মশা প্রতিরোধে উদ্ভিদ
বাংলাদেশে মশার উপদ্রব কম-বেশী সারা বছরই দেখা যায়। বিশেষত ফেব্রুয়ারি হতে এপ্রিল পর্যন্ত এদের দৌরাত্ম্য অনেক বেড়ে যায়। মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া/ডেঙ্গুজ্বরসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার নজির রয়েছে। মশা নিধনে বাজার হতে উচ্চু মূল্যে ক্ষতিকারক মশার কয়েল/স্প্রে ক্রয় করে মশা প্রতিরোধ করতে হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাসায়নিক দ্রব্য দ্বারা মশা প্রতিরোধের পরিবর্তে মশা তাড়ানোর উদ্ভিদ চাষ করে মশা প্রতিরোধ করা হচ্ছে যা অত্যন্ত স্বাস্থ্য সম্মত এবং পরিবেশবান্ধব।
নি¤েœ উল্লেখিত উদ্ভিদগুলো বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জের ঝোপঝাড়ে, নদী ও সাগর পাড়ে, রেললাইনের ধারে প্রাকৃতিকভাবে জন্মে থাকে।
১। সিট্রোনিলা :
সিট্রোনিলার বৈজ্ঞানিক নাম সিট্রোনিলা উইন্টারিয়ানস্ সিট্রোনিলার উপাদান হতে মশার কয়েল/স্প্রে তৈরী করা হয়। সিট্রোনিলা গাছের গন্ধে মশা তার আশ পাশে আসতে পারেনা। মশার কয়েলে ব্যবহৃত সিট্রোনিলার উপাদানের চেয়ে জীবন্ত গাছের গন্ধ অনেক কার্যকর। সিট্রোনিলা বহু বৎসর জীবী উদ্ভিদ এবং ঝোপজাতীয় গাছ। সিট্রোনিলা সর্বোচ্চ ৫-৬ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের মাটি, আবহাওয়া ও জলবায়ু সিট্রোনিলা উৎপাদনের উপযোগী। বাংলাদেশে যে কোন স্থানে যেখানে পানি জমেনা সে স্থানেই এই উদ্ভিদ চাষ করা যায়। সিট্রোনিলা বাড়ীর সামনের বাগানে ও বড় টবে চাষ করা যায়। টবে চাষ করে টব বাড়ীর জানালার ও দরজার পাশে, ব্যালকনিতে রাখলে সিট্রোনিলা গাছের গন্ধে মশা ঘরে প্রবেশ করতে পারে না।
২। হরসিমিন্ট :
হরসিমিন্ট বেবলাম নামেও পরিচিত। হরসিমিন্ট বহু বৎসর বাঁচে এবং সিনট্রনিলার ন্যায় প্রচ- গন্ধযুক্ত যা মশা প্রতিরোধে কার্যকর। হরসিমিন্ট গাছ অত্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং রোদ খড়া প্রতিরোধক। হরসিমিন্ট ২-৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। হরসিমিন্ট গাছ শুকনো বেলে মাটিতে ভাল উৎপাতি হয় এবং লবণাক্ততা প্রতিরোধক। এই সব গাছ সমুদ্র উপকূলে জন্মায় এবং সমুদ্র উপকূল হতে সংগ্রহ করা যায়। এই গাছটি বীজ হতে জন্মায়। সরাসরি মাঠে বীজ বপন করাসহ বাগানে এবং টবে উৎপাদন করা যায়। টবে উৎপাদিত গাছ বাড়ীর করিডোরে/জানালা ও দরজার পাশে রেখে মশা প্রতিরোধ করা সম্ভব। হরসিমিন্ট এর শুকনা পাতা হতে হারবাল চা তৈরী করা যায়। এর ফুলগুলি অত্যন্ত সুন্দর যা বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধিসহ মৌমাছি/প্রজাপতিদের বাগানে আকর্ষণ করে থাকে।
৩। মেরিগোল্ড :
মেরিগোল্ডকে বাংলায় গাদা ফুল বলা হয়ে থাকে, যা অরনামেন্টাল বর্ডার প্লান্ট নামে পরিচিত। মেরী গোল্ড এক বৎসরজীবী গাছ । গাছটি জন্মানোর জন্য উর্বর মাটি এবং পূর্ণ সূর্য তাপের প্রয়োজন। গাছটি বীজ হতে জন্মায়। আমাদের দেশে যে কোন নার্সারী হতে এ গাছের চারা সংগ্রহ করা যায়। এ গাছটি বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে থাকে। গাদা ফুলের প্রচ- গন্ধে মশা তার আশপাশে আসতে পারে না। এ গাছটি টবে চাষ করে ঘরের জানালা/দরজার পাশে রাখলে এ গাছের ফুলের গন্ধে মশা ঘরে ঢুকতে পারে না। এ গাছের ফুল টমেটো গাছের পোকা মাকড় প্রতিরোধক। টমেটো খেতের চারপাশে এ ফুল গাছটি চাষ করলে টমেটো খেতের পোকার আক্রমণ কমে যায়।
৪। এজিরেটম :
এজিরেটাম ফ্লোছ ফ্লাওয়ার নামে পরিচিত। এ গাছের ফুলের গন্ধে মশা গাছের আশপাশে আসে না। এজিরেটাম গাছ হতে নিঃসৃত রস যার নাম কমেরিন মশার কয়েল/স্প্রে তৈরীর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এজিরেটাম এক বৎসর জীবিত থাকে। এজিরেটাম ফুল গাছ উচ্চতায় ৮-১৮ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ গাছের ফুল সচরাচর নীল রং এর হয়ে থাকে। তবে অন্যান্য রঙ্গেরও দেখা যায়। এ গাছটি জন্মানোর জন্য খুব উর্বর জমির প্রয়োজন হয় না। যে কোন মাটিতে এ গাছটি জন্মানো যায়। এ গাছটি ছায়াযুক্ত স্থানেও জন্মায়। এ গাছটি টবে জন্মিয়ে জানালা ও দরজার পাশে ঘরের ভিতরে /বেলকোনিতে রেখে মশা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
৫। ক্যাটনিপ :
ক্যাটনিপ একটি প্রাকৃতিক মশা নিবারণের জন্য অত্যন্ত কার্যকর গাছ। যা গবেষণায় প্রমাণিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম নেপিটা ক্যাটেরিয়া গাছটি জন্মানো অত্যন্ত সহজ। যে কোন মাটিতে এবং আবহাওয়ায় এ গাছটি জন্মায়। এ গাছটি বহু বৎসর জীবিত থাকে এবং ঔষধিজাতীয় গাছ। এ গাছটি হতে নির্যাসিত গন্ধে মশা তার আশপাশে আসতে পারে না। গাছটি বাগানে এবং টবে জন্মানো যায়। গাছটি টবে জন্মিয়ে ঘরের বেলকোনিতে, জানালা ও দরজার পাশে অথবা ঘরে রাখলে প্রাকৃতিকভাবে মশা প্রতিরোধ সম্ভব।
উল্লেখিত গাছগুলো অত্যন্ত সহজে বাংলাদেশের মাটিতে জন্মানো সম্ভব। এ দেশের মাটি এবং জলবায়ু গাছগুলো জন্মানোর জন্য খুবই উপযোগী। বাণিজ্যিকভাবে এসব গাছের একক নার্সারী সৃষ্টি করে বাজারজাত করা গেলে তা অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হবে। ফলশ্রুতিতে একদিকে যেমন মশার কয়েল/স্প্রে আমদানি/উৎপাদন কমে যাবে অন্যদিকে তেমনি কয়েল/স্প্রের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় উদ্ভত রোগ হতে বাঁচা যাবে যা স্বাস্থ্য সহায়ক ও পরিবেশবান্ধব।
সূত্র – কৃষিবিদ মো. সায়েদুজ্জামান, দৈনিক ইনকিলাব।
0 comments:
Post a Comment