যাত্রী
স্বার্থ উপেক্ষা
করে ট্যাক্সিক্যাবের
ভাড়া নির্ধারণ
ব্যাপক ঢাকঢোল
পিটিয়ে আগামী
পহেলা বৈশাখে
(১৪ এপ্রিল)
মহানগরীর সড়কে
নামছে নতুন
ট্যাক্সিক্যাব। প্রতিটি ১৮ লাখ
টাকা মূল্যের
এসব ট্যাক্সিক্যাবের
ভাড়া নির্ধারণে
যুক্ত করা
হয়েছে সাড়ে
৯ লাখ
টাকার ঋণের
সুদ।
আর গাড়ির
বার্ষিক অপচয়
ধরা হয়েছে
২ লাখ
৪০ হাজার
টাকার ওপর। কোম্পানির
ব্যবস্থাপনা ফি, নৈমিত্তিক খরচ, চালকের
বেতন-বোনাসও
অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ট্যাক্সিক্যাবের ভাড়ায়।
এর সঙ্গে
টায়ার-টিউব,
ব্যাটারি, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ফি,
গ্যারেজ ভাড়া,
জ্বালানি ব্যয়তো
আছেই।
এসব ব্যয়ের
ওপর ১০
শতাংশ মুনাফা
ধরে ট্যাক্সিক্যাবের
কিলোমিটার প্রতি ভাড়া দাঁড়িয়েছে ৩৪
টাকা।
নতুন ট্যাক্সিক্যাবের
এ ভাড়া
নির্ধারণে ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটিতে রাখা
হয়নি যাত্রীপ্রতিনিধি। নেওয়া
হয়নি বিশেষজ্ঞদের
মতামতও।
বাংলাদেশ সড়ক
পরিবহণ কর্তৃপক্ষ
(বিআরটিএ) ইচ্ছেমতো ব্যয় বিশ্লেষণ করে
এই ভাড়ার
হার নির্ধারণ
করে।
এরপর গত
২৩ মার্চ
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে
অনুষ্ঠিত আন্ত:মন্ত্রণালয় সভায়
তা অনুমোদনও
করা হয়।
বিআরটিএর
তথ্যমতে, রাজধানীতে
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত
ট্যাক্সির ন্যূনতম ভাড়া ধরা হয়েছে
১০০ টাকা। ট্যাক্সিক্যাবে
উঠলেই এ
ভাড়া দিতে
হবে।
প্রথম দুই
কিলোমিটার বা তার কম পথ
ভ্রমণের জন্য
এ ভাড়া
প্রযোজ্য হবে। পরবর্তী
প্রতি কিলোমিটারের
জন্য ভাড়া
ধরা হয়েছে
৩৪ টাকা। আর
যাত্রাবিরতিকালে প্রতি দুই মিনিটের জন্য
সাড়ে ৮
টাকা করে
ভাড়া দিতে
হবে।
অর্থাৎ যানজট
বা অন্য
কোনো কারণে
পথে ৮
মিনিট আটকে
থাকলে এক
কিলোমিটারের ভাড়া দিতে হবে।
আর টেলিফোন
করে ট্যাক্সিক্যাব
বাসায় ডাকলে
অতিরিক্ত ২০
টাকা চার্জ
দিতে হবে। মতিঝিলের
বাংলাদেশ ব্যাংক
থেকে উত্তরার
আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত সড়কপথে দূরত্ব প্রায়
২২ কিলোমিটার। এক্ষেত্রে
পথে কোনো
যানজট না
হলে নতুন
ট্যাক্সিতে মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত
ভাড়া হবে
৭৮০ টাকা। আর
বিমানবন্দর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া
হবে ৬৫০
টাকা।
তবে যানজট
থাকলে প্রতি
৮ মিনিটে
অতিরিক্ত ৩৪
টাকা করে
ভাড়া দিতে
হবে।
এদিকে মিরপুর
থেকে মতিঝিল
সড়কপথে দূরত্ব
প্রায় ১৬
কিলোমিটার।
যানজট না
থাকলে নতুন
ট্যাক্সিক্যাবে এ পথে ভাড়া হবে
প্রায় ৫৮০
টাকা।
এ
প্রসঙ্গে বাংলাদেশ
যাত্রী কল্যাণ
সমিতির মহাসচিব
মোজ্জাম্মেল হক চৌধুরী এই প্রতিবেদককে
বলেন, অতীতে
গণপরিবহণের ভাড়া নির্ধারণে বিআরটিএ যে
ধরনের আচরণ
করেছিল, ট্যাক্সিক্যাবের
ভাড়া নির্ধারণে
এবারও তাই
করেছে সংস্থাটি। ব্যয়
বিশ্লেষণে যাত্রীদের প্রতিনিধি রাখা হয়নি। এটা
কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এখানে
বিবেচনা করা
হয়নি যাত্রীস্বার্থ। বরং
একপেশে ও
মনগড়া বিশ্লেষণ
করে এ
ভাড়া নির্ধারণ
করেছে বিআরটিএ। তিনি
জানান, তারপরও
বিভিন্ন পক্ষের
মতামত উপেক্ষা
করে আন্ত:মন্ত্রণালয় সভার
কার্যপত্র এরই মধ্যে অনুমোদন করা
হয়েছে।
নতুন ট্যাক্সিক্যাব
নামানোর আগেই
এ সংক্রান্ত
প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলেও
জানান তিনি।
ব্যয়
বিশ্লেষণ অনুযায়ী,
প্রতিটি ট্যাক্সিক্যাবে
৬০ হাজার
টাকা নিবন্ধন
ফিসহ বিনিয়োগ
ব্যয় ২৮
লাখ ৫
হাজার টাকা। ট্যাক্সিক্যাবের
আয়ুস্কাল ধরা
হয়েছে ১০
বছর।
প্রতি বছর
ট্যাক্সিক্যাব ৩শ দিন চলবে।
প্রতি মাসে
চলবে ২৫
দিন ও
দৈনিক চলবে
১৫০ কিলোমিটার। আর
১০ বছর
পর ট্যাক্সিক্যাবের
অবশিষ্ট মূল্য
ধরা হয়েছে
৪ লাখ
টাকা।
ট্যাক্সিক্যাবের
দৈনিক অপচয়
ধরা হয়েছে
৮০১ টাকা। চালকের
মাসিক বেতন
১০ হাজার
টাকা ও
বছরে ২০
হাজার টাকা
বোনাস ধরা
হয়েছে।
দৈনিক এ
খাতে ব্যয়
৬৬৬ টাকা। রোড
ট্যাক্স ও
ফি বাবদ
বছরে ৬২
হাজার টাকা
ব্যয়, দৈনিক
যেটা দাঁড়ায়
২০৬ টাকা। বছরে
১টি ব্যাটারি
ও ৪টি
টায়ার ও
টিউব লাগবে,
যার ব্যয়
যথাক্রমে ৫
হাজার ৫শ
টাকা ও
৪০ হাজার
টাকা।
দৈনিক এ
দুই খাতে
ব্যয় যথাক্রমে
১৮ ও
১৩৩ টাকা।
ট্যাক্সিক্যাব
১০ বছরে
একবার বড়
ধরনের মেরামত
(ওভারহেলিং) করা হবে। এতে
ব্যয় হবে
৫ লাখ
টাকা।
দৈনিক এ
খাতে ব্যয়
ধরা হয়েছে
১৬৬ টাকা। মাসিক
গ্যারেজ ভাড়া
২ হাজার
টাকা, ব্যবস্থাপনা
ফি ৭
হাজার ৬শ
টাকা ও
নৈমিত্তিক ব্যয় ৪ হাজার ২শ
টাকা।
এ হিসাবে,
খাত ৩টিতে
দৈনিক ব্যয়
যথাক্রমে ৮০,
১৬৬ ও
৩০৪ টাকা। এছাড়া
দৈনিক জ্বালানি
ব্যয় ১
হাজার ৫শ
টাকা ও
রুটিন মেনটেইনেন্স
ব্যয় ৬শ
টাকা।
এ হিসাবে,
ট্যাক্সিক্যাবের কিলোমিটারপ্রতি অবচয় মূল্য ৫
টাকা ৩৪
পয়সা, চালকের
বেতন-বোনাস
৪ টাকা
৪৪ পয়সা,
জ্বালানি ১০
টাকা, টায়ার-টিউব ৮৯
পয়সা, রুটিন
মেনটেইনেন্স ৪ টাকা, ওভারহেলিং ব্যয়
১ টাকা
১১ পয়সা,
গ্যারেজ ভাড়া
৫৩ পয়সা,
রোড ট্যাক্স
ও ফি
১ টাকা
৩৭ পয়সা,
ব্যাটারি ১২
পয়সা, নৈমিত্তিক
ব্যয় ১
টাকা ১১
পয়সা, ম্যানেজমেন্ট
ফি ২
টাকা ৩
পয়সা।
সব মিলে
ট্যাক্সিক্যাব পরিচালনায় কিলোমিটারপ্রতি
ব্যয় ৩০
টাকা ৯৪
পয়সা।
এর ওপর
১০ শতাংশ
হারে ৩
টাকা ৯
পয়সা মুনাফা
ধরা হয়েছে। এতে
ট্যাক্সিক্যাবের কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া হবে ৩৪
টাকা।
এ
প্রসঙ্গে বিআরটিএর
চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম জানান,
ট্যাক্সিক্যাবের ভাড়া যথাযথ হয়েছে।
এক্ষেত্রে সবদিক বিবেচনা করে ভাড়া
নির্ধারণ করা
হয়েছে।
যানজটের কারণে
রাজধানীতে এখন গাড়ি চালানো কঠিন
হয়ে পড়েছে। এজন্য
দৈনিক ১৫০
কিলোমিটার ধরে ব্যয় বিশ্লেষণ করা
হয়েছে।
ব্যাংক ঋণ
নিয়ে কোম্পানিগুলো
ট্যাক্সিক্যাব আমদানি করছে। এজন্য
এর সুদ
ভাড়া থেকেই
দিতে হবে। আর
নীতিমালা অনুযায়ী
ট্যাক্সিক্যাবের লাইফ টাইম হবে ১০
বছর।
এ কারণে
অপচয় এত
বেশি ধরা
হয়েছে।
বর্তমানে
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত
ট্যাক্সির ন্যূনতম ভাড়া ৬০ টাকা। যা
প্রথম দুই
কিলোমিটার বা তার কম পথ
ভ্রমণের জন্য
প্রযোজ্য।
পরবর্তী প্রতি
কিলোমিটারের জন্য ভাড়া ১৫ টাকা। আর
যাত্রাবিরতিকালে প্রতি দুই মিনিটের জন্য
৩ টাকা
৭৫ পয়সা
করে ভাড়া
দিতে হয়। ২০১০
সালে এ
ভাড়া নির্ধারণ
করা হয়। অর্থাৎ
৪ বছরের
ব্যবধানে ট্যাক্সিক্যাবের
ভাড়া দ্বিগুণের
বেশি বাড়ছে।
এদিকে
গাইডলাইন সংশোধন
করে ট্যাক্সিক্যাব
ঢাকা থেকে
নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও
নরসিংদী পর্যন্ত
চলাচলের অনুমতি
দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা
বলছেন, একটি
ট্যাক্সিক্যাব দিনে একবার মানিকগঞ্জ ও
একবার নারায়ণগঞ্জ
ট্রিপ দিলে
৩শ কিলোমিটার
চলা সম্ভব। এছাড়া
নাভানা ট্যাক্সিক্যাবের
একাধিক চালক
জানান, নতুন
অবস্থায় তাদের
গাড়ি দৈনিক
৩শ কিলোমিটার
পর্যন্ত চলাচল
করত।
এখনো ট্যাক্সিক্যাব
২শ কিলোমিটার
চলাচল করছে।
জানা
গেছে, গত
২৩ মার্চের
আন্ত:মন্ত্রণালয়
সভায় একাধিক
সদস্য ট্যাক্সিক্যাবের
ভাড়া দ্বিগুণের
বেশি বাড়ানোর
বিরোধিতা করেন। অর্থ
মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জানান, গত চার
বছরে গড়ে
৭ থেকে
৮ শতাংশ
করে মূল্যস্ফীতি
হয়েছে।
এতে চার
বছরে চক্রবৃদ্ধি
হারে ধরলেও
৩৫ শতাংশের
বেশি মূল্যস্ফীতি
হয়নি।
এ হিসেবে
প্রথম দুই
কিলোমিটারের ভাড়া ৮০ টাকা ও
পরবর্তী প্রতি
কিলোমিটার ২০ টাকা হওয়া উচিত।
এ
প্রসঙ্গে যোগাযোগমন্ত্রী
ওবায়দুল কাদের
কয়েক দিন
আগে বলেছেন,
ট্যাক্সিলোতে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এছাড়া
ট্যাক্সিগুলো ট্রাকিং সিস্টেমের আওতায় থাকবে,
পথে কোনো
ধরনের অসুবিধা
হলে তাৎক্ষণিক
ব্যবস্থা গ্রহণ
করা যাবে। এ
বিষয়গুলো বিবেচনা
করে ভাড়া
কিছুটা বেশি
নির্ধারণ করা
হয়েছে, তবে
জনগণ প্রত্যাখ্যান
করলে ভাড়া
পুনর্র্নিধারণ করা হবে।
উল্লেখ্য,
রাজধানীতে ২৫০টি ট্যাক্সিক্যাব পরিচালনার লাইসেন্স
নিয়েছে তমা
কনস্ট্রাকশন। আর রাজধানীতে ২৫০টি
ও চট্টগ্রামে
১৫০টি এসি
ট্যাক্সিক্যাব পরিচালনার অনুমতি নিয়েছে আর্মি
ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট। তবে পহেলা
বৈশাখে প্রাথমিকভাবে
৪৭টি ট্যাক্সিক্যাব
রাস্তায় নামবে। পর্যায়ক্রমে
বাকিগুলো নামানো
হবে।
সূত্র - আনিসুর রহমান তপন : দৈনিক আমাদের সময় ।
0 comments:
Post a Comment