সঠিক রোগ নির্ণয়ের খরচ কত হওয়া উচিত ?
রোগ নির্ণয়ের খরচ ঠিক করবে কে?
সরকারি হাসপাতালে রক্তের একটি নমুনা পরীক্ষা করানোর খরচ দেড় শ টাকা। একই পরীক্ষা করাতে কোথাও কোথাও তিন গুণ পর্যন্ত বেশি খরচ পড়ছে। শুধু রক্ত পরীক্ষা নয়, আরও অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় রোগীদের পড়তে হচ্ছে একই সমস্যায়।
বাংলাদেশ অ্যাকাডেমি অব প্যাথলজিস্ট বলছে, রোগ নির্ণয়ে কোন পরীক্ষার জন্য কত টাকা রোগীদের দিতে হবে, সরকার সে বিষয়ে কখনো কোনো নির্দেশনা দেয়নি। সে কারণে সরকারি হাসপাতালগুলোর তুলনায় বেসরকারি হাসপাতালে রোগ নির্ণয়ের খরচ অনেক বেশি। এ ছাড়া সিংহভাগ চিকিত্সক ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে কমিশন নেন। আর ওই কমিশনের টাকা রোগীদের পকেট থেকে উসুল করা হচ্ছে ।
এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চিকিত্সকদের যৌক্তিক ব্যবস্থাপত্র লিখতে শিখতে হবে। সরকারকে ব্যবস্থাপত্র নিরীক্ষণের (অডিট) উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, এর উদ্দেশ্য চিকিত্সককে শাস্তি দেওয়া না, বরং চিকিত্সকেরা যেন নৈতিক ও যৌক্তিক ব্যবস্থাপত্র লেখেন তা নিশ্চিত করা। এ ছাড়া কোন পরীক্ষার জন্য সর্বোচ্চ কত টাকা লাগবে, সে বিষয়ে সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এক অনুষ্ঠানে রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার এই ব্যয় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। কিন্তু প্রায় দুই বছর ধরে বেসরকারি চিকিত্সাসেবা আইন অনুমোদনের অপেক্ষায় মন্ত্রণালয়ের টেবিলে টেবিলে ঘুরছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল বিভাগের পরিচালক আবদুল হান্নানের দাবি, আইনটির খসড়া চূড়ান্ত হয়ে গেছে। যেকোনো দিন পাস হয়ে যাবে। তখন আর কোনো নৈরাজ্য থাকবে না।
খরচের ফারাক: জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের প্রধান মো. শামিউল ইসলাম বলেন, মূত্র পরীক্ষার প্রাথমিক ও প্রধান উদ্দেশ্য হলো মূত্রের মাধ্যমে সুগার বা প্রোটিন যাচ্ছে কি না তা দেখা। এটি পরীক্ষা জন্য যে স্ট্রিপটি ব্যবহার হয়, তার দাম ১০ টাকা। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের দাবি, তারা ইউরিন অ্যানালাইজার ব্যবহার করে। তাতেও খরচ ৫০ টাকার ওপরে যাওয়ার কথা নয়।
সরকারি হাসপাতালের তুলনায় বারডেমে খরচ কিছুটা বেশি হওয়ার কী কারণ জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক শহিদুল হক মল্লিক বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যন্ত্রপাতি কেনা হয় তিনভাবে। নগদ টাকা দিয়ে, কিস্তিতে এবং রি-এজেন্ট এগ্রিমেন্ট প্ল্যানে (র্যাপ)। র্যাপের আওতায় যেসব যন্ত্রপাতি কেনা হয়, সেগুলোর রিএজেন্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে কেনার বাধ্যবাধকতা আছে। সে কারণে অনেক সময় দামের তারতম্য হয়।
এ প্রসঙ্গে ইউনাইটেড হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ‘আমাদের টার্গেট গ্রুপ তাঁরাই, যাঁরা চিকিত্সা করাতে বিদেশে যান। এখানে সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতিতে তাত্ক্ষণিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ, পরামর্শকের সম্মানী সব বিষয় বিবেচনায় রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যয় ঠিক করা হয়।’ ল্যাবএইড হাসপাতালের অন্যতম পরিচালক আল ইমরান চৌধুরী বলেছেন, সরকারি হাসপাতালগুলো রোগ নির্ণয়ের খাতে প্রচুর ভর্তুকি দেয়। বেসরকারি খাতে সে সুবিধা নেই। তারপর কোন হাসপাতাল কী দামের রি-এজেন্ট ব্যবহার করছে, কোন যন্ত্রে পরীক্ষা করছে, সেটাও দেখার বিষয়।
বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ বি এম হারুন প্রথমআলোকে বলেন, বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বেশির ভাগেরই খরচ একই রকম। কিছু ব্যয়বহুল হাসপাতালে খরচ বেশি। সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে তুলনা করলে চলবে না। সরকার পরামর্শকদের খরচ বহন করে, কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজেদের এই খরচ বহন করতে হয়।
এ দিকে বাংলাদেশ অ্যাকাডেমি অব প্যাথলজিস্টের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্যাথলজি বিভাগের প্রধান মালিহা হুসেইন প্রথম আলোকে বলেন, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো সময়ের প্রয়োজনে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যয় ২০-৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়াতে পারে। তারা তা না করে এক লাফে এক-দেড় শ টাকা পর্যন্ত বাড়ায়। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের শিক্ষকেরাই এখানে কাজ করেন। তাঁদের বেতন কিন্তু দফায় দফায় বাড়ে না।
সূত্র - সাবিহা আলম , দৈনিক প্রথম আলো
0 comments:
Post a Comment