Tuesday, August 19, 2014

রাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্র’। ‘সরকারের মধ্যে সরকার’


সমান্তরাল সরকার!

এমপি কামাল মজুমদারের 'ব্যক্তিগত আদালত' ও উন্নয়ন কমিটি

এ যেন ‘রাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্র’।সরকারের মধ্যে সরকার’। 

বলা যায়, ‘সমান্তরাল সরকার’। 

আর এ ধরনের সরকার পরিচালনা করছেন খোদ রাজধানীতেই একজন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য। ঢাকা-১৫ আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার তাঁর এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে ‘উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি’ গঠন করে রীতিমতো নির্বাহী বা প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা শুরু করেছেন। তাঁর নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি সরকারি কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়ে তিনি এ কমিটির কথা জানান দিয়েছেন এবং মৌখিক বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন, যেন তারা যেকোনো দাপ্তরিক কাজ করার আগে এমপি গঠিত কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে। এ ছাড়া এর আগে থেকেই হুবহু আদালতের আদলে ‘সামাজিক বিচার কমিটি’ গঠন করে নিজের এলাকায় রীতিমতো বিচারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এমপি কামাল মজুমদার। এখানে মামলার আদলে অভিযোগ দায়ের করা হয়, সেটার তদন্ত হয়, শুনানি চলে, সাক্ষ্যগ্রহণ হয়, এরপর লিখিতভাবে রায়ও ঘোষণা হয়। অনেক ক্ষেত্রে রায় কার্যকরও করা হয়। আওয়ামী লীগের আগের আমলে তাঁর এই ‘আদালতে’ প্রধান বিচারপতি পদও ছিল। তবে সংশ্লিষ্ট সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি এর বিরুদ্ধে উকিল নোটিশ পাঠালে ওই পদ বাদ দেওয়া হয়, তবে বিচারক পদ থেকে যায়। এখন অবশ্য বিচার কমিটিতে একজন আহ্বায়ক, একজন সদস্যসচিব ও তিনজন সদস্য রয়েছেন। একজন বেতনভুক্ত পেশকারও রয়েছেন। তাঁরাই কথিত আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইন সভা, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ- রাষ্ট্রের এ তিনটি স্তম্ভের মধ্যে আইন সভা তথা সংসদের ক্ষমতা রয়েছে আইন প্রণয়নের। কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী এককভাবে কোনো সংসদ সদস্যের সেই ক্ষমতা নেই; আইন প্রয়োগ, বিচার করা বা নির্বাহী কাজের ক্ষমতা তো নেই-ই। কেউ তা করতে গেলে সেটা হবে বেআইনি ও অবৈধ।
বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ ধরনের কর্মকাণ্ড দেশের প্রচলিত আইনবিরোধী। স্থানীয় এমপির এমন নিজস্ব বিচারব্যবস্থা বন্ধ না করলে সরকারের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হবে; আবার সাধারণ মানুষের মধ্যেও ভীতি সৃষ্টি হবে।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর মিরপুর, কাফরুল ও ভাসানটেক এলাকায় গত পাঁচ বছরে এমপি কামাল মজুমদারের কথিত আদালতে ২৫৩টি অভিযোগ আমলে নিয়ে ২৩০টির রায় ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি ‘কেসগুলোর’ শুনানি চলছে। বিচারকাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্থানীয় সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের। এ আদালতের সমন পেয়ে হাজির না হলে কথিত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে নেওয়া হয় পদক্ষেপ। অনেক ক্ষেত্রে অভিযুক্তের অনুপস্থিতিতেই রায় ঘোষণা করা হয়। এমনকি জমিজমা-সংক্রান্ত কোনো ‘মামলা’য় যে পক্ষ জয় পায় তাদের জমিজমা এই ‘আদালতের’ পক্ষে দখল করে দেওয়া হয়েছে- এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। প্রচলিত আদালতের মতো কোনো মামলায় হারলে এখানে রিভিউ আবেদনও করা যায়।
জানা যায়, ১৯৯৬ সালে এ আদালতের প্রধানকে বলা হতো ‘প্রধান বিচারপতি’। পরে এক সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির উকিল নোটিশের পর এ উপাধি বাতিল করা হয়েছে। এ আদালতে রয়েছেন একজন পেশকারও (বেঞ্চ সহকারী)।
এমপির বিচার কমিটির মাধ্যমে জমিজমা, বাড়িঘর ও অর্থসংক্রান্ত অভিযোগের সমাধান করা হয়। কোনো অভিযোগ পেলেই সমন দিয়ে অভিযুক্তকে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় বিচার কমিটির পক্ষ থেকে। এ নির্দেশ না মানলে বিচার কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অমান্যকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
কামাল আহমেদ মজুমদারের বিচার কমিটিতে শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাসের ভাই সন্ত্রাসী জিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ কমিটির লোকজন বিচারের নামে চাঁদাবাজির সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। সব মিলিয়ে মিরপুর, কাফরুল ও ভাসানটেকে এমপির বিচার কমিটির অত্যাচারে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। কিন্তু কামাল মজুমদারের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।
বিচার কমিটি গঠনের সত্যতা স্বীকার করে ঢাকা-১৫ আসনের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় পাঁচটি ওয়ার্ড নিয়ে বিচার কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তারা আইনগত দিক দেখে বিচারকাজ পরিচালনা করে থাকে। আমার কাছে মানুষ এলে তাদের বিচার কমিটিতে পাঠিয়ে দিই। আমি নিজে বিচার করলে বদনাম হবে। এমপি ইলিয়াস মোল্লা ও আসলামুল হক নিজেই বিচার করেন। আমার পাঁচ ওয়ার্ডের বিচারকাজ পরিচালনা হয় মোহনা টিভির কার্যালয়ে। এ কমিটির রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের ব্যবস্থাও রয়েছে।’ এমপি দাবি করেন, ‘তাঁর বিচার কমিটির রায় প্রচলিত আদালতও আমলে নেন।’
উল্লেখ্য, মোহনা টিভি সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান।
বিচার কমিটির সদস্যসচিব আবুল খায়ের ভূঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, “এ আদালতের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম ক্ষমতায় আসার পর। সেই সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সামসুদ্দিন মোল্লাকে প্রধান ও আব্দুল করিম আকন্দকে সদস্যসচিব করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধানকে ‘প্রধান বিচারপতি’ আর অন্য সদস্যদের বলা হতো বিচারপতি। একটি কেসের রায়ের কপিতে প্রধান বিচারপতি লেখার পর সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি এমপি মহোদয়কে উকিল নোটিশ পাঠায়। এরপর আমরা তা পরিবর্তন করে আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব নাম দিয়েছি। কিন্তু আমাদের কার্যক্রম পুরোটাই আদালতের মতোই পরিচালিত হয়ে থাকে। আমাদের রয়েছে একটি বেঞ্চ সহকারী বা পেশকার। তাঁর নাম ওয়াজি উল্লাহ। বাদীর টাকায় তাঁর বেতন দেওয়া হয়। কারো কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায়ের কোনো নজির নেই।”
আদালত পরিচালনার ক্ষেত্রে আপনাদের ‘বিচারিক ক্ষমতা’ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাননীয় সংসদ সদস্যের বিচারিক ক্ষমতা রয়েছে। তাঁর দেওয়া ক্ষমতাবলেই আমরা আদালত পরিচালনা করে থাকি।’
জানা যায়, এ কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল ওহাব সদস্যসচিব আবুল খায়ের ভূঁইয়া এবং সদস্য আব্দুল আলী চৌধুরী, এম এ গফুর ও সিরাজউদ্দিন।
এলাকাবাসীর দাবি, কামাল মজুমদার ও তাঁর অনুসারীদের গঠিত এ বিচার কমিটির নামে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা এবং নির্বাহী ক্ষমতা আরোপের জন্য গঠিত আরেক কমিটির কারণে ইতিমধ্যে এলাকায় গণভীতি তৈরি হয়েছে। এমপির এই ‘মিনি আদালতের’  বিচারকাজের নজির এখানে তুলে ধরা হলো।
ঘটনা-১ : গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বোটানিক্যাল গার্ডেনের সাবেক পরিচালক এ বি এম বারেকের স্ত্রী লুৎফুন নেসা নাহারকে সামাজিক বিচার কমিটির পক্ষে একটি সমন (নোটিশ) দেন আহ্বায়ক আব্দুল ওহাব। সমনে বলা হয়, ‘জনাব আলহাজ শফিউদ্দিন নামের এক ব্যক্তি আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করেছেন। এ অভিযোগ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আপনাকে বিচার কমিটির কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, প্রমাণাদি ও সাক্ষীসহ উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হলো।’
সমনে উল্লেখ আছে, ঢাকা-১৫ আসনের এমপি কামাল আহমেদ মজুমদার কর্তৃক গঠিত সামাজিক বিচার কমিটির কার্যালয় মোহনা, প্লট-৮, রোড-৪, মিরপুর-৭। কিন্তু বিচার কমিটির সমনে সাড়া না দেওয়ায় নাহারকে আরো চারটি সমন দেওয়া হয়।
জানা যায়, শফিউদ্দিন গত ৬ ফেব্রুয়ারি কামাল মজুমদারের কাছে একটি আবেদন করেন। এ আবেদনের ওপর কামাল মজুমদার বিচার কমিটিকে বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি ও তাঁকে অবগত করার নির্দেশ দেন।
এ বি এম বারেক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০ বছর আগে নির্মাণ করা আমার বাড়ির দেয়াল ভেঙে এক প্রতিবেশীকে রাস্তা দেওয়ার অজুহাতে বিচার কমিটি নোটিশ দেয়। আমি বিজ্ঞ আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, স্বঘোষিত এ কমিটি আমাকে দালিলিক প্রমাণাদি নিয়ে হাজির হওয়ার যে নির্দেশ দিয়েছে তার কোনো এখতিয়ার  তাদের নেই। এটা বেআইনি নোটিশ। পরে আমি তাদের নির্দেশ না মানায় পরপর পাঁচটি নোটিশ দেয়। এরপর বিচার কমিটির লোকজন দলবল নিয়ে আমার দেয়াল ভাঙতে আসে। বাধ্য হয়ে আমি পুলিশের আশ্রয় নেই। পুলিশের সহয়তায় আমার রক্ষা হয়।’
এ ব্যাপারে বিচার কমিটির সদস্যসচিব আবুল খায়ের ভূঁইয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমপি সাহেবের নির্দেশে আমরা এ কমিটি করেছি। কমিটির কাছে কেউ অভিযোগ করলে তদন্ত করে দেখা হয়। এ জন্য আমরা উভয় পক্ষকে নোটিশের মাধ্যমে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দিই। বোটানিক্যাল গার্ডেনের সাবেক পরিচালকের স্ত্রীকেও আমরা পাঁচটি নোটিশ দিয়েছি। কিন্তু তিনি এতে সাড়া দেননি। এর পরও আমরা স্থানীয় লোকজনের সমন্বয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেছি এবং সব প্রমাণাদি পর্যালোচনা করে তাঁর অনুপস্থিতিতেই রায় দিয়েছি। এ বি এম বারেক ছাড়া এ পর্যন্ত আমাদের রায়ের ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি।’
ঘটনা-২ : বিচার কমিটির পক্ষ থেকে উসমান গণি নামের এক ব্যক্তিকে চিঠি দেওয়া হয়। তিনি চিঠির বিষয়ে সাড়া না দিলে কমিটির পক্ষ থেকে রায় দিয়ে তা কার্যকর করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। গত ১৬ জুন মিরপুর থানার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সামাজিক বিচার কমিটির আহ্বায়কের নেতৃত্বে শতাধিক লোকজন গিয়ে ৬০ ফুট প্রশস্ত রাস্তার পাশে উসমান গণি তালুকদারের মালিকানাধীন জমির সীমানাপ্রাচীর ভেঙে দেয়। এরপর পুলিশের সহায়তায় তাঁর জায়গা রক্ষা পায়। জানা যায়, উসমান গণি তালুকদার মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান।
উসমান গণি তালুকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিচার কমিটির নামে তারা আমাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে হাজির হতে নোটিশ দেয়। এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে জারি করা এ নোটিশে আমি সাড়া দেইনি। পরে বিচার কমিটির লোকজন দলবল নিয়ে এসে বেআইনিভাবে আমার সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলে। অবশেষে স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় তাদের হাত থেকে রক্ষা পাই।’
এমপির তৃণমূল প্রশাসন : সংসদ সদস্য কামাল মজুমদার তাঁর এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে কমিটি গঠন করেছেন, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি।’ গত কয়েক মাসের ব্যবধানে সব কয়টি ওয়ার্ডেই এ কমিটি গঠন করেছেন তিনি। কমিটি গঠনের পর চিঠি পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অফিস আদেশ দিয়েছেন তাঁর এলাকার সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী প্রকৌশলী, ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী, ডেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী, তিতাসের উপমহাব্যবস্থাপক ও থানার ওসিদের। চিঠিতে বলা হয়েছে, এলাকার রাস্তা-ঘাট, বিদ্যুৎ, পানির লাইন, গ্যাসের লাইনসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধার কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব এমপির কমিটির।
চিঠি থেকে জানা যায়, ৪ নম্বর ওয়ার্ড উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মতিউর রহমান মাইকেল, সদস্যসচিব মোফাজ্জল হোসেন, সদস্য শওকত হোসেন, আবু বকর ছিদ্দিক ও তাজুল ইসলাম। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে এ কমিটির আহ্বায়ক রেজাউল হক ভূঁইয়া বাহার, সদস্যসচিব মইজউদ্দিন, সদস্য করিমুল হক চৌধুরী মিঠু, তাজুল ইসলাম, শফিকুর রহমান, আবু জালাল, ফারুক আহমেদ, ফখরুল ইসলাম ভূঁইয়া ও খোকা মিয়া। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে আহ্বায়ক এম এ গফুর, সদস্যসচিব ইসমাইল হোসেন, সদস্য আলাউদ্দিন, আজগর আলী, ইসহাক মিয়া, আজহারুল হক ফেরদৌস, মকবুল হোসেন ও আমিনুল ইসলাম। ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিল্লাল উদ্দিন আহমেদ আহ্বায়ক ও খান বাবলু সদস্যসচিব আর সদস্য আব্দুল আলী চৌধুরী, মোহাম্মদ জাফরুল্লাহ, আব্দুর রউফ আলী, জহিরুল ইসলাম খান, সৈয়দ আজিজুল হক খসরু, আব্দুর রব ও ইয়াছিন মিয়া।
গত ৯ এপ্রিল ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির অনুমোদনপত্রে কামাল মজুমদার স্বাক্ষর করে বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকা ১৮৮, ঢাকা-১৫-এর কাফরুল থানাধীন রাস্তা-ঘাট উন্নয়ন, স্যুয়ারেজ লাইন উন্নয়ন, নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, শিক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার লক্ষ্যে এ কমিটি গঠন করা হলো।’
১৪ নম্বর উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব মো. মইজউদ্দিন বলেন, ‘এমপি মহোদয়ের নির্দেশে আমরা জনগণের সুখ-শান্তি দেখার কাজ করছি। আমরা ওয়াসার সুয়্যারেজ লাইন নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে জমা দিয়েছি, তা এমপি মহোদয়ের মাধ্যমে ওয়াসায় পাঠানো হয়েছে। এ কাজ ওয়াসা আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে করবে। এভাবে জনগণের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা কাজ করে থাকি।’
কামাল মজুমদারের দেওয়া চিঠির সত্যতা নিশ্চিত করেন ঢাকা ওয়াসার মডস জোন-৪-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জুলফিকার আলী। কমিটির পক্ষ থেকে কোনো ধরনের কাজের চাপ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এক আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘এ ধরনের চিঠি পাওয়ার পর আমরা খুবই বিব্রত হয়েছি। একজন সংসদ সদস্যের সরকারি দপ্তরের ওপর আস্থা থাকলে তিনি এ কমিটি গঠন করতেন না। কমিটি গঠনই শেষ নয়। উনার নির্বাচনী এলাকায় সরকারি যেকোনো প্রতিষ্ঠান কাজ করলে সংশ্লিষ্ট কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করারও মৌখিক নির্দেশনা রয়েছে।’
বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ ধরনের কমিটি গঠন করে সংসদ সদস্যের নেওয়া পদক্ষেপ সম্পূর্ণ বেআইনি।
সূত্র : তোফাজ্জল হোসেন রুবেল, দৈনিক কালের কন্ঠ।

0 comments:

Post a Comment