প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে ঢাকা
ঢাকাকে বদলে দেয়ার মহাপরিকল্পনায় জানা গেছে, আসন্ন জুনের মধ্যে শুরু হচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ। ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত ও ভিআইপি সড়ক শাহবাগ-রূপসী বাংলা হোটেল (প্রাক্তন শেরাটন)-বাংলামটর-সোনারগাঁও ইন্টারসেকশনে আন্ডারপাস নির্মাণের প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬৫ কোটি টাকা। নির্মিতব্য মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ আগামী বছরের ডিসেম্বর নাগাদ শেষ হওয়ার কথা।
জনবসতিপূর্ণ পুরান ঢাকার যানজট নিরসন ও উন্মুক্ত স্থানের সংস্থান করার লক্ষ্যে নেয়া হয়েছে আরবান রিন্যুয়াল প্রকল্প। গাজীপুর থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেন নির্মাণের কাজ গত বছরের ৩১ অক্টোবর শুরু হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে খিলগাঁও ফ্লাইওভারের সায়েদাবাদ প্রান্তে ৬২০ মিটার দীর্ঘ আরেকটি লুপ নির্মাণের কাজ চলছে, যা আগামী বছরের জুন নাগাদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বলেছেন, এসব কার্যক্রম ও প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকার যানজটের তীব্রতা কমে যাবে। যার ফলে ঢাকাকে একটি অত্যাধুনিক রাজধানী হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ঢাকা শহরের জনসংখ্যা ছিল ২ লাখ ৮০ হাজার। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে এ সংখ্যা ১ কোটি ৬০ লাখ। যা ১৯৭২ সালের তুলনায় প্রায় ৬০ গুণ বেশি। আগামীতে জ্যামিতিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই অত্যাধুনিক রাজধানী গড়ার পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। এর মূল অংশের দৈর্ঘ্য হবে ৪৭ কিলোমিটার। বর্তমানে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম পর্যায়ের ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম চলছে।
এক্সপ্রেসওয়ের পাইল ড্রাইভিং শুরু হলে ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা দেখা দেয়। যার কারণে গত বছরের মে মাসে অনুষ্ঠিত এক সভায় ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমি অধিগ্রহণ যথাসম্ভব পরিহারের লক্ষ্যে এই এক্সপ্রেসওয়ের এলাইটমেন্ট ও ডিজাইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়। পরে ডিসেম্বর বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইটালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে সরকারের সংশোধিত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
বিমানবন্দর-গাজীপুর বিআরটি লেন
গাজীপুর থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেন নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এরমধ্যে ৬৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে ৪ কিলোমিটার এলিভেটেড অংশ সেতু বিভাগ অধীনস্থ সংস্থা 'বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ' বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটি ইতিমধ্যে একনেকের অনুমোদন পেয়েছে। উভয়দিকে ঘণ্টায় ৪০ হাজার যাত্রী পরিবহনে সক্ষম বিআরটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে গতবছরের ৩১ অক্টোবর। বিআরটি নির্মাণ, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য শতভাগ সরকারি মালিকানায় 'ঢাকা বিআরটি' গঠন করা হয়েছে।
ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত প্রায় ৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে প্রাক-সম্ভাব্যতা সম্পন্ন হয়েছে। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। এটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ বা পিপিপির ভিত্তিতে নির্মাণে বিনিয়োগকারী নিয়োগে 'এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট' (ইওআই) আহ্বান করা হলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সাতটি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দাখিল করে। অন্যদিকে একটি চীনা সরকারি প্রতিষ্ঠান জি-টু-জি ভিত্তিতে নির্মাণে আগ্রহ দেখালে বাংলাদেশ সরকার এতে সম্মতি দেয়। সরকার আশা করছে, এই এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজও যথাসময়ে শুরু করা সম্ভব হবে।
মেট্রোরেল প্রকল্প
উত্তরা তৃতীয় ফেজ থেকে মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (মেট্রোরেল) বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে গতবছরের নভেম্বরে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা। এটা হবে ১৬টি স্টেশনবিশিষ্ট। এতে উভয়দিকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। মেট্রোরেল নির্মাণ, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকার 'ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড' (ডিএমটিসিএল) গঠন করেছে।
মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার
ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ এলাকায় চার লেন বিশিষ্ট ৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটার 'মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার' নির্মাণের কাজ চলছে। এই ফ্লাইওভারটি সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর, মালিবাগ ও চৌধুরীপাড়াসহ মোট ৮টি মোড় অতিক্রম করবে। এছাড়া মগবাজার ও মালিবাগ রেলক্রসিং অতিক্রম করবে এটি। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর নাগাদ ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এসব উল্লেখযোগ্য প্রকল্প ছাড়াও রাজধানীর উন্নয়নে যোগাযোগ খাতে আরো বেশকিছু প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- ৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে মিরপুর-সেনানিবাস বাইপাস নির্মাণ, ৪৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মিরপুর দারুস সালাম সড়ক (আনসার ক্যাম্প) থেকে কচুক্ষেত পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ, ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ্যাসফল্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে ঢাকা শহরের ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার উন্নয়ন, ১ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নগর অঞ্চল উন্নয়ন, ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিরুলিয়া-আশুলিয়া সড়ক নির্মাণ, ১০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ডেমরা-আমুলিয়া-রামপুরা (শেখের জায়গা সংযোগ) সড়ক নির্মাণ, ৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে শিরনীর টেক থেকে গাবতলী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং ৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে গাবতলী-সোয়ারীঘাট (বাদামতলী) সড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ।
রাজধানীকে আধুনিক শহরে রূপান্তরের লক্ষ্যে ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নেও কিছু প্রকল্প নিয়েছে সরকার। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ঢাকা শহরের সার্কুলার রেললাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা, ঢাকা-টঙ্গী সেকশন তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন নির্মাণ, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলকে ডাবল লাইনে উন্নীত করা এবং ঢাকা-কুমিল্লা কর্ডলাইন প্রকল্প।
সূত্র - শামছুদ্দীন আহমেদ, দৈনিক ইত্তেফাক।
0 comments:
Post a Comment