লেবু : রোগ সারায়, সুন্দর রাখে
খুব পরিচিত একটি খাবার। লেবুর ভিতর থেকে বাইরের খোসা পর্যন্ত পুরোটাই অনেক গুণে গুণান্বিত। ওজন কমানো থেকে শুরু করে মুখের রুচি ফিরিয়ে আনতে লেবুর জুড়ি নেই। জেনে নিন লেবুর গুণাগুণ ও তার বহুমাত্রিক ব্যবহার সম্পর্কে।
শরীরের জীবাণু ধ্বংস করা : সকাল বেলা খালি পেটে এক কাপ কুসুম গরম লেবুপানি পান করা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এতে আপনার শরীরের অনেক জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ লেবুর রস শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সহায়তা করে। এ ছাড়া আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায় লেবু।
লিভার সুস্থ রাখে এবং হজমে সাহায্য করে : লেবুর পানি লিভারে থাকা পরিপাক সংক্রান্ত এনজাইমগুলোকে সক্রিয় করে তোলে। ফলে খাবার সহজে হজম হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজম সংক্রান্ত সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে লেবুর উপকারিতা অনস্বীকার্য। লেবু রক্তের অক্সিজেন পরিবহনের মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়।
কিডনির পাথর রোধ করে : সাধারণত কিডনির পাথরগুলো ছোট আকারের হয় এবং তা মূত্রের সাথে বের হয়ে যায়। কিন্তু এই পাথর বড় হলে তা আমাদের মুত্রথলিতে জমা হয় এবং প্রচুর ব্যথার সৃষ্টি করে। কিডনিতে পাথর হওয়া ঠেকাতে লেবুর রসের উপকারিতা অপরিসীম। লেবুর রস আমাদের শরীরকে রিহাইড্রেট করে এবং কিডনিতে পাথর তৈরিতে বাধা দেয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : লেবুর মধ্যে থাকে সাইট্রাস বায়োফ্ল্যাভোনয়েড, ভিটামিন সি এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস্ যা আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক : ওজন নিয়ন্ত্রণে লেবুর উপকারিতা অনেক। সকালে উঠে কুসুম গরম পানিতে লেবু ও মধু মিশিয়ে খেলে শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট ধ্বংস হয়। নিয়মিত এ পানীয় খেলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক : গবেষণায় পাওয়া গেছে লেবুর ভেতরে এমন অনেক উপাদান আছে যা শরীরে টিউমার তৈরি হতে বাধা দেয়। ক্যান্সার প্রতিরোধে লেবুর উপকারিতা সীমাহীন।
রক্তচাপ এবং দুশ্চিন্তা কমায় : লেবু পানি শরীরে এক ধরনের প্রশান্তির সৃষ্টি করে। ফলে এটা আপনাকে দুশ্চিন্তা, হতাশা থেকে মুক্ত রাখে। লেবু শুধু শরীরে সজিবতা আনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং আপনার রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণেও লেবু কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
স্বাস্থ্যরক্ষায় ক্ষেত্রে লেবুর রসের পাশাপাশি লেবু ও লেবুর খোসার বেশ কয়েকটি অসাধারণ ব্যবহারও থাকে।
সিঙ্ক এবং বাথটাব পরিষ্কার করে : সিঙ্কে বেকিং সোডা ছিটিয়ে দিন এবার একটি লেবুর খোসা দিয়ে ভাল করে ঘষে পরিষ্কার করে নিন। এটি সিঙ্কের সব রকম দাগ চলে যাবে। এমনকি সিঙ্ক নতুনের মত চকচকে হয়ে উঠবে।
মশা তাড়াতে কার্যকর : শুনতে আজব লাগলেও মশা তাড়াতে বেশ কার্যকর লেবু। এজন্য লেবুকে দুইভাগ করে কেটে নিয়ে কাটা অংশে লবঙ্গ গেঁথে নিতে হবে। তারপর ঘরের একটি স্থানে রেখে দিন। মশার উপদ্রব থেকে দূরে থাকুন।
পিঁপড়া দূর করতে : কয়েক টুকরা লেবুর খোসা জানালার কোণে, দরজার কোনে, বিশেষ করে যেখান দিয়ে পিঁপড়া এবং অন্যান্য পোকা মাকড় আসে সেদিকে রেখে দিন। দেখবেন পিঁপড়া তেমন একটা আসছে না। কারণ পিঁপড়া এবং অন্যান্য পোকামাকড় লেবুর গন্ধ একদম সহ্য করতে পারে না।
ঘর ও ফ্রিজের পরিবেশ সতেজ রাখতে : রোজমেরি এবং ভ্যানিলার সঙ্গে লেবু মিশিয়ে সহজেই ঘরের পরিবেশকে সতেজ করে তুলতে পারেন। ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করতে একটি বা দুটি লেবুর খোসা রেখে দিন। দেখবেন ফ্রিজের ভেতরে দুর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে।
সিরামিকের থালাবাসন চকচকে করতে : লেবুতে রয়েছে সাইট্রিক এসিড আছে যা থালাবাসন চকচকে করতে সাহায্য করে। থালা বাসন পরিষ্কার করার সময় ডিশ ওয়াশারের সাথে লেবুর খোসা দিয়ে থালাবাসন ঘষুন। এটি আপনার থালাবাসনের দাগ দূর করে নতুনের মত করে তুলবে। এমনকি আপনি কাঁচের গ্লাস ও প্লেটও এভাবে পরিষ্কার করতে পারেন।
আপেল তাজা রাখতে : কাটা আপেল বা অ্যাভোকাডোকে বাদামি রং হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে লেবু। এজন্য কাটা অংশটিতে লেবু মাখিয়ে রাখতে পারেন।
মাইক্রোওয়েভ পরিষ্কার করতে : একটি পাত্রে পানিতে লেবুর রস দিয়ে মাইক্রোওয়েভে ফুটাতে দিন। বলক আসা পর্যন্ত ফুটতে দেবেন। ওভেনের ভেতরে যেন পানি বলক আসে, তারপর একটি সুতি কাপড় দিয়ে মাইক্রোওয়েভের ভিতরটা পরিষ্কার করে ফেলুন। দেখবেন খুব সহজে ভিতরটা পরিষ্কার হয়ে গেছে।
ত্বকের দাগ দূর করতে : ত্বকের যত্নেও লেবুর খোসা অতুলনীয়। লেবুর খোসায় অল্প মধু নিয়ে পুরো মুখে ভালো করে ঘষে নিন। হাত ও পায়েও ঘষে নিতে পারেন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার আপনার ত্বক উজ্জ্বল ও দাগ মুক্ত হবে।
দাঁত সাদা করে : এক টুকরো লেবুর খোসা নিয়ে এর ভেতরের অংশ দিয়ে ২ মিনিট দাঁত ঘষুন। এরপর কুলি করে ফেলুন। তাৎক্ষণিক ফলাফল দেখতে পাবেন।
কাপড় থেকে ঘামের দাগ দূর করতে : অনেক সময় জামা কাপড়ে ঘামের দাগ পড়ে যায়। বিশেষ করে বগলের কাছে বাজে ধরনের ঘামের দাগ পড়ে। এতে জামা কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। এই দাগ উঠাতে একটি অর্ধেক রস বের করে নেয়া লেবু ঘষে নিন। এরপর দাগের উপর বেকিং সোডা ছিটিয়ে সারা রাত রেখে দিন। সকালে ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ঘামের দাগ একেবারে উধাও হয়ে যাবে।
- See
more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/78083#sthash.uqpBCc3j.dpuf
0 comments:
Post a Comment