর্থসম্পদ ব্যয় করেছেন এমন কোটিপতির কথা বলতে গেলে সবার প্রথমে আসে মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের নাম। বিল গেটস তার ৭ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের সম্পদ তার উত্তরাধিকারী তিন সন্তানের জন্য রেখে যাবেন না বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন। বিল গেটসের সম্পদ থেকে তার এই তিন সন্তান সর্বোচ্চ এক কোটি মার্কিন ডলার করে পাবেন।
এ বছরের ফেব্র“য়ারি বিল গেটস বলেছেন, ‘আমি মনে করি সন্তানদের জন্য বিশাল অর্থসম্পদ রেখে যাওয়া তাদের জন্য সুখকর হবে না।’
১৯৯৪ সালে বিল গেটস বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এই ফাউন্ডেশনের সম্পদ ৩ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারের।
বিল গেটস শুধু নিজের দাতব্য প্রতিষ্ঠান তৈরি করেননি, অন্যদেরও এ কাজে উৎসাহ দিতে কাজ করছেন। দীর্ঘদিনের বন্ধু ওয়ারেন বাফেটের সঙ্গে মিলে ‘গিভিং প্লেজ’ নামে একটি কর্মসূচি চালু করেছেন। এই কর্মসূচির মাধ্যমে কোটিপতিদের তাদের সম্পদের কমপক্ষে অর্ধেক অংশ দাতব্য কাজে লাগানোর জন্য উৎসাহ দেয়া হয়।

এওএল সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ কেস

লাখ লাখ মার্কিনকে অনলাইনে আনার কৃতিত্ব দেয়া হয় এওএলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ কেসথ প্রযুক্তির উন্নয়নে নিজের সম্পদের বেশিরভাগ দান করেছেন যিনি। ১৯৯৭ সালে প্রযুক্তির সাহায্যে মানুষকে সেবা করার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন কেস ফাউন্ডেশন। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠা করেন রেভল্যুশন নামে একটি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির বাইরের বিভিন্ন উদ্যোগ বা স্টার্টআপগুলোতে বিনিয়োগ করে থাকে তার এই রেভল্যুশন। কেস ও তার সহধর্মিণী গিভিং প্লেজে স্বাক্ষর করেছেন। তাদের ভাষ্য হচ্ছে, ‘যে সম্পদ আমরা অর্জন করেছি সেগুলো আমাদের নিজের মনে করি না বরং আমরা সম্পদের দায়িত্বশীল ব্যবহারে বিশ্বাসী।’

সেলসফোর্সের প্রধান নির্বাহী মার্ক বেনিয়ফ

মার্ক বেনিয়ফ সমপ্রতি ‘এসএফ গিভস’ নামে একটি কর্মসূচি চালু করেছেন যাতে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন অলাভজনক সংস্থাকে সাহায্য করতে অনুপ্রেরণা দেয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ১/১/১ মডেল অনুসরণ করার উৎসাহদাতা হিসেবেও বেনিয়ফের খ্যাতি রয়েছে। এই মডেল অনুযায়ী একটি প্রতিষ্ঠানকে তার তহবিলের ১ শতাংশ, কর্মী সময়ের ১ শতাংশ এবং সম্পদের ১ শতাংশ দাতব্য কাজে ব্যয় করতে বলা হয়।
বেনিয়ফ ও তার স্ত্রী লাইনি ক্যালিফোর্নিয়ার একটি হাসপাতালে ২০ কোটি মার্কিন ডলার দান করেছেন।
কোয়ালকমের প্রতিষ্ঠাতা আরউইন জ্যাকবস
আরউইন জ্যাকবস ও তার স্ত্রী জোয়ান ৫০ কোটি মার্কিন ডলার দাতব্য কাজে ব্যয় করেছেন। আরউইন ‘গিভিং প্লেজ’ কর্মসূচিতে স্বাক্ষর করেছেন এবং সম্পদের অর্ধেক দাতব্য কাজে লাগানোর প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন। তবে তার ছেলে কোয়ালকমের প্রধান নির্বাহী পল বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ১৫ লাখ শেয়ারের মালিক। কিন্তু আরউইনের সম্পদের সঙ্গে পলের সংশ্লিষ্টতা নেই।

ইবের প্রতিষ্ঠাতা পিয়েরে অমিডায়ার

অমিডায়ার ও তার স্ত্রী পাম প্রযুক্তি জগতের অন্যতম দানশীল ব্যক্তি হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন। ১৯৯৮ সালে ইবে যখন পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে শেয়ারবাজারে আসে তখন যে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার সম্পদের মালিক হয়েছিলেন তা দাতব্য কাজে ব্যয় করার ঘোষণা দেন তারা। ২০১০ সালে তারা ‘গিভিং প্লেজ’ কর্মসূচিতে স্বাক্ষর করেন। অমিডায়ার দম্পতির ভাষ্য, ‘আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে খুবই সরল। আমাদের পরিবারের প্রয়োজনের চেয়ে আমাদের অনেক বেশি অর্থ রয়েছে। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি অর্থ ধরে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। বিশ্বের কল্যাণকর কাজে এই অর্থ কাজে লাগুক।’
অমিডায়ার ‘অমিডায়ার নেটওয়ার্ক’ নামে একটি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানে তার ইবের শেয়ার দান করেছেন। প্রতিষ্ঠানটি দাতব্য কাজে অর্থ সহায়তা করে। মানব পাচার রোধ করতে যেসব প্রতিষ্ঠান অর্থ খরচ করে তার মধ্যে অমিডায়ার নেটওয়ার্ক অন্যতম।

ইনটেলের সহপ্রতিষ্ঠাতা গর্ডন মুর

ইনটেলের সহপ্রতিষ্ঠাতা গর্ডন মুর দানশীল হিসেবে খ্যাত। দাতব্য কাজে ১০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি ব্যয় করেছেন তিনি। ২০০১ সালে নিজের অর্ধেকের বেশি সম্পদ নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন মুর ফাউন্ডেশন। সংস্থাটি পরিবেশ, স্বাস্থ্য সুরক্ষার মতো বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে। বর্তমানে এ সংস্থার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি সম্পদ রয়েছে। ২০১২ সালে গর্ডন মুর ও তার স্ত্রী ‘গিভিং প্লেজ’ কর্মসূচিতে স্বাক্ষর করেছেন। এই কর্মসূচিতে স্বাক্ষর করার বিষয়ে তারা বলেন, ‘গিভিং প্লেজের অংশ হতে পেরে আমরা খুশি। আমরা বিশ্বাস করি এই অর্থসম্পদ বিশ্বের হিতকর কাজে লাগবে।’

টেসলার প্রধান নির্বাহী এলন মাস্ক

একবার যমজ ও একবার একসঙ্গে তিন সন্তানের বাবা হন উদ্যোক্তা এলন মাস্ক। বর্তমানে পাঁচ সন্তানের বাবা হলেও নিজের অর্জিত সম্পদের অধিকাংশই তিনি নবায়নযোগ্য শক্তি, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল শিক্ষা, শিশুস্বাস্থ্য খাতে দান করেছেন। ২০১২ সালে তিনি ‘গিভিং প্লেজ’ কর্মসূচিতে স্বাক্ষর করেন। টেসলাতে কাজের জন্য তিনি বছরে মাত্র এক মার্কিন ডলার প্রতীকী বেতন নেন।

গুগলের প্রধান নির্বাহী ল্যারি পেজ

গুগলের প্রধান নির্বাহী ল্যারি পেজ তার অর্থসম্পদ সন্তানদের নামে দেয়ার বদলে পৃথিবীতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে ব্যয় করতে চান। তিনি তার কোটি কোটি ডলার ভালো উদ্যোগের পেছনে খরচ করতে চান। এ বছরের মার্চে তিনি বলেছেন, তার বিলিয়ন ডলার অর্থসম্পদ দুই সন্তানকে দেয়ার চেয়ে এলন মাস্কের মতো উদ্যোক্তার হাতে দেবেন যিনি পৃথিবী বদলে দেয়ার মতো ধারণা বাস্তবায়নে কাজ করছেন।’

সূত্র - আমাদের সময়.কম

Sunday, July 13, 2014

ডিম পাড়ে হাঁসে— খায় বাগডাশে

ডিম পাড়ে হাঁসে— খায় বাগডাশে

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)
'খায় দায় ফজর আলী, মোটা হয় জব্বার'—বাংলাদেশে এটি একটি সুপ্রচলিত বুলি। আশংকা দাঁড়িয়েছে যে, বঙ্গোপসাগরের কম বা বেশি যেটুক এলাকার ওপর বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে বৈধ অধিকারের স্বীকৃতি পেয়েছে সেই অর্জনের অবস্থা না আবার 'ফজর আলী' ও 'জব্বারের' মতো হয়ে ওঠে! 

গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক সালিশী ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সমুদ্রসীমা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ নিষ্পত্তি করে রায় প্রদান করেছে। এতে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কম হয়েছে না বেশি হয়েছে তা নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে। কিন্তু 'ফজর আলীদের' পেরেশানের ফসল দিয়ে 'জব্বাররা' মোটা হওয়ায় পাঁয়তারা করছে, তা নিয়ে রাষ্ট্রের নেতাদের ও 'বড়' দলগুলোর যেন কোনো মাথাব্যথাই নেই। অথচ সেই বিষয়টিই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একদল মানুষ বলছে, বাংলাদেশ 'সমুদ্র-জয়' করেছে। আরেক দলের কথা, বাংলাদেশের 'সমুদ্র-পরাজয়' ঘটেছে। সরকারপক্ষীয়রা বলছে, প্রদত্ত সালিশী রায়ের দ্বারা বাংলাদেশ বিতর্কিত সাগর এলাকার চার-পঞ্চমাংশের ওপর তার বৈধ অধিকারের স্বীকৃতি পেয়েছে। অতএব, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক 'সমুদ্র-বিজয়' সম্পন্ন হয়েছে। এই যুক্তির বিপরীতে যুক্তি দিয়ে বিএনপি বলছে যে, বাংলাদেশ বিতর্কিত সাগর এলাকায় তার 'ন্যায্য' দাবির এক-পঞ্চমাংশ ভারতের কাছে হারিয়েছে। এমনকি যে তালপট্টি দ্বীপ নিয়ে (ভারতীয়রা যাকে নিউ মূর নামে অভিহিত করে থাকে) একসময় দু'দেশের নৌবাহিনী 'মুভ' করেছিল এবং তাদের মধ্যে সংঘাত লাগে-লাগে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, সালিশের রায়ে সেই তালপট্টিও ভারত পেয়ে গেছে। এটি একথাই প্রমাণ করে যে, সালিশের রায় দ্বারা বাংলাদেশের 'সমুদ্র-পরাজয়' ঘটেছে।

বিএনপির মতামতের জবাবে সরকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, আশির দশক পর্যন্ত তালপট্টি বলে যে দ্বীপটির অস্তিত্ব ছিল তা এখন সাগরবক্ষে বিলীন হয়ে যাওয়ায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। সুতরাং 'ভারতকে তালপট্টি দিয়ে দেয়া হয়েছে'—এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ কাল্পনিক। সরকারপক্ষীয়দের এসব কথা সঠিক। তালপট্টি দ্বীপকে এখন আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু কথা হলো, সাগরের যে স্থানে একসময় এই দ্বীপটি ছিল সেই এলাকাটি কোন দেশের ভাগে পড়েছে? এ বিষয়টিই হলো সমুদ্র এলাকা পাওয়া-না পাওয়ার হিসেব কষার ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। তালপট্টি দ্বীপ সাগর জলের উপরে থাকলো, নাকি তা সাগর জলে ডুবে গেল—সেটি বড় কথা নয়। যে এলাকায় তালপট্টি দ্বীপ ছিল তা যে ভারত পেয়েছে— একথা সোজাসুজি স্বীকার করতে সরকারের কি অসুবিধা? তালপট্টির এলাকাটি ভারতকে দেয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ যে বিরোধপূর্ণ সাগর এলাকার প্রায় চার-পঞ্চমাংশ পেয়েছে সে প্রাপ্তির হিসেব কি তার ফলে নাকচ হয়ে যাবে? সেটুকুই কি বাংলাদেশের জন্য একটি নিট 'অর্জন' নয়?

বিএনপি যে যুক্তি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সামনে আনছে তাহলো বাংলাদেশ তার দাবিকৃত সমুদ্রসীমার সর্বাংশ পায়নি। আর সর্বাংশ না পাওয়ার অর্থ হলো অপর পক্ষকে কিয়দংশ দিয়ে দেয়া। অর্থাত্, দাবির সর্বাংশ না পাওয়ার অর্থ হলো 'পরাজয়' বরণ করা। সে হিসেবে বাংলাদেশের 'সমুদ্র-পরাজয়' হয়েছে। কিন্তু এই যুক্তি দেয়ার ক্ষেত্রে বিএনপি এই বিবেচনাটি সযত্নে আড়াল করছে যে—সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের গোটা বিষয়টি একটি আন্তর্জাতিক সালিশী আদালতের কাছে 'সালিশী রায়ের' জন্য ন্যস্ত করা হয়েছিল। সালিশের দ্বারস্থ হওয়ার পর যদি 'সালিশ মানি, কিন্তু তালগাছটি আমার' মনোভাব ও যুক্তি দ্বারা কেউ যদি পরিচালিত হয়, তাহলে তা মোটেও যুক্তিগ্রাহ্য বলে বিবেচনা করা যায় না। সালিশের মাধ্যমে কোনো একটি পক্ষই সবটুকু দাবি পেয়ে যাবে, এমন ভাবাটা নিছক যুক্তিহীন ছেলেমানুষী ছাড়া অন্য কিছু নয়। বিএনপি সেই ছেলেমানুষী ভাবাবেগকে উস্কে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চাচ্ছে।

বিষয়টিকে 'সমুদ্র-জয়' বা 'সমুদ্র-পরাজয়ের' আঙ্গিকে মূল্যায়ন না করে রায়টিকে গ্রহণ করা হলো কি হলো না, সেটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই রায়কে ভারত 'জয়' বা 'পরাজয়' হিসেবে চিহ্নিত না করে কেবল একথাই বলেছে যে, তারা রায় মেনে নিয়েছে। রায়টিকে সালিশী মীমাংসার ফসল হিসেবে বিবেচনা করাটাই যুক্তিযুক্ত। তাতে দু'পক্ষই তাদের দাবির কিয়দংশ পাবে আর কিয়দংশ পাবে না। বিরোধপূর্ণ সাগর এলাকার দাবিকৃত অংশের ৮০% শতাংশ পেয়েছে বাংলাদেশ এবং ২০% শতাংশ পেয়েছে ভারত। বাংলাদেশের এই প্রাপ্তি দেশ ও জাতির জন্য কতোটা নতুন সম্পদের সমাহার ও সুযোগের দ্বার উন্মোচিত করলো এবং তা কার স্বার্থে কিভাবে ব্যবহূত হবে— সেটিই প্রধান বিবেচনার বিষয় হওয়া উচিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি সম্পর্কে উভয়পক্ষ প্রায় সম্পূর্ণ নিশ্চুপ। 'অর্জনকে' দেশ ও জনগণের স্বার্থে সর্বাংশে কাজে লাগানো হবে কিনা সে বিষয়টি নিয়ে তাদের কারো যেন কোনো মাথাব্যথা নেই।

'জয়' ও 'পরাজয়' নিয়ে নিজ-নিজ অবস্থান উঁচুগলায় তুলে ধরে আবেগী বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার পেছনের আসল কারণ হলো দেশ ও জাতির স্বার্থের বিবেচনার চেয়ে ক্ষমতার প্রশ্নে লড়াইয়ে একে-অপরকে কাবু করতে পারার প্রয়াস। তাই, সরকার পক্ষ সুযোগমতো বলে চলেছে যে '৫ জানুয়ারির নির্বাচন না হলে এই সমুদ্র-জয় সম্ভব হতো না'। অন্যদিকে বিএনপি বলে চলেছে যে, 'সরকারের দুর্বলতা ও ভারত-প্রীতির কারণে তালপট্টি হাতছাড়া করে এরূপ সমুদ্র-পরাজয় ঘটেছে। উভয় পক্ষের কথাবার্তায় ক্ষমতার জন্য কামড়া-কামড়ি প্রসূত কুযুক্তি ও আস্ফাালনের প্রাধান্য বেশ স্পষ্ট। মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধটি আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি। বিরোধটি বছরের পর বছর ঝুলে থাকলেও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তা নিরসনের চেষ্টা তেমন কোনো সফলতা আনেনি। বিরোধ নিষ্পত্তির ভিন্নতর কোনো পন্থায় কোনরূপ পদক্ষেপও এ সময়কালে নেয়া হয়নি। ২০০৮ সালে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের নৌ-সংঘর্ষের উপক্রম ঘটেছিল। তখনই সরকার এই বিরোধ মীমাংসার জন্য জার্মানীর হামবুর্গে স্থায়ী 'সমুদ্র আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে' (ITLOS) মামলা করে। এই আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল দু'পক্ষের যুক্তি-তর্ক শুনে রায় দেয়। সেই রায় অনুযায়ী যে ৮০ হাজার বর্গ কিলোমিটার সাগর এলাকা নিয়ে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের বিরোধ ছিল তার মধ্যে বাংলাদেশ পায় ৭০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। সে সময়ই বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশ তাদের মধ্যকার সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের বিষয়টি ITLOS-এর বদলে এডহক আন্তর্জাতিক সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তির বিষয়ে একমত হয়। সেই অনুসারে বিরোধীয় গোটা বিষয়টি UNCLOS-এর বিধান অনুসারে হেগের স্থায়ী সালিশ আদালত বা পার্মানেন্ট কোর্ট অব আর্বিট্রেশনের (PCA) সমীপে রায়ের জন্য ন্যস্ত করা হয়। সেই সালিশী আদালত গত ৮ জুলাই তাদের রায় প্রদান করেছে। সেই রায় ৯ জুলাই জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়েছে। সেই রায়ের মাধ্যমে সাগর অঞ্চলের ক্ষেত্রে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়েই জয়-পরাজয়ের বিতর্ক।

এককালে সমুদ্র-সাগর ছিল প্রধানত দূর-দূরান্তে যাতায়াতের পথ হিসেবে গুরুত্ববাহী। তাছাড়া তা ছিল মত্স্য সম্পদসহ আরো কিছু সামুদ্রিক সম্পদের জন্য মূল্যবান। তেমন অবস্থায় বিভিন্ন দেশের নিজ-নিজ সমুদ্রসীমা চিহ্নিত করার কোনো গুরুত্ব তেমন ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে সমুদ্রবক্ষ থেকে তেল-গ্যাসসহ জৈব জ্বালানি উত্তোলনের পথ তৈরি হয়েছে এবং সমুদ্র তলদেশ অন্যান্য মহামূল্যবান প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের উত্স হতে পারে বলে আবিষ্কৃত হয়েছে। ফলে সমুদ্রসীমা চিহ্নিতকরণের বিষয়টি ছোট-বড় সব দেশের জন্যই এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

ব্রিটিশ আমলে সমুদ্রসীমা চিহ্নিতকরণের বিষয়টি তাই তেমন গুরুত্ব পায়নি। গোটা পাকিস্তান আমলে মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা চিহ্নিতকরণ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়া যায়নি। বিষয়টি আগাগোড়াই ঝুলে ছিল। ১৯৪৭ সালে পার্টিশনের সময় দেশ-ভাগের সীমানা এঁকে দেয়ার দায়িত্ব পড়েছিল স্যার সিরিল র্যাডক্লিফের ওপর। তিনি পূর্ববাংলা (পূর্ব পাকিস্তান) ও ভারতের ভূখণ্ডীয় সীমানা নির্ধারণ করে মানচিত্রে যে লাইন টেনে দিয়েছিলেন সেটিই হয়ে ওঠে 'বৈধ' আন্তর্জাতিক সীমান্ত রেখা। তার আঁকা পশ্চিমদিকের পার্টিশন লাইনটি দক্ষিণে সুন্দরবন এলাকা অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগরের উপকূলের একটু নিচে এসে শেষ হয়ে যায়। সমুদ্রের ভেতর তা আর প্রসারিত করা হয়নি। র্যাডক্লিফের নির্ধারিত লাইন ধরেই বাংলাদেশের ভূখণ্ড চিহ্নিত। তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু যে বিষয়টি বিরোধীয় হয়ে ওঠে সেটি হলো এই যে, র্যাডক্লিফের লাইন যেখানে শেষ হয়েছে সেটিকে বেইস পয়েন্ট হিসেবে ধরে নিয়ে সমুদ্রের সীমারেখাটি কতো ডিগ্রি বরাবর টেনে চিহ্নিত করা হবে? বাংলাদেশের দাবি ছিল ১৮০ ডিগ্রি। আর ভারতের দাবি ছিল যে তা ১৬২ ডিগ্রি ধরে সেই সীমান্ত রেখা নির্ধারণ করা হোক। সালিশী ট্রাইব্যুনাল তা ১৭৭.৩ ডিগ্রি ধরে নির্ধারণ করে দিয়েছে। তাতে বাংলাদেশের তুলনামূলক প্রাপ্তি বেশি হয়েছে। এক্ষেত্রে ন্যায্যতার (equity) নীতি অনুসারে এ্যাডজাস্ট করে সমদূরত্ব (equidistant) নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশের অনুকূলে সীমান্ত রেখা টানা হয়েছে।

প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব করার পাশাপাশি এই হিসাবটিও কি গুরুত্বপূর্ণ নয় যে, সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের একটি শান্তিপূর্ণ আইনী মীমাংসা হয়েছে? যুদ্ধ ছাড়াই তিনটি দেশই বঙ্গোপসাগরে তাদের নিজ-নিজ সাগর-সীমানা বুঝে পেয়েছে। যুদ্ধে লোকক্ষয় ও বিপুল ধ্বংসযজ্ঞের বিনিময়ে কোনো দেশেরই বা কতোটুকু 'নিশ্চিত অর্জনের' গ্যারান্টি ছিল? সমুদ্রসীমা নিয়ে এরূপ শান্তিপূর্ণ আইনী নিষ্পত্তি বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার—এই তিনটি দেশের জন্যই যে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন, সেকথা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল ও সালিশী সংস্থার রায়ে ভারত ও মিয়ানমারের দাবিকৃত সাগর-এলাকার ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে অবস্থিত সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। গুরুতর প্রশ্নটি আসলে এখন জয়-পরাজয় নিয়ে বিতর্কের নয়। আসল বিষয় হলো, বাংলাদেশ তার এই অর্জনকে সর্বাংশে নিজে ধরে রাখবে, নাকি তা পরদেশী অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় শক্তির হাতে তুলে দেয়ার পথ নিবে? বাংলাদেশের 'সমুদ্র-জয়' কি সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানির শোষণের লালসার কাছে বলি দেয়া হবে? 'সমুদ্র-জয়ের' ফসল কি জনগণের মাঝে 'সমান পরিমাণে' বন্টনের ব্যবস্থা করা হবে? না, তাকে কি দেশের মুষ্টিমেয় লুটেরা চক্রের ধন স্ফীতির উেস পরিণত হতে দেয়া হবে? এখন আসল প্রশ্ন হলো এটিই। অথচ তা নিয়ে কোনো কথাবার্তাই সরকার বা বিএনপি নেতাদের মুখে নেই।

বঙ্গোপসাগরের উপকূল, অগভীর সমুদ্রাংশ ও গভীর সমুদ্রাংশের ওপর এবং সেখানকার যাবতীয় সম্পদের ওপর বাংলাদেশের আইনী অধিকার এখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই অর্জিত সমুদ্র এলাকায় যে বিপুল সম্পদ রয়েছে তার মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে মূল্যবান হলো:(১) প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল সম্পদ, (২) মাছ ও অন্যান্য জৈব সম্পদ, (৩) সামরিক স্ট্র্যাটেজিক কাজে এই সাগর এলাকাকে ব্যবহারের সুযোগ। এসব ক্ষেত্রে পরদেশী, বিশেষত সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র ও পুঁজি ভাগ বসাতে চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের আপেক্ষিক আর্থিক ও সামরিক দুর্বলতা ও পরনির্ভরতাকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে তারা 'আমাদের অর্জনকে' 'তাদের অর্জন' হিসেবে পরিণত করার চেষ্টা করছে। সে পাঁয়তারা আগে থেকেই চলছিল। তা এখন আরো জোরদার হচ্ছে ও হবে।

অর্জিত 'আইনী' সাগর এলাকাকে কয়েকটি ব্লকে ভাগ করে তেল-গ্যাস সম্পদ লুটে নেয়ার জন্য তত্পরতা ইতোমধ্যেই জোরদার করা হয়েছে। বিদেশি লুটেরাদের স্থানীয় 'পদলেহনকারীরা' ইতোমধ্যেই লুটপাটের ভাগ পাওয়ার লালসায় 'লুঙ্গি কাছা দিয়ে' নেমে পড়ার কসরত্ শুরু করে দিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের জন্য সামুদ্রিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদানের কথা বলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এখন বঙ্গোপসাগরে তার নৌ-ঘাঁটি স্থাপন ও নৌ-উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য তত্পরতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় মার্কিন সামরিক উপস্থিতি এদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে বরঞ্চ বাংলাদেশকে মার্কিন-চীন-ভারতীয় স্ট্র্যাটেজিক দ্বন্দ্বে বাংলাদেশকে অহেতুক যুক্ত করার দ্বারা দেশের নিরাপত্তাকে আরো বিপদসংকুল করে তুলবে।

সাগর এলাকায় যে অর্জন বাংলাদেশের হয়েছে তার সবটুকু দেশ ও দেশবাসীর জন্য নিশ্চিত করার পথ গ্রহণ করতে হলে তেল-গ্যাস সম্পদ উত্তোলন, মত্স্য সম্পদ আহরণ ও সমুদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজগুলো অন্য কোনো রাষ্ট্র বা কোম্পানির হাতে তুলে না দিয়ে তা নিজেদের পরিপূর্ণ কর্তৃত্ব করার পথ গ্রহণ করতে হবে। এসব কাজে জাতীয় সক্ষমতা দ্রুত বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশেরই নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণে বিদেশি প্রযুক্তি ও বিশেষজ্ঞ ভাড়ায় এনে ব্যবহার করতে হবে। যেভাবে আমরা এখন পদ্মা সেতু নির্মাণের পথ গ্রহণ করেছি—সেভাবে। এই পথ গ্রহণ না করে যদি 'ইজারা দিয়ে' সুবিধার একাংশ গ্রহণের পথ অব্যাহত রাখা হয় তাহলে বাংলাদেশের অর্জন হাইজ্যাক হয়ে তা পরদেশীদের অর্জনে পর্যবসিত হবে। বাংলাদেশের সমুদ্র-জয় পরিণত হবে বিদেশের সমুদ্র জয়ে। সেক্ষেত্রে মাথা চাপড়িয়ে গাইতে হবে 'ডিম পাড়ে হাঁসে, খায় বাগডাশে'। তা হতে দেয়া যায় না। বাগডাশ ও তার পদলেহনকারীদের এহেন 'ডাকাতি-প্রয়াস' রুখতেই হবে।

সূত্র ০ ইত্তেফাক।

Thursday, June 12, 2014

সব ফলেই বিষ

সব ফলেই বিষ

হাসান সোহেল : কেমিকেল যুক্ত ফলের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দেশের বিভিন্নবাজারে ফলের দোকানে গতকালও অভিযান চালানো হয়। এই অভিযানকে আরও জোরদার করতে এবং রাজধানীতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ফলের প্রবেশ ঠেকাতে পুলিশের অভিযানও শুরু হয়েছে। বুধবার রাত থেকেই রাজধানীর ৮টি প্রবেশপথে বিশেষ চেকপোস্ট বসিয়ে এই অভিযান চালানো হচ্ছে। গাবতলী, সায়েদাবাদসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ৮টি স্থানে এ অভিযান চলবে বলে বিএসটিআই জানায়।
এদিকে অভিযান চালিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ফরমালিনের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেই ঘটনাস্থলে ধ্বংস করা হচ্ছে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এসব ফল। সামাজিক সংগঠন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর পক্ষ থেকেও জনস্বার্থে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার থেকে ফল সংগ্রহ করে বিষাক্ত ফরমালিনের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাদের সংগ্রহ করা নমুনার মধ্যে শত ভাগ জামে, ৯৫ ভাগ লিচুতে এবং ৬৬ ভাগ আমে বিষাক্ত ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অন্যান্য ফলেও ফরমালিন পাওয়া গেছে বলে পরীক্ষায় উঠে এসেছে। পবা’র পক্ষ থেকে খাদ্যে ফরমালিন মেলানোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও বিক্রেতাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া যথেষ্ট নয় বলে উল্লেখ করা হয়। এ ক্ষেত্রে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ (ক) ধারা ব্যবহার করে জড়িতদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদ- বা যাবজ্জীবন কারাদ-ের বিধান কার্যকরের দাবি জানানো হয়েছে।  
অপরদিকে আগারগাঁও হলিডে মার্কেটে ফর্মালিন ও কেমিকেলমুক্ত সাশ্রয়ী মূল্যের মৌসুমী ফলের বাজারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মোঃ মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি সারা দেশে আরো বিষমুক্ত দেশী ফলের বাজার চালু করার আহবান জানিয়েছেন। এছাড়া ফরমালিন প্রতিরোধে এই সংসদ অধিবেশনেই আইন পাস হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।   
রাজধানীতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ফলের প্রবেশ ঠেকাতে গতকাল রাত থেকেই শুরু হয়েছে অভিযান। ফলের চালান আসে নগরীর এমন আটটি প্রবেশমুখে চৌকি বসিয়ে চালানো হবে তল্লাশি। স্থানগুলো হলো পোস্তগোলা ব্রীজ, যাত্রাবাড়ী থানার সাইনবোর্ড, ডেমরা থানার সুলতানা কামাল ব্রীজের পশ্চিম পাশে ডেমরা চৌরাস্তা, বাবুবাজার ব্রীজ, সদরঘাট, ওয়াইজঘাট, গাবতলীর পর্বতা সিনেমা হলের সামনে, আব্দুল¬াহপুর ব্রীজ ও ধউর ব্রীজ। ক্ষতিকর ফল ধ্বংস করার পাশাপাশি থাকবে জরিমানাসহ তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা।  
ডিএমপি জানায়, ফরমালিনযুক্ত ফল, মাছ ও তরি-তরকারি বিক্রয়, খাদ্যে ভেজাল দেয়া, অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে খাবার সংরক্ষণ, পচা ও বাসি খাবার বিক্রয়, ভেজাল গুঁড়া মসলা তৈরি ও বিক্রয় ও নকল খাদ্যজাতীয় দ্রব্য তৈরি ইত্যাদি জনস্বাস্থ্যহানিকর কার্যকলাপের বিরুদ্ধে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। রাজধানীবাসীর জন্য বিষমুক্ত ফল নিশ্চিত করতে শুরু হচ্ছে এই অভিযান। অভিযানে পুলিশকে সব ধরনের সহায়তা দেবে প্রশাসন ও বিএসটিআই। 
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের দুই লাখ টাকা জরিমানা ও দুই বছর পর্যন্ত কারাদ- দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে। প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, ২০১৩ সালে বিশুদ্ধ খাদ্য আইনে খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল দেয়ার জন্য মৃত্যুদ- পর্যন্ত শাস্তির বিধান রয়েছে। সাধারণত রাতেই রাজধানীতে প্রবেশ করে ফলের বড় চালান। তাই আপাতত রাতে সীমাবদ্ধ থাকলেও প্রয়োজনে অভিযানের সময়সূচি দিনেও নির্ধারণ করা হতে পারে। 
এদিকে পবা গতকাল বুধবার রাজধানীর কলাবাগানে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ফলে ফরমালিনের উপস্থিতি পরীক্ষা করে আশঙ্কাজনক তথ্য দিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে পবা’র নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবদুস সোবহান জানান, ১ থেকে ১০ জুন পর্যন্ত ঢাকার ৩৫টি এলাকা থেকে আম, জাম, লিচু, আপেল ও মালটা সংগ্রহ করে এই পরীক্ষা চালানো হয়েছে। পরীক্ষায় ১৪টি নমুনা জামের সব ক’টিতেই ফরমালিন পাওয়া গেছে। 
পবা জানায়, জাম, আম ও লিচু ছাড়াও আপেলে ৫৯ শতাংশ, ৬৯ শতাংশ মালটা ও ৮৭ শতাংশ আঙুরে ফরমালিন মিলেছে। ঢাকার পাশাপাশি গত ২২ ও ২৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের কয়েকটি বাজার থেকে ফলের নমুনা সংগ্রহ করে পবা। সংগৃহীত সফেদা, আনারস ও আঙুরে শত ভাগ ফরমালিন পেয়েছে পবা। এ ছাড়া ৩৩ ভাগ আপেল, ৭৭ ভাগ মালটা ও ৫০ ভাগ কমলায় ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়ার কথা জানিয়েছে সংগঠনটি।
অপরদিকে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মোঃ মসিউর রহমান রাঙ্গা রাজধানীসহ সারা দেশে আরো বিষমুক্ত দেশী ফলের বাজার চালু করার আহবান করেছেন। একই সঙ্গে সেবাধর্মী এ কর্মকা-ে রাজধানীবাসীসহ সকলের সহায়তার কথা জানিয়েছেন। 
গতকাল আগারগাঁও হলিডে মার্কেটে ফরমালিন ও কেমিকেলমুক্ত সাশ্রয়ী মূল্যের মৌসুমী ফলের বাজারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে তিনি এ আহবান জানান। সমবায় অধিদপ্তরের সমবায় বাজার কনসোর্টিয়াম লিঃ-এর সদস্যদের উদ্যোগে রাজধানীবাসীর জন্য এই মৌসুমী ফলের বাজার চালু করা হয়। প্রতিমন্ত্রী এই বাজার থেকে ফরমালিনমুক্ত ফল ক্রয় করেন। অতিরিক্ত সমবায় নিবন্ধক সর্দার মোঃ জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সমবায় নিবন্ধক মোঃ হুমায়ুন খালিদ, কনসোর্টিয়ামের সহ-সভাপতি নাজমুল আলম ভূঁইয়া জুয়েল ও পরিচালক রবিউল ইসলাম। 
মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক আগ্রহে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় অধিদপ্তর জনকল্যাণে কনসোর্টিয়ামটি গঠন করায় দেশের সমবায়ীদের জীবনমান উন্নয়ন ঘটছে। এ বাজারে রাজশাহী ও চাঁপাই নবাবগঞ্জের সমবায় সমিতির সদস্যদের বাগান থেকে বিভিন্ন জাতের দেশী আম, দিনাজপুর হতে সুস্বাদু বোম্বাই লিচুর সমারোহ ঘটেছে। বাজারটিতে সমবায় অধিদপ্তর ও বিএসটিআই সার্বিক সহায়তা করছে। 
এ সময় বিএসটিআই’র একটি প্রতিনিধি দল ওই বাজারের ফলে কেমিকেল আছে কিনা তা পরীক্ষা করেন। তবে, ওই সময়ে এই বাজারে কোন ফলে ফরমালিন বা অন্য কোন কেমিকেলের আধিক্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন বিএসটিআই’র সহকারী পরিচালক মোঃ রিয়াজুল হক। একই সঙ্গে রাত থেকে তাদের অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি। 
উল্লেখ্য, সমবায় অধিদপ্তর দেশের নিত্যপণ্য সামগ্রীর বাজার স্থিতিশীল ও ভোক্তা-উৎপাদক স্বার্থ রক্ষায় সমবায় বাজার কনসোর্টিয়াম লিমিটেড গঠন করে। এ সংগঠন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষি সমবায়ীদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি ক্রয় করে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে সমবায় বাজারে বিপণনের মাধ্যমে মুনাফালোভী মধ্যস্বত্ব ভোগীদের সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে শুরু করেছে। এতে করে ভোক্তা সাধারণ ও উৎপাদকগণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকৃত হচ্ছেন।
সূত্র - দৈনিক ইনকিলাব।

Monday, June 9, 2014

ফলে বিষ ভীতি

ফলে বিষ ভীতি

হাসান সোহেল ও সায়ীদ আবদুল মালিক : বিষ মেশানো ফলে সয়লাব বাজার। ক্রেতারা ভয়ে মৌসুমী এসব ফল কিনতে সাহস পাচ্ছে না। আবার  অনেকেই বাজার থেকে কেনা এসব ফল খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। রয়েছে মৃত্যু ঝুঁকিও। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ, বাঙ্গি, আনারসসহ বিভিন্ন ফলে মেশানো হচ্ছে মরণঘাতী এই কেমিক্যলি। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত ফরমালিন মেশানো ফলের বাজারে অভিযান চালালেও তা একেবারেই লোক দেখানো। এদের বিরুদ্ধে নেয়া হচ্ছে না কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। 
এদিকে, নজরকাড়া রঙে বাজারে রয়েছে হরেকরকম ফল। এসব ফলের রং টকটকে লাল কিংবা গাঢ় হলুদ। মৌ মৌ গন্ধ। দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। ক্রেতারা আকৃষ্ট হয়ে বেশি দাম দিয়েও এসব ফল ক্রয় করছেন। বাহারি রংয়ের এই ফল গাছ পাকা নয়। এ ফলে মাছি কিংবা মৌমাছি কোনটাই বসতে দেখা যায় না। চোখে পড়ে না, দেখা মেলে না পিঁপড়ারও। এর কারণ এসব ফল কার্বাইড ও ফরমালিন মিশ্রিত। কেমিক্যাল নামে বিষ মিশিয়ে এই ফল বিক্রি হচ্ছে সারা দেশের শহর, বন্দর, গ্রাম, গঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। শুধুমাত্র ফলের পচন এড়াতে মেশানো হচ্ছে মানবদেহে ক্যান্সারবাহী এই বিষাক্ত কেমিক্যাল। আর বিষ মেশানো এসব ফল খাচ্ছে দেশের কয়েক কোটি মানুষ। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের সামনেই চলছে এই বিষ মেশানোর কাজ। কিন্তু কারোরই নেই সেদিকে নজর। সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে এইসব ফল খাওয়া এবং ক্রয় নিয়ে ভীতি বিরাজ করছে। অনেক ক্রেতা ভালো-মন্দ বিচার না করতে পেরে ক্রয় করছেন এসব মৌসুমী ফল। খেয়ে ভুগছেন বিভিন্ন অসুখে। রাজধানীর প্রতিটি বাজারে বিক্রি হচ্ছে এসব কেমিক্যাল মিশ্রিত ফল। এমনকি ফরমালিন মুক্ত সাইনবোর্ড টানিয়ে মৌসুমী ফল বিক্রি হচ্ছে তাও কতটুকু ফরমালিনমুক্ত এ নিয়েও প্রশ্ন জনমনে। কারণ এ ধরনের মুক্ত বাজারেও মিলছে বিষাক্ত এ বিষ মিশ্রিত ফলের সমারোহ। তাই এ ধরনের বাজারগুলোতে শোভা পাওয়া ফলগুলো ভেজালুমক্ত কি না সে ব্যাপারে কোনো দিকনির্দেশনা নেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসটিআই’র। এছাড়া যারা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন তারাও এই বিষ খাচ্ছেন। তারপরও নেয়া হচ্ছে না কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের দু’একটা অভিযান দেখা গেলেও তা শুধুমাত্র লোক দেখানো। 
এদিকে সামনে রমাজন মাস। রমজানে এসব ফলের কদর বেশি। এই মাসেই মুসলমানরা প্রতিদিন ইফতারির সময়ে রকমারি ফল দিয়ে তাদের রমজানের ক্লান্তি দূর করেন। কিন্তু এসব ফলে ফরমালিনের অধিক্য থাকায় উদ্বিগ্ন দেশের মুসলমানরা। সরকার ২ বছর আগে ফরমালিন আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করলেও ফরমালিন নামের বিষের ভয়াবহতা কমেনি। এর আগেও হাইকোর্ট থেকে এ বিষয়ে কয়েকদফা নির্দেশনা থাকলেও কোনো কাজ হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসটিআই-এর একটি সূত্র জানিয়েছে, জনবল সঙ্কটের কারণে তাদের অভিযান চালানোয় সমস্যা হচ্ছে। জনবল কিছুটা বাড়ানো হলেও এখনো পর্যাপ্ত  নয়। তাই কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে এ ধরনের অভিযান চালানো সহজ নয়। যদিও গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার বেনজির আহমেদ কিছুটা আশার বাণী শুনিয়েছেন। তিনি জানান, আগামী বুধবার থেকে রাজধানীর আটটি প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান চালাবে পুলিশ। মাত্রাতিরিক্ত ফরমালিনের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেই ঘটনাস্থলে ফল ধ্বংস করা হবে। অপরদিকে গতকাল সংসদে ফরমালিনের ব্যবহার ঠেকাতে এ বিষয়ক আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। 
সংসদ অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ফরমালিন থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যায় সেসব বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আইন সংশোধন করে কঠোর সাজার সংশোধনী প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সংসদের চলতি অধিবেশনেই সংশোধিত আইনটি পাস হবে। এছাড়া সম্প্রতি এফবিসিসিআই’র এক আলোচনা সভায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত ফরমালিন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইনে মন্ত্রিসভা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় যাবে। এরপর আইনটি সংসদে যাবে। সংসদের আগামী বাজেট অধিবেশনে  ফরমালিন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন পাসের উদ্যোগ নেয়া হবে। 
বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্যদ্রব্যে রাসায়নিক এই পদার্থ (বিষ) ব্যবহারে ক্যান্সার, প্যারালাইসিস, কিডনির রোগ, লিভার সিরোসিস এবং নানা মরণব্যাধিতে আক্রান্তের হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। একই সঙ্গে ভেজাল এই ফলমূল খেয়ে দিন দিন শিশুদের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া গর্ভবতী মেয়েদের ক্ষেত্রেও মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। সন্তান প্রসবের সময় জটিলতা, বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে, প্রতিবন্ধী শিশুরও জন্ম হতে পারে। এ  থেকে প্রতিকার পেতে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। বাজারে ফলমূল দেখে-শুনে কিনতে হবে। 
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন ফলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, অভিজাত সুপার শপ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তের ফলের দোকান কিংবা নিম্নবিত্তের ফুটপাত বাজার সবখানেই এই বিষাক্ত ফলের সমারোহ। কেমিক্যালে পাকানো কলা অথবা হিট দেয়া বেলের সাথে আছে বিষাক্ত পেয়ারাসহ হরেক ফল। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাগান থেকে অপরিপক্ব ফল পেড়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে তা ঢাকায় পাঠাচ্ছেন। বর্তমানে বাজারে রাজশাহী, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম ও লিচু বলে যা বিক্রি হচ্ছে তার সবই কার্বাইডে পাকানো বলে স্বীকার করেছেন ওই অঞ্চলের একাধিক ফলের আড়তদাররা। 
রাজশাহীর শাল বাগান এলাকার পাইকারি ফল ব্যবসায়ী ফরিদ আহমেদ জানান, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাগানগুলোতে এখনো আম পাকতে শুরু করেনি। স্বাভাবিকভাবে আম পাকতে আরো অন্তত ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগবে। তিনি বলেন, ঢাকার অসৎ ব্যবসায়ীরা অগ্রিম টাকা দিয়ে গাছ থেকে চাষিদের দিয়ে অপরিপক্ব আম পেড়ে কার্বাইড দিয়ে ঢাকা নিয়ে যাচ্ছেন। যা ঢাকা পৌঁছেতে গিয়ে পেকে হলুদ বর্ণ ধারণ করছে। ফরিদ আহমেদ আরো জানান, এখানকার গাছ পাকা আম কখনো এতোটা হলুদ হয় না, যতটা ঢাকার দোকানে শোভা পায়। লিচু সম্পর্কে তিনি বলেন, খরায় এবার লিচুর ফলন কম। অতিরিক্ত তাপে লিচু পাকার আগেই গাছে ফেটে নষ্ট হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে স্থানীয় জাতের গুটি লিচু উঠলেও তা এখন শেষ পর্যায়ে। ৪/৫ দিন হলো বোম্বাই জাতের লিচু বাজারে আসলেও তার পরিমাণ কম। বেশির ভাগ লিচুই ফরমালিন ও বিষ দিয়ে বাগান থেকে ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, মার্কেটগুলোতে ভেজাল আম মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বাজারে আসে। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায় জুন মাসের ১ তারিখ থেকে। কিন্তু অভিযানের মধ্যেও দেখা যায় ফরমালিনমুক্ত ফলের মার্কেটেও ফরমালিনযুক্ত ফল। অভিযানের কারণে তাৎক্ষণিক কিছুটা ফরমালিনের আধিক্য কমলেও অভিযানের পরপরই আবার মার্কেগুলোতে বিক্রি হচ্ছে কেমিকেলযুক্ত বিষাক্ত বিভিন্ন ফল। এছাড়া অভিযান চলাকালীন কয়েকদিন এসব বাজারে বিক্রি বন্ধ থাকলেও কিছু দিন পর আবার বিক্রি চলে পুরোদমে। 
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কার্বাইড মেশানো আম দেখতে অনেকটাই চাকচিক্য এবং ন্যাচারাল কালার হবে। এর গায়ের রং হবে চকচকে। দেখে বোঝার উপায় নেই এ আমে কেমিক্যাল মেশানো হয়েছে। বিষাক্ত কার্বাইড মেশানো আম নাকের কাছে ধরলে আসল গন্ধ পাওয়া যাবে না। খেয়েও পাওয়া যাবে না এর আসল স্বাদ। তাদের মতে, বিষাক্ত এসব আম চেনার অন্যতম উপায় হলো ২/৩ দিনের মধ্যে এ আমের চামড়া শুকিয়ে যাবে। কার্বাইডমুক্ত আম শুকালে সুঘ্রাণ পাওয়া যাবে। এ আমের খোসা অপেক্ষাকৃত সবুজ হবে। রাজশাহীর হিমসাগর, ল্যাংড়া বা ফজলি আমের খোসা সবুজ না হলে বুঝতে হবে, তাতে কার্বাইড মেশানো হয়েছে। 
পল্টন বায়তুল মোকাররমের উল্টো পাশের ব্যবসায়ী আকমল হোসেন জানান, ফলে ফরমালিন আছে কি না বলতে পারবো না। আমরা আড়ত থেকে আনি, তারা ভালো বলতে পারবেন। ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন জানান, আম প্রথমে রাজশাহী আসে। রাজশাহী থেকে ধাপে ধাপে বিক্রি পর্যন্ত সপ্তাহ চলে যায়, মাঝখানের এই সময় আম টিকিয়ে রাখতে অনেক সময় মেডিসিন দেয়া হতে পারে।
পলাশী বাজারে একটি ফলের দোকান থেকে আম কিনছিলেন মোহাম্মদ শাহজাহান। ফরমালিনমুক্ত আম কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, এই আম কেনা ছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই। তিনি বলেন, মৌসুমী ফল বাজারে এসেছে তাই কিনতে হচ্ছে। পরিবারের সবাই আম খেতে চাইছে তাই কিনেছি। এখন এসব ফলে ভেজাল আছে কী না তা বের করা সরকারের দায়িত্ব। কেমিক্যাল দিয়ে নাকি কেমিক্যাল ছাড়া আম পাকানো হয়েছে, তা তো আর আমরা বুঝতে পারি না। বিক্রেতাদের কথা বিশ্বাস করে আম কিনতে হচ্ছে। 
মালিবাগে ফল কিনতে আসা গৃহিণী তানিয়া আক্তার বলেন, ফলে ফরমালিন থাকবে এ আর নতুন কি? জেনে শুনেই বাৎসরিক এ মৌসুমী ফলের নামে বিষ কিনে নিয়ে যাচ্ছি। ভালো ফল পাবার নির্ভরতা কোথায়? তিনি অভিযোগ করে বলেন, কোনো আইন বা উদ্যোগ ফরমালিন বন্ধ করতে পারছে না। সাজানো গোছানো মৌসুমী ফলের নামে বিষ বিক্রি হচ্ছে। আমরা বাধ্য হয়ে এ ফল কিনছি, তাও আবার চড়া দামে। এ ক্ষেত্রে সরকারের যেন কিছুই করার নেই। আর আইন হলেও তাতো আর দেশে বাস্তবায়ন হয় না। 
ধানমন্ডি ক্লাব, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের মাঠ, মালিবাগ, পল্টন, গুলিস্তান, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ি, শনিরআখরা, ফার্মগেটসহ নগরীর বিভিন্ন জায়গায় চলছে এখন কার্বাইডমুক্ত আমের মেলা। আয়োজক ও বিক্রেতারা অবশ্য এ মেলায় জোর গলায় বলছে, তাদের এখানে বিক্রি হওয়া আম শতভাগ কার্বাইডমুক্ত আর বাইরে বিক্রি হওয়া আম কার্বাইডযুক্ত। অবশ্য বাইরের বিভিন্ন দোকানিরা এটা মানতে নারাজ। তারা জানান, মেলায় কিছু কিছু আমে কার্বাইড দেয়া হয়। যাত্রাবাড়ী ও কারওয়ান বাজার আমের আড়তে গিয়ে পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকায় আসা বেশির ভাগ আমেই কার্বাইড মেশানো হয়। তবে কার্বাইড গাছ থেকে পেড়েই স্প্রে করে দেয়া হয়। এতে ঢাকায় আসতে আসতে আম পেকে যায়। আবার কাঁচা আম ঢাকায় এনেও ক্ষতিকর কার্বাইড দিয়ে পাকানো হয়। দু-একজন ব্যবসায়ী অস্বীকার করলেও বেশির ভাগ ব্যবসায়ী ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে আমে কার্বাইড মেশানোর স্বীকারোক্তি পাওয়া গেছে। এমনকি গতকালও রাজধানীর কলাবাগান এবং ধানমন্ডি মাঠের পাশে ফরমালিনমুক্ত ফলের দোকান থেকে আমসহ বিভিন্ন ধরনের ফরমালিনযুক্ত ফল ধ্বংস করা হয়েছে। 
এদিকে মৌসুমী ফলের অন্যতম আকর্ষণ লিচু বাজারে এসেছে পুরোদমে। দেশের সর্বত্র এখন পাকা লিচুতে ভরপুর। বাজারের আসা লিচুর ওপরের রং এবং দেখতে তাজা হলেও ভেতরে পরিপক্বতার কারণে তার স্বাদ ও গন্ধ কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবেই দেশের মানুষ বাজার থেকে ফল কিনে প্রতারিত হচ্ছেন অহরহ। আর এসব পাকা লোভনীয় লিচু ক্রেতা কিনে নিয়ে তার সাথে যে বিষও কিনে নিয়ে যাচ্ছে তাও তারা বুঝতে পারছে না।
বাজারের এসব লোভনীয় লিচু গাছে পাকার আগেই যাতে বাড়তি রঙে রঙিন হয়ে ওঠে সে কারণে গাছে বিষাক্ত রাসায়নিক কার্বাইড দিয়ে স্প্রে করা হয় আর যা মানুষের দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। মেলায় কিংবা বাজারের আমগুলোয় ভেজালবিরোধী অভিযান চালানো হবে কি না জানতে চাইলে বাংলাদেশ স্টান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) সহকারী পরিচালক রিয়াজুল হক বলেন, বাজার ও আমের আড়তে গত ৮দিন ধরে আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। 
সম্প্রতি অবাধে ফলসহ খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন মেশানো ও বিক্রি করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। ফলমূল ও খাদ্যদ্রব্যে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ফরমালিন মেশানো, অপব্যবহার, অবাধে বিক্রি বন্ধ করতে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ারও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। ফরমালিন আমদানি নিষিদ্ধসহ এর অপব্যবহারের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে আইন প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছে এফবিসিসিআই। 
জানা যায়, সরকার প্রায় দুই বছর পূর্বে ফরমালিন আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করলেও ফরমালিন নামের বিষের ভয়াবহতা কমেনি। এর আগেও হাইকোর্ট থেকে এ বিষয়ে কয়েকদফা নির্দেশনা থাকলেও কোনো কাজ হয়নি। এদিকে গত বছরের ১ জুলাই মন্ত্রিপরিষদের সভায় ‘নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩’ এর খসড়ায় খাদ্যে ভেজাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর দায়ে সাত বছর কারাদ-ের বিধান রেখে আইন করার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে সাজার মেয়াদ বেড়ে দ্বিগুণ হবে, অর্থাৎ ১৪ বছর। যদিও এই আইনের বাস্তবায়ন কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। 
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ফল পাকাতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড বা ইথোফেনের মতো বিষাক্ত জিনিসের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। একই সঙ্গে ফলকে আকর্ষণীয় করতে ব্যবহার করা হচ্ছে  কেমিক্যাল জাতীয় রং। আর পচনরোধে স্প্রে করা হয় ফরমালিন। ফলে এখন আর কোনো ফল পচে না। মাসের পর মাস আঙ্গুর থোকায় থোকায় ঝুলে থাকে দোকানে। নির্ধারিত লাভ ছাড়া বিক্রি না হলে ক্ষতি নেই। আম, কলা, নাসপাতি, আপেল, কমলা এমনকি কাঁচাবাজারের টমেটোও শক্ত হয়ে থাকে দিনের পর দিন।
একটি বেসরকারি পরিবেশবাদী সংগঠন ‘পরিবেশ বাঁচাও’ আন্দোলনের সরেজমিন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব ভীতিকর তথ্য। তাদের মতে, নগরীতে বিক্রি হওয়া আমের শতকরা ৯৪ ভাগই ফরমালিনযুক্ত। শুধু আম কেন? জাম ও লিচুতেও ফরমালিনের উপস্থিতি শতভাগ। এছাড়া মালটা, আপেল, আঙুর, কমলা, টমেটো, তরল দুধ ও মাছেও ফরমালিনের উপস্থিতি রয়েছে। 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, ফরমালিনের কারণে লিভারে হেপাটাইটিস ও লিভার পচন বা সিরোসিস হতে পারে। এ ছাড়া অ্যালার্জিক সমস্যা হতে পারে। কার্বাইড মেশানো ফল খেলে বাচ্চা ও গর্ভবতী মায়েদের বেশি ক্ষতি হয়।
এক সময়ে ভেজালবিরোধী অভিযানে সাড়া জাগানো ম্যাজিস্ট্রেট রোকন উদ-দৌলা সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, জনসচেতনতা মূলত সৃষ্টি করেছে দেশের গণমাধ্যম। মিডিয়ার কারণেই মানুষ সচেতন হয়েছে। এর পেছনে মিডিয়ার অবদানের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। তাহলে মানুষ আরো সচেতন হবে। পাশাপাশি জনগণকে সরকারি কর্মকর্তাদের কাজে সহযোগিতা করতে হবে। ভেজালবিরোধী অভিযান ঝিমিয়ে পড়া সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশ, জনগণ ও জাতির স্বার্থে ভেজালবিরোধী অভিযানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। পাশাপাশি সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। 
বিএসটিআই’র মহাপরিচালক ইকরামুল হক বলেন, বাজারে বিষাক্ত কেমিক্যাল যুক্ত মৌসুমী ফল যেন না ঢুকতে পারে সে জন্য আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের ১২ জন অফিসার প্রতিদিন নিরলসভাবে এ কাজটি করে যাচ্ছে। মোসুমী ফলের মৌসুমে তাদের অন্য কাজ থেকে এনে এ কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, শুধু মাত্র মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জেল, জরিমানা ও লাইসেন্স বাতিল করলেই এ কাজ থেকে তাদের বিরত রাখা যাবে না। তাই জনগণের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তাহলে এ নীতিগর্হিত কাজটি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করেন। 
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবুল হোসেন মিঞা বলেন, ফরমালিন যুক্ত ফল প্রতিরোধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। মহানগরসহ বিভাগ, জেলা ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকায় বাজার মনিটরিং কার্যক্রমও অব্যাহত আছে। একই সঙ্গে এ ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করতে প্রচারমূলক কাজও অব্যাহত রয়েছে।  
ক্যাব সভাপতি কাজী ফারুক বলেন, এ দেশে আদালতের যে হয়রানিমূলক ব্যবস্থা, তা এড়াতেই ভোক্তারা মামলার ঝামেলায় যেতে চায় না। বর্তমানে মোবাইল কোর্ট আইনের প্রয়োগের কারণে কিছুটা অগ্রগতি ঘটলেও জনসচেতনতা তৈরিতে আরো সময় লাগবে। একই সঙ্গে আমলাতন্ত্রের একটি অংশ ফরমালিন ব্যবহারের পক্ষে ভূমিকা রাখছেন বলেও উল্লেখ করেন।
অপরদিকে বাংলাদেশ স্টান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) সহকারী পরিচালক রিয়াজুল হক বলেন, বাজারে আসা মৌসুমী ফলে ভেজাল ধরতে মাঠে ভ্রাম্যমাণ আদালত নামানো হয়েছে। রাজধানীর নানা স্থানে অভিযান চালিয়ে কেমিক্যাল মেশানোর দায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে প্রচুর আমসহ নানা মৌসুমী ফল ধ্বংস ও জেল-জরিমানা করা হয়েছে। 
অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভেজালবিরোধী অভিযান এ মাস চলবে। নিয়মিত অভিযান ছাড়াও যখনই খবর পাই তখনই আমরা মাঠে নামবো। একই সঙ্গে আসন্ন রমজান মাসকে নিয়ে বিএসটিআই’র বিশেষ অভিযান চলবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
-সুত্র - দৈনিক ইনকিলাব।

Saturday, June 7, 2014

খাবার মানেই বিষের ভয়


খাবার মানেই বিষের ভয়

খাদ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক ভেজাল নিয়ে দেশজুড়ে ঘরে-বাইরে, জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-আতঙ্কের শেষ নেই অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে- বেঁচে থাকার জন্য প্রধান মৌলিক চাহিদা যে খাদ্য- সেই খাদ্য সামনে নিয়ে বসলে প্রথমেই মনে প্রশ্ন জাগে- ভেজাল নেই তো! বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানো না তো! কিন্তু কিছু করার নেই। এ রকম ভয়ের মধ্যেই চলছে আমাদের খাওয়া-দাওয়া। পরিণতিতে শরীরে বাসা বাঁধছে জটিল রোগ-বালাই; ঘটছে মৃত্যু পর্যন্ত।



বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নানাভাবে খাদ্যে ভেজাল বা বিষাক্ত রাসায়নিকের প্রবেশ ঘটে। সামান্য কিছুটা প্রাকৃতিকভাবে হলেও বেশির ভাগই হয়ে থাকে অসচেতন কৃষক আর স্বার্থান্বেষী, অতি মুনাফালোভী, অসাধু ব্যবসায়ীর মাধ্যমে। এর মধ্যে কিছু বিষাক্ত রাসায়নিক কৃষিতে ব্যবহারের ফলে পানি, মাটি বা গাছ হয়ে খাদ্যশস্যের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে; আবার কিছু রাসায়নিক একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সরাসরি বিভিন্ন ফল, শাকসবজি, মাছ-মাংস-দুধ, মসলাসহ নানা খাদ্যে ভেজাল, আকর্ষণী বা মুনাফাবর্ধক উপাদান হিসেবে প্রয়োগ করে থাকে।
খাবার মানেই বিষের ভয়
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত খাদ্য নিরাপত্তা গবেষণাগারে সম্প্রতি দেশি-বিদেশি একদল গবেষক ৮২টি খাদ্যপণ্য নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী, গুলশান এলাকাসহ আরো বেশ কিছু বড় বড় বাজার থেকে এসব খাদ্যের নমুনা (স্যাম্পল) সংগ্রহ করা হয়। এতে গড়ে ৪০ শতাংশ খাদ্যেই মানবদেহের জন্য সহনীয় মাত্রার চেয়ে ৩ থেকে ২০ গুণ বেশি বিষাক্ত উপাদান শনাক্ত হয়।
ওই গবেষণার ফলাফল অনুসারে ৩৫ শতাংশ ফল ও ৫০ শতাংশ শাকসবজির নমুনাতেই বিষাক্ত বিভিন্ন কীটনাশকের উপস্থিতি মিলেছে। এ ছাড়া আম ও মাছের ৬৬টি নমুনায় পাওয়া গেছে ফরমালিন। চালের ১৩টি নমুনায় মিলেছে মাত্রাতিরিক্ত বিষক্রিয়া সম্পন্ন আর্সেনিক, পাঁচটি নমুনায় পাওয়া গেছে ক্রোমিয়াম। হলুদের গুঁড়ার ৩০টি নমুনায় ছিল সীসা ও অন্যান্য ধাতু। লবণেও সহনীয় মাত্রার চেয়ে ২০-৫০ গুণ বেশি সীসা পাওয়া গেছে। মুরগির মাংস ও মাছে পাওয়া গেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর এন্টিবায়োটিকের অস্তিত্ব। এ ছাড়া চারটি প্যাকেটজাত জুসের নমুনায় পাওয়া গেছে বেঞ্জয়িক এসিড, যা স্বাস্ব্যহানিকর।
'ইম্প্রুভিং ফুড সেফটি অব বাংলাদেশ' প্রকল্পের সিনিয়র ন্যাশনাল অ্যাডভাইজার অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সারা দেশের পরিস্থিতি এখনো আমরা দেখতে পারিনি। তবে ঢাকায় আমরা গবেষণার মাধ্যমে যে ভয়াবহ চিত্র পেয়েছি তা সরকারের কাছে উপস্থাপন করেছি। এখন এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করার দায়িত্ব সরকারের।'
গবেষক দলের সূত্র জানায়, যখন এ গবেষণা হয়, তখন বাজারে দেশীয় মৌসুমি ফল ছিল না। তাই ওই সময় প্রাপ্ত ফলের মধ্যে আপেল ও আঙ্গুরে সবচেয়ে বেশি বিষাক্ত রাসায়নিক পাওয়া গেছে। তবে তখনো বাজারে থাকা কিছু আমে ক্ষতিকর রাসায়নিক পাওয়া গিয়েছিল। ব্রয়লার মুরগি ও চাষ করা মাছের মধ্যে রুই-কাতল জাতীয় মাছে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ফরমালিন ছিল বিভিন্ন মাছে। শুঁটকিতেও মিলেছে বিষাক্ত রাসায়নিক। এ ছাড়া হলুদ ও লবনে সীসাসহ আরো কিছু ধাতব উপাদান প্রয়োগের মাধ্যমে এগুলো চকচকে ও ভারী করা হয়।
প্রবীণ চিকিৎসক ও জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুল মালিক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা এখন কিছুই যেন নির্ভয়ে-নিশ্চিন্তে খেতে পারছি না। বাজার থেকে কিছু কিনতে গিয়েই থমকে দাঁড়াতে হয়, দ্রব্যটি নিরাপদ না বিষযুক্ত- সেই চিন্তায়। এমনটা তো চলতে পারে না! তাই মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবন রক্ষায় দেশে এখন এক নম্বর ইস্যু হওয়া দরকার নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি। খাদ্যই যদি নিরাপদ না হয়ে বিষযুক্ত হয়, তবে মানুষ বাঁচবে কী করে?'
এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, বিষয়টি নিয়ে মানুষের মধ্যে সর্বজনীন উৎকণ্ঠা-আতঙ্ক থাকলেও পরিস্থিতি রোধে সমষ্টিগত কোনো উদ্যোগ নেই। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে নানা ইস্যুতে আন্দোলন হলেও সবচেয়ে বড় এই ইস্যুকে সামনে নিয়ে কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক সংগঠনও এগিয়ে আসছে না। ফলে রাষ্ট্রের আইন ও আদালতের নির্দেশনাও আশানুরূপ সুফল বয়ে আনছে না। রাষ্ট্র বা সরকারের একার পক্ষে এ অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। দরকার দলমত নির্বিশেষে এই ইস্যুকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা।
প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক এ বিষয়ে নিজের মত প্রকাশ করে বলেন, রাষ্ট্র বা সরকার আইন করলেও মানুষ অনেক সময়ই তা মানে না। এ ক্ষেত্রে কেবল সরকারকে দুষলেই হবে না, মানুষের সচেতনতা খুবই জরুরি। পাশাপাশি আইনের সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে কি না তা-ও দেখতে হবে।
রফিক-উল হক উদারহণ দিয়ে বলেন, 'খুন করলে ফাঁসি হতে পারে, সবাই জানে। তার পরও তো সমাজে খুন বন্ধ হচ্ছে না। আমরা তো দেখছি মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে, অনেক ফল-সবজি-মাছ নষ্ট করা হচ্ছে, তার পরও তো একই অবস্থা আবার চলে।'
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ফল-ফসলের মাধ্যমে মানুষের শরীরে বিষাক্ত রাসায়নিক ছড়ানোর দায় কৃষি বিভাগের। কারণ কৃষিতে কী ধরনের কীটনাশক-বালাইনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে তা দেখভালের দায়িত্ব তাদের। এ ক্ষেত্রে তাদের আইন আছে, কর্তৃপক্ষ আছে। যদি ওই আইনের আওতায় নিয়মমাফিক কীটনাশক-বালাইনাশক কিংবা সার প্রয়োগ করা না হয়, যদি এসবের যথেচ্ছ ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে তাহলে এ বিষয়ে তাদের দিক থেকেই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
এদিকে কেবল 'ইম্প্রুভিং ফুড সেফটি অব বাংলাদেশ' প্রকল্পের মাধ্যমেই নয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে এর আগে ২০১২ সালে পাঁচ হাজার ৩১২টি খাবারের নমুনা পরীক্ষা করে এর মধ্যে দুই হাজার ৫৫৮টিতেই বা ৪৯ শতাংশে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক বা ভেজালকারী উপাদান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন গবেষণায়ও মাঝেমধ্যে বিভিন্ন খাদে বিষাক্ত রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
মৎস্য সম্পদ অধিদপ্তরের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে মাছে ব্যবহৃত কীটনাশকের মধ্যে ৬০ শতাংশ চরম বিষাক্ত, ৩০ শতাংশ অপেক্ষাকৃত কম বিষাক্ত এবং মাত্র ১০ শতাংশ বিষাক্ত নয়। আর কৃষিজমিতে ব্যবহৃত কীটনাশকের প্রায় ২৫ শতাংশই জমিসংলগ্ন জলাশয়ের পানিতে মেশে। এ ছাড়া ওই কীটনাশক প্রয়োগের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি বা উপকরণ পরিষ্কার করতে গিয়ে আরো কিছু কীটনাশক পুকুর বা নালার পানিতে চলে যায়। এতে একদিকে যেমন সরাসরি মাছ ও মাছের ডিমের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে, অন্যদিকে পানিতে থাকা মাছের খাদ্য ফাইটোপ্লাংকটন (উদ্ভিদকণা) ও জুপ্লাংকটন (প্রাণিকণা) তাৎক্ষণিক মরে যায়। ফলে জলজ প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়, মাছের খাদ্য নষ্ট হয়, পানি নষ্ট হয়। আবার মাছ থেকে তা মানবদেহে চলে যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান- আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহামুদুর রহমান বলেন, ডিডিটি, অ্যালড্রিন, ক্রোমিয়াম, কার্বামেট, আর্সেনিক, সীসা- সবই মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশেষ করে খাদ্যজাত কৃষিতে কীটনাশকের ব্যাপক অপপ্রয়োগ এখন দেশের জনস্বাস্থ্যকে বিশাল ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। অন্তত কৃষিপণ্যকে কীটনাশক থেকে রক্ষা করা গেলে মানুষ অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত হতে পারে।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, কেবল এবারকার গবেষণায়ই নয়, এর আগেও আইইডিসিআরসহ বিভিন্ন গবেষণায় বাংলাদেশে বিভিন্ন খাদ্যে বিষাক্ত দ্রব্য প্রয়োগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। তিনি জানান, খাদ্যে যেসব রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া যায়, তাতে পাকস্থলী, কিডনি ও লিভারের রোগ এবং ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার 'ইম্প্রুভিং ফুড সেফটি অব বাংলাদেশ' কার্যক্রমের সিনিয়র ন্যাশনাল অ্যাডভাইজার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সবাই চায় নিরাপদ খাদ্য। কিন্তু এটা নিয়ে এত দিন তেমন কোনো কাজ ছিল না। এ ক্ষেত্রে যেসব সিস্টেম বিদ্যমান, তাও দুর্বল। রাজনৈতিক বা সামাজিক অঙ্গীকারও তেমন ছিল না। তবে বর্তমান সরকারের দিক থেকে নিরাপদ খাদ্যের ব্যাপারে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট আছে বলেই নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ করা হয়েছে। এখন এই আইনের আওতায় বিধিমালা প্রণয়ন ও কর্র্তৃপক্ষ তৈরির মাধ্যমে আইন প্রয়োগ শুরু হলে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা করি।'

ওই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, কেবল আইনের দিকে তাকিয়ে থাকলেই হবে না। এমন ইস্যুতে জনসচেতনতাও বড় ফ্যাক্টর। তাই সামাজিকভাবে খাদ্যে ভেজাল ও বিষ প্রয়োগের বিরুদ্ধে শক্ত ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।

সুত্র দৈনিক কালের কন্ঠ

ফলের সব গুণ বিফলে

ফলের সবপুষ্টি গুণ বিফলে

পাকাতে কার্বাইড তাজা রাখতে ফরমালিন


রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
শেয়ার - মন্তব্য (0) - প্রিন্ট
রাজশাহীর একটি আড়তে আমে রাসায়নিক ছিটানো হচ্ছে।ফাইল ছবি
অ-অ+
রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জকে দেশের আমের রাজধানী বলা হয়। এই আমের রাজধানীতে রয়েছে নানা জাতের ও নামের আম। কোনোটা লাল টুকটুকে, আবার কোনোটা হলুদ বর্ণের। গোপালভোগ, রানীপ্রসাদ, মোহনভোগ, খিরসাপাত, ফজলি, লখনা, ল্যাংড়া, আম্রপালিসহ প্রতি জাতের আম হরেক স্বাদে ভরা। মোহনীয় স্বাদের এই আম কার না ভালো লাগে? কিন্তু দিন বদলে যাচ্ছে। সেই আম, বিশেষ করে বাজারে ওঠা আম ক্রমেই যেন আতঙ্কের নামে পরিণত হচ্ছে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর ছোবলে তিন-চার বছর ধরে চলছে ভেজালের কায়কারবার। গাছ থেকে নামানোর পর অপরিপক্ব আম পাকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্যালসিয়াম কার্বাইড নামের এক ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য। আবার আম পচনরোধে মেশানো
হচ্ছে ফরমালিন। অন্যদিকে গাছে থাকা অবস্থায় পোকামাকড়ের হানা থেকে আম রক্ষায় ছিটানো হয় নানা ধরনের কীটনাশক। ফলে আমের রাজধানীতেই এখন ভেজালমুক্ত আম পাওয়া দায়। শুধু আম নয়, অনেক ফলই আমের পরিণতি বরণ করছে। লিচু, কলা, পেঁপে, বরই, স্ট্রবেরি, আনারস, টমেটোসহ দেশি অনেক ফলই ভেজাল আর দূষণমুক্ত পাওয়া দায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর ফলে শরীরে ক্যান্সারসহ নানা রোগবালাইয়ের বাসা তৈরি করে। শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় সবচেয়ে বেশি।
আম : রাজশাহীর বানেশ্বর, নওহাটা, দুর্গাপুরসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে ব্যবসায়ী ও আমচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব বাজারে আম উঠতে শুরু করেছে অন্তত ২০ দিন আগে। প্রথমে লখনা আর আটি (গুঁটি) জাতীয় আম দিয়ে বাজার শুরু হয়। এরপর আসতে শুরু করে গোপালভোগ ও হিমসাগর জাতের আম। এরই মধ্যে রাজশাহীর অধিকাংশ বাগান থেকে লখনা ও গোপালভোগ বিদায় নিয়েছে। যদিও এখনই এ দুটি জাতের আমের প্রধান মৌসুম। কিন্তু তার আগেই উচ্চ মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা আম পরিপক্ব না হতেই সেগুলো বাজারজাত করেছে। আর সেই অপরিপক্ব আম পাকাতে ব্যবহার করা হয়েছে নিষিদ্ধ ক্যালসিয়াম কার্বাইড। এই আম পাঠানো হয়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে। কার্বাইড দেওয়ার ফলে কাঁচা ও অপরিপক্ব আমও সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই পেকে যায়। সেই সঙ্গে রঙে এসেছে আরো চাকচিক্য।
ব্যবসায়ী ও চাষিরা জানান, বাজারে এখন পরিপক্ব গোপালভোগ, মোহনভোগ ও খিরসাপাত (হিমসাগর) জাতসহ নানা জাতের আম নামছে। এর ফলে আম পাকানোর জন্য কার্বাইড ব্যবহারের পরিমাণ কমে গেছে। ফলে দ্রুত আম না পাকাতে ও পচনরোধে এখন মেশানো হচ্ছে ফরমালিন। এক সপ্তাহ ধরে রাজশাহীর বাজারগুলোতে নানা কায়দায় ফরমালিন মেশানো হচ্ছে আমে।
সূত্রমতে, ২০১১ সালের ২৬ মে রাজশাহীর রেঞ্জ ডিআইজিকে আমে রাসায়নিক মেশানোর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। কিন্তু তার পরও থেমে নেই অবৈধ এ প্রক্রিয়ায় আম বাজারজাতকরণ।
জানতে চাইলে ডিআইজি মীর শহিদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, 'আমে কার্বাইড মেশানোর বিরুদ্ধে কাজ করতে রাজশাহীর প্রতিটি জেলার পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের জেলায় জেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথাও বলা হয়েছে। এর পরও বিভিন্ন জায়গায় এ অবৈধ কাজ হচ্ছে বলে শুনেছি।'
রাজশাহীর বৃহত্তর আমবাজার বলে পরিচিত বানেশ্বর বাজারে গতকাল ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি মণ গোপালভোগ আম বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার ৬০০ টাকা, হিমসাগর দুই হাজার ৪০০ দুই হাজার ৮০০ টাকা, লখনা আম এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা ও আটি জাতের আম বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার টাকা থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে। অথচ গত বছর এই সময় গোপালভোগের বাজার ছিল সর্বোচ্চ এক হাজার ৮০০ টাকা, হিমসাগর দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা, লখনা এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা মণ। কিন্তু এবার শুরু থেকেই আমের বাজার গতবারের চেয়ে অনেকটা বেশি বলে পাইকারি ব্যবসায়ীরা অপরিপক্ব হলেও কার্বাইড দিয়ে বিপুল পরিমাণ আম বাজারজাত করছে। ফলে পরিপক্বতা আসার আগেই আটি, গোপালভোগ, লখনাসহ কয়েকটি জাতের আম ব্যাপক হারে বাজারজাত করায় এখন সেগুলো প্রায় শেষের দিকে।
রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে কিছুদিন ধরে চালানো অনুসন্ধানে আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, রাজশাহীর আমচাষিরা সাধারণত আমে কার্বাইড ব্যবহার করেন না। বাইরে থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী বা আমের বাগান লিজ নেওয়া ব্যবসায়ীরাই আমে কার্বাইড মিশিয়ে বাজারজাত করে চলেছেন। তাঁরা গাছ থেকে আম নামানোর সঙ্গে সঙ্গেই ক্যালসিয়াম কার্বাইড স্প্রে করছেন অথবা আমের ঝুড়িতে কার্বাইডের প্যাকেট ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। ফলে অপরিপক্ব আম হলেও মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পেকে উজ্জ্বল রং ধারণ করছে। এই রাসায়নিক প্রয়োগে আম সহজে পচে না।
বানেশ্বর বাজারের ব্যবসায়ী আসলাম আলী জানান, যেসব জাতের আম এখানো অপরিপক্ব, সেগুলো গাছ থেকে পাড়ার পরই ছিটানো হচ্ছে কার্বাইড। আবার যেগুলো পোক্ত হয়েছে, সেগুলোর পচনরোধে দেওয়া হচ্ছে ফরমালিন। সাধারণত রাজশাহীর বাইরে থেকে আসা পাইকারি অধিকাংশ ব্যবসায়ী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে আম বাজারজাত করতেই এগুলো করছেন।
দুর্গাপুরের আম ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, 'স্থানীয় ব্যবসায়ী বা আমচাষিরা আমে ফরমালিন বা কার্বাইড মেশান না। বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ীরা বা বানেশ্বর বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা এ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা কখনো নিজেদের লিজ নেওয়া বাগানে দিনের বেলা আম পাড়ার পর, আবার কখনো স্থানীয় আমচাষি বা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আম কিনে রাতের আঁধারে এগুলো করে বলে শুনেছি। না হলে এবার যে আমগুলো আগেভাগেই গাছ থেকে নামানো হয়েছে, তা পাকার কথা নয়।'
রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারের দিলসাদ আলী, হোসেন আলী, জিয়াউদ্দিনসহ আরো অনেক ব্যবসায়ী জানান, প্রতি ৫০ কেজি আম পাকাতে অন্তত ৫০ গ্রাম তরল ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করা হয়। এর ফলে উৎপন্ন তাপ ও অ্যাসিটিলিন গ্যাসের প্রভাবে আম পেকে যায় দ্রুত। এ ছাড়া আম গাছে থাকা অবস্থায় হোপার পোকা, আম ছিদ্রকারী পোকাসহ নানা ধরনের পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে, এমনকি আমের ঔজ্জ্বল্য ঠিক রাখতেও রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। সব মিলিয়ে আমের গুটি আসার পর থেকে নামানো পর্যন্ত কমপক্ষে চারবার স্প্রে করা হচ্ছে গাছে। তবে শেষবার আম পাকাতে যে কার্বাইড ও পচনরোধে যে ফরমালিন স্প্রে করা হচ্ছে, তার সঙ্গে কেবলই বাইরের আম ব্যবসায়ীরা জড়িত বলেও দাবি করেন ওই ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের রাজশাহী বিভাগীয় উপপরিচালক রেজাউল ইসলাম জানান, আমে ক্ষতিকারক রাসায়নিক মেশানো রোধে সপ্তাহে দুইবার বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে যখন অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে, তখন এ ধরনের কাজ কেউ করছে না। আবার অভিযান বন্ধ হলেই রাতের আঁধারে এগুলো করা হচ্ছে।
রেজাউল ইসলাম আরো জানান, কার্বাইড অ্যাসিটিলিন গ্যাস তৈরি করে। এ অ্যাসিটিলিন শিখা দিয়ে ঝালাইয়ের কাজ করা হয়। এটা মানবদেহে গেলে ক্যান্সারসহ নানা রোগ দেখা দিতে পারে। ফলে ব্যবহারকারী ও ভোক্তা- উভয়েই মারাত্মক ক্ষতির শিকার হতে পারে।
স্ট্রবেরি : স্ট্রবেরির রাজধানী বলে পরিচিত রাজশাহীতে গত শীত মৌসুমে প্রায় ৭০০ বিঘা জমিতে এ ফল চাষ হয়। তবে রসালো লাল টুকটুকে এ ফলটি যতটা না দেখতে সুন্দর এর চেয়েও ভয়ংকর এটি উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাত পর্যন্ত যে পরিমাণ কীটনাশক মেশানো হয়, সেটি। পাকা স্ট্রবেরি জমি থেকে সংগ্রহ করার পর এর স্থায়িত্বকাল থাকে সর্বোচ্চ ৩০ ঘণ্টা। কিন্তু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে এটি সরবরাহ করতেই লেগে যায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে কয়েক দিন। ফলে এটি নির্বিঘ্নে বাজারজাত করতে প্রয়োগ করা হয় ফরমালিন। এ ছাড়া এটি চাষ করতেও প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক স্প্রে করতে হয়। ফলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের জেলা শহরগুলোতে সরবরাহ করা পুরো স্ট্রবেরিটাই বিষে ভরা থাকে। স্ট্রবেরিচাষি মনির হোসেন বলেন, 'এই ফল চাষ করতে প্রচুর পরিমাণ কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। তা ছাড়া নরম জাতের এ ফলটি জমিতে পাকার আগেই নষ্ট হয়ে যেতে থাকে, ফরমালিন না মিশিয়ে উপায় থাকে না।'
কলা : রাজশাহীতে প্রচুর পরিমাণে কলা ও পেঁপেজাতীয় ফলেরও প্রচুর চাষ হয়। জেলার বানেশ্বর হাটেই প্রতিদিন অন্তত ৫০ লাখ টাকার কলা বেচাকেনা হয়। কলা চাষের জন্য জেলার পুঠিয়া, দুর্গাপুর, মোহনপুর, পবা, বাঘা ও চারঘাট বিখ্যাত। জমি থেকে কাঁচা কলা সংগ্রহ করে কৃষকরা ওই অবস্থায় তা বাজারজাত করেন। এরপর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা গাড়িতে ওঠানোর আগে আড়তের ভেতরেই সেগুলোতে কার্বাইড স্প্রে করেন। এতে কাঁচা কলা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পেকে হলুদ বর্ণের হয়ে যায়।
বরই-পেয়ারা-পেঁপে-লিচুতেও রাসায়নিক : বরই, পেয়ারা, পেঁপে ও লিচু চাষেও ব্যবহৃত হচ্ছে ক্ষতিকারক কীটনাশক। এসব ফল সাধারণত গাছে থাকা অবস্থায় পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। তবে ইদানীং গাছ থেকে নামানোর পর পেঁপে পাকাতেও কার্বাইড ব্যবহার করা হচ্ছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অন্যদিকে লিচু লাল টকেটকে রং ও আকার বড় করার জন্য এক ধরনের হরমোন ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে পাঠানোর সময় কখনো কখনো ফরমালিন ব্যবহার করা হয়। যদিও লিচুতে ফরমালিনের ব্যবহার বাড়েনি বলে দাবি করেছেন রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ড. আব্দুস সোবহান বলেন, 'হরমোন, কার্বাইড দিয়ে বিভিন্ন ফল পাকানো হলে সেগুলো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এগুলোর পরিমাণ অতিরিক্ত হলেই মানবদেহের জন্য ভয়ংকর হতে পারে। এ ক্ষেত্রে চোখের ক্ষতি হতে পারে, হৃদযন্ত্রের সমস্যা দেখা দিতে পারে, কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে ক্যান্সারসহ মানুষের প্রজনন ক্ষমতাও নষ্ট হতে পারে। আবার গর্ভকালীন অবস্থায় হরমোন প্রয়োগ করা ফল খেলে পেটের সন্তানও নষ্ট হতে পারে।'
টমেটো : রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে প্রতি শীত মৌসুমে অন্তত আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন টমেটো চাষ করা হয়। এই টমেটো শীতকালে হয় বলে এগুলো পোক্ত হলেও সহজে পাকে না। ফলে টমেটো পাকাতে এক ধরনের রাসায়নিক হরমোন ব্যবহার করা হয়, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন। হরমোন দিয়ে পাকানো লাল টকটকে রঙের টমেটো প্যাকেটজাত করে পাঠানো হয় ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। ওই সময় প্রতিদিন গোদাগাড়ী থেকে শত শত টন টমেটো যায় বিভিন্ন স্থানে।
গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী এলাকার টমেটোচাষি মুনসুর রহমান বলেন, 'অতিরিক্ত শীতের কারণে টমেটো পাকতে দেরি হয়। কাজেই কাঁচা টমেটো জমি থেকে তুলে এনে সেগুলোতে হরমোন মিশিয়ে পাকাতে হয়। হরমোন না মেশালে টমেটো ১৫ দিনেও পাকে না।'
মধুপুরে আনারসে বিষ প্রয়োগ : টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, আনারসচাষিদের ভাষ্য, অগ্রহায়ণ, পৌষ ও মাঘ মাসে মূলত আনারসের চারা রোপণ করা হয়। চৈত্র, বৈশাখ মাসেও রোপণ করা যায়। গাছ বেড়ে পরিপক্ব হলে প্রথম কেমিক্যাল প্রয়োগ করা হয়। এতে আনারস তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসে। আনারস বের হওয়ার সময় লালচে রং থাকে। সে রং কেটে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ধাপে কেমিক্যাল দেওয়া হয়। এতে ফল (আনারস) আকারে বড় হয়। ২০ থেকে ৩০ দিন পর তৃতীয় ধাপে পরপর দুই অথবা তিনবার কেমিক্যাল দেওয়া হয়। আনারস বড় হওয়ার জন্যই এই ধাপেও কেমিক্যাল দেওয়া হয়। ফলে রস এসেছে বোঝা গেলে শেষ ধাপের জন্য প্রয়োগ করা হয় কেমিক্যাল। এবার দেওয়া হয় আনারসকে দ্রুত পাকানোর জন্য। এই ধাপের কেমিক্যালে আনারসের রং হলুদ হয়ে আকর্ষণীয় দেখায়।
'পাকানোর জন্য কেমিক্যাল দেওয়ার ১০ দিনের মধ্যেই সব আনারস একবারে পেকে যায়। তখন একসঙ্গে সব আনারস বাজারে নেওয়া যায়। কেমিক্যাল না দিলে আস্তে আস্তে পাকবে। বাজার ধরতে অসুবিধা হবে।'
চাষিরা জানান, আনারস বড় করার জন্য প্লানোফিক্স, সুপারফিক্স, ক্রপসকেয়ার, অঙ্কুরসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল প্রয়োগ করা হয়। আর পাকানোর জন্য দেওয়া হয় রাইবেন, হারবেস্ট, প্রমোট, সারাগোল্ড, ইটিপ্লাস, অ্যালপেনসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল।
- See more at: http://www.kalerkantho.com/print-edition/special-kalerkantho/2014/06/08/93846#sthash.z69C1gU3.dpuf