(প্রিয়.কম) ‘লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা’ গেয়ে বিশ্ব রেকর্ড করার উদ্যোগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ব্লগ সরগরম। শুধুই রেকর্ড করার উদ্দেশ্যে ৫০ কোটি টাকা খরচ করে এই অনুষ্ঠানের উদ্যোগ কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। অন্যদিকে এই টাকা খরচ করার দায়িত্বে ছিল সংস্কৃতিমন্ত্রীরই নিজের প্রতিষ্ঠান। এসব নিয়েও সমালোচনার ঝড় ওঠেছে ফেসবুক-ব্লগে।
সস্তা দেশপ্রেম
ব্লগার
মারুফ অভিক সামহোয়ার ইন ব্লগে
‘সস্তা দেশপ্রেম’ নামে একটি ব্লগ লিখেছেন। ব্লগটি এরকম- আগামী ২৬শে মার্চ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে সন্মিলিতভাবে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হবে। শুনলাম সরকার এই কার্যক্রমের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে!! বিভিন্ন স্কুল-কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়য়ের ছাত্র ছাত্রীদের সেখানে নেয়া হচ্ছে বাধ্যতামূলকভাবে! শুনলাম গান গাওয়ার পরে লাঞ্চ করাবে। ভালো কথা!! এবার আসি কিছু বিশ্লেষণ এ। একত্রে জাতীয় সংগীত গাইলে কিনবা একত্রে পতাকা বানিয়ে রেকর্ড করে কি আসলেই দেশপ্রেম প্রকাশ পায়??!! আমার অফিসের এক জার্মান কলিগ একবার আমাকে বলেছিলো তারা নাকি স্কুলে জাতীয় সংগীত গায় না এমনকি তাদের দেশে অনেকে নাকি জাতীয় সংগীত জানেও না!! শুধু জার্মানি নয় পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে স্কুলে জাতীয় সংগীত গাওয়ার উদাহরন হয়ত পাওয়া যাবে না। তার মানে কি তাদের মাঝে দেশপ্রেম নেই??!!! উত্তর হচ্ছে ''আছে'' আছে বলেই আজ তারা এত উন্নত!! তারা ২৪ ঘন্টা দেশপ্রেম দেশপ্রেম করে না বরং কাজের মাধ্যমে সেটা করে দেখায়। একটা প্রবাদ আছে ''চোরের মন পুলিশ পুলিশ'' আমাদের অবস্থা হইছে তাই!! যে দেশ দুর্নীতিতে ৫ বার টানা চ্যাম্পিয়ন হয় তাদেরই দরকার পড়ে এইসব রেকর্ড বানিয়ে নিজেদের দেশপ্রেম দেখানোর!! এই ১০০ কোটি টাকা যদি গরীব মানুষগুলোর জন্য খরচ করা হতো হয়ত সেটাই আসল দেশপ্রেম হত। কারন দেশপ্রেম বলতে দেশের মানুষকে প্রেম করা বুঝায় আমি মনে করি। এই ধরনের উদ্ভট কর্মকাণ্ড এদেশে হচ্ছে আরো হবে কারন কোন একটা সমাজ পরিবর্তন করতে পারে তরুণরা। অথচ আমাদের দেশের তরুণরা মনে করে দেশপ্রেম মানে হচ্ছে কেউ যদি কোন খেলায় পাকিস্তান-ইন্ডিয়া কে সাপোর্ট দেয় তাকে গালি দেয়া ক্রিটিসাইজ করা। সারাবছর যারা ব্যস্ত থাকে রেষ্টুরেন্টে খাইতে,গার্ল ফ্রেন্ডদের নিয়া ঘুরতে,যাদের কোন ভ্রূক্ষেপ নেই দেশে কি হচ্ছে!! তাদের দেশপ্রেম উতলিয়ে পড়ে ফেসবুকে যদি কেউ পাকিস্তান সাপোর্ট করে ক্রিকেটে!! শেষে একটা কথাই বলতে হয়:
''আমার দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে''
৫০ কোটি টাকার জাতীয় সঙ্গীতের বিশ্ব রেকর্ড এবং সুরেন্দ্র কারবারি পাড়ার ১.৫ লক্ষ টাকার স্কুলের ছাদ- আমি ব্যবহৃত হতে অস্বীকার করি
‘উপরোক্ত শিরোনামে’ ‘শাহবাগ থেকে হেফাজত: রাজসাক্ষীর জবানবন্দী’ বইয়ের লেখক
জিয়া হাসানও তার ফেসবুকে লিখেছেন। লেখাটি এরকম-
আজকে সকাল ১০টা থেকে ৫০ কোটি টাকা ব্যয় করে (সূত্র: সংস্কৃতি মন্ত্রী), মন্ত্রী এমপিদের সরকারের সাথে ব্যবসা করার আইন ভঙ্গ করে, প্রতিটা ব্যাংক এবং বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠানের সাথে বাধ্যতামূলক চাঁদাবাজি করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের এক সাথে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার বিশ্ব রেকর্ড।
একটা মর্মস্পর্শী ছবি
কে জানে, এমন একটা রেকর্ড প্রতিদিন আমরা ভাঙছি কিনা, স্কুল ঘর না থাকায় পৃথিবীতে সর্বোচ্চ সংখ্যক ছাত্রছাত্রী প্রতিদিন খোলা মাঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার এবং পাঠ দান নেয়ার। কিন্তু এর মধ্যেই ফেসবুকে, তন্দ্রা চাকমার স্ট্যাটাস অনেকেই দেখেছেন, খাগড়াছড়ির সদর উপজেলায় সুরেন্দ্র কারবারি পাড়ার মহাসেনের আঘাতে ভেঙ্গে যাওয়া স্কুলের টিন-শেড ঠিক করে দেয়ার জন্যে ১.৫ লক্ষ টাকা জোগাড় করতে।
পেছন থেকে তোলা, একটা ভাঙ্গা স্কুল ঘরের সামনে চার লাইনে দাড়িয়ে শপথ নিতে থাকা এই অত্যন্ত মর্মস্পর্শী এই ছবিটা দেখলেই বোঝা যায়, এই রাষ্ট্র-যন্ত্র কি ভাবে তার জনগণের বেসিক চাহিদা পূরণ করতে পদে পদে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।
এক বছর আগে হয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের ভেঙ্গে যাওয়া স্কুলঘর ঠিক করতে যেই রাষ্ট্র ব্যর্থ, সেই রাষ্ট্রের কোন অধিকার নাই ৫০ কোটি টাকা খরচ করে, জাতীয় সঙ্গীতের বিশ্ব রেকর্ড করার।
কিন্তু সেই গুলো করছে আওয়ামী লিগের সরকার। কেন করছে ? কারণ, এই দলের জনগণের কাছে কোন দায়বদ্ধতা নাই। এই দল জানে, তারা মানুষের ভোট জিতে ক্ষমতায় আসে নাই। তারা জানে, তারা ক্ষমতায় আসছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে দেশকে দুইটি ভাগে ভাগ করে বিভিন্ন রকম গুটি-বাজি করে এবং ইন্ডিয়ার স্বার্থ রক্ষা করার মাধ্যমে। ফলে তাদের সমস্ত চিন্তা চেতনায় এই দুইটি ধারা প্রবাহিত হয়।
এই জন্যে আমরা দেখেছি, সমালোচনার মুখেও তারা ৫০ কোটি টাকা খরচ করে, এই অর্থহীন অনুষ্ঠানটা করে যাচ্ছে। কারো কথায় কান দিচ্ছে না। এই গুলো ক্লাসিক স্বৈরচারী আচরণ। বড় বড় মূর্তি বানানো, বড় বড় অনুষ্ঠান করা। স্বৈরাচার নিজেই তার গড়া এই ফানুসে উড়ে বেরায়। তার ধারনা থাকে, মানুষের জীবনে শান্তি সুখের নহর বয়ে যাচ্ছে। এই জন্যে স্বৈরাচার নিয়ম করে, আচ্ছা জনগণের যেহেতু অনেক টাকা, সেহেতু আমরা সব রাস্তায় টোল বসিয়ে দেই। বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেই।
এই অনুষ্ঠান আরও অনেক গুলো সম্পূরক প্রশ্নের জন্ম দেয়
তা হলো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এই ভাবে কোন অনুষ্ঠানের জন্যে বাধ্যতামূলক চাঁদাবাজি করা আইন সম্মত কি না? এ কোন রাষ্ট্র সৃষ্টি করলাম আমরা যার সরকার এই ধরনের ভ্যানিটি প্রজেক্টের জন্যে নিজেই চাঁদাবাজি করে? এই টাকার একাউন্টেবিলিটি কে নিশ্চিত করছে? এই টাকাটা অডিটেবেল কিনা? সরকার যাদের কাছ থেকে এই টাকা নিয়েছে, তারা এই অনুদানের কি পে-ব্যাক নিবে ?
এই টাকা সরকারী নিয়ম মেনে খরচ হয়েছে কিনা। এবং এই অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি-মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুরের প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিকের তত্ত্বাবধানে হওয়াতে মন্ত্রী এমপিদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সরকারের সাথে ব্যবসা না করার যে নিয়ম তার প্রকাশ্য বাত্যয় হলো, দুদক তার তদন্ত করবে কিনা? এই রাষ্ট্র কি, এতো নাঙ্গা হয়ে গ্যেছে যে, এই ধরনের দুর্নীতি করতে আজ রাখ ঢাক ও করতে হয় না?
এই প্রশ্নগুলোকে উপেক্ষা করে
আজকে যখন সমালোচনার ঝড় ওঠে, ইসলামী ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা নেয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বরখেলাপ কিনা তখন বোঝা যায়, সরকার চাইছে নবীনদেরকে এবং প্রতিবাদীদেরকে দেশপ্রেমের একটা ধোঁয়াটে অন্ধকারে বুঁদ করে রাখা যাতে, আজকের প্রজন্ম, তার চোখের সামনে লুটপাট দেখেও সঠিক প্রশ্ন করতে ব্যর্থ হয়। যাতে সে সুশাসন না চায়, প্রকাশ্য দুর্নীতি দেখলেও বিভাজিত রাজনীতিতে নিজের অবস্থানের কারণে চুপ থাকে, প্রতিবাদী না হয়।
যাতে সে দেখতে ব্যর্থ হয়, সুরেন্দ্র কারবারি পাড়ার বাচ্চাদের সরকারী স্কুলের ঘর মাত্র ১.৫ লক্ষ টাকার জন্যে, নির্মাণ করতে ব্যর্থ হয় যে সরকার সেই সরকারের ৫০ কোটি টাকার বিনিময়ে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার লুটপাটের মহোচ্ছবের কোন অধিকার নাই। এই উৎসব বার বার মনে করিয়ে দেয়, সেমুয়েল জনসনের বিখ্যাত উক্তি, patriotism is the last refuge of a scoundrel । বদমাইশের শেষ আশ্রয় হচ্ছে দেশ প্রেম।
এই প্রজন্মকে মনে রাখতে হবে , দেশ কিন্তু মা। মাকে নিয়ে ব্যবসা করতে হয় না
এবং যারা করে, তারা কোন একটা ধান্দার জন্যে করে। এই প্রজন্মের চ্যালেঞ্জ, সেই ধান্ধাবাজদের সৃষ্ট ধোয়ার থেকে সত্যকে দেখতে পাওয়া এবং সঠিক প্রশ্নটা করা। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার দায়, এই চেতনা ব্যবসায়ীদের হাতে ব্যবহৃত না হওয়া।
আজকে আমাদেরকে তাই এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর চাইতে হবে। এই চাদাবাজি আইনসম্মত কিনা ? এর একাউন্টিবিলিটি কে দেখবে ? এবং মন্ত্রীর প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিক আইন ভঙ্গ করে কিভাবে এই কাজ পায় ?
যাদের সামর্থ্য আছে, তারা সুরেন্দ্র কারবারি পাড়ার মহাসেনের আঘাতে ভেঙ্গে যাওয়া সরকারী স্কুলের পরিচালক দয়ানন্দ দাদার সাথে যোগাযোগ করবেন ০১৮২৮৮৬১৩০৩ নাম্বারে। এই স্কুলটি ঠিক করতে ১.৫ লক্ষ টাকা লাগবে। সরকার যদি না করে, আমরাই পারবো এই স্কুল ঠিক করে দিতে। এইটাই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা।
আই রিফিউজ টু বি ইউজড, আমি ব্যবহৃত হতে অস্বীকার করি। এবং এই ৫০ কোটি টাকার প্রতিটা পয়সার হিসেব চাই। সবাইকে ২৬শে মার্চের শুভেচ্ছা।
চিত্র ৩: আয়োজন ভাঙলে এভাবেই পায়ের নিচে পিষ্ট হয় জাতীয় পতাকা
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যবসায়ীদের ঘেন্না
অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও একটি অনলাইন পত্রিকার প্রধান সহ-সম্পাদক
মাহবুব রশিদ এ প্রসঙ্গে
‘ফেসবুকে একটি লেখা’ লিখেছেন। লেখাটি এরকম-
আলী যাকের-সারা যাকের-আসাদুজ্জামান নূর।
প্রত্যেকেই অনেক উঁচুদরের অভিনেতা। শৈশবে আলী যাকেরের অভিনয়ে 'সক্রেটিসের জবানবন্দি' নামের নাটকটি দেইখা অনেক আপ্লুত হইছিলাম। নূরের অভিনয়ে 'নুরুলদিনের সারাজীবন' আমার শিশুকালে আমার ভবিষ্যতের গণমূখি চিন্তার বুনিয়াদ।
এদের অভিনয় একটা প্রজন্মরে গড়ে তুলেছে, অস্বিকার করার উপায় নাই।
কিন্তু আমার দেশের প্রতিভাবানেরা বেশিরভাগই তাদের বাহ্যিক জীবন, তত্ত্বের জীবনের সাথে আপন চর্চার মিল রাখেন না।
সভা-সেমিনারে, নাটকে-সিনেমায়, গানে-বয়ানে, লেখা-কবিতায় তারা অনেক ভাল কথা বলে থাকেন। নিজের জীবনে তারা সেগুলা খাটান না।
এদেরও তো খেয়ে বাঁচতে হয়, করুক নাহয় কিছু ব্যবসাপাতি।
কিন্তু তারা গণবিরোধী অবস্থান নিবেন তা তো হবে না।
আগেই তারা সরাসরি দেশের শত্রুর পক্ষে দেশের সম্পদ চোরদের সাথে কাজ করতেন।
বাংলাদেশে ফুলবাড়ী কয়লাখনিতে উন্মুক্ত খননের পক্ষে জনমত গঠন তথা পাবলিক রিলেশানস (পিআর) তৈরির কাজ করছে এশিয়াটিক এর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান ‘ফোরথট পিআর’ নামের একটা পিআর এজেন্সি! অর্থাৎ তারা বহুজাতিক এশিয়া এনার্জির জাতীয় সম্পদ লুটপাটেরও সহযোগী।
এখন সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ৫০ কোটি টাকা খরচ করে জাতীর সঙ্গীত গাইবার বিশ্বরেকর্ড করার দায়িত্বও পেয়েছে এই ফোরথট পিআর।
একজন শিল্পির তার দেশ জাতির প্রতি কমিটমেনট থাকার কথা। সেই সব মূল্যবোধের পাছায় লাথি মেরে আগের আমলে লীগ সরকারের ভাল মন্দ সব কিছুতে আনক্রিটিক্যাল আনুগত্যের পুরোষ্কার পেয়েছেন নূর। এবার তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হয়েছেন। একই সাথে অনৈতিক ভাবে আছেন একটা লাভজনক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে।
নিজের মন্ত্রণালয়ের কন্ট্র্যাক্ট পাইয়ে দিচ্ছেন নিজের মালিকানার প্রতিষ্ঠানকে।
শুধু এইটুকু নৈতিক অবক্ষয় তার ও তাদের শিল্পিসত্বার সমস্ত হিপোক্রিসিকে নগ্ন করে প্রকাশ করে। টাকা খরচ করে এ্যান্থেম গেয়ে রেকর্ড করা কতটা জরুরি সেকথা নাহয় বাদই দিলাম।
এদের চেয়ে তো শামীম ওসমান ভাল। তিনিও দাবি করেন তিনি গড ফাদার, সন্ত্রাসী- হিপোক্রিসি করেন না। গিরগিটির মত নিজেকে লুকিয়ে রাখেন না। প্রগতিশীল চাপ দাঁড়ি মাখা মুখে পিছিলা হাসি নিয়ে দেশের মানুষের পকেট কাটেন না। সরাসরি রাম দা নিয়ে কোপাতে যান। আমরা চিনতে পারি আমাদের শত্রুকে।
এরা নাকি আমাদের দেশের শিল্পি। ঘেন্না হয়।
গণহত্যাকারী পাকিস্তানী আর রাজাকারদের প্রতি নয় শুধু, এই সব মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যাবসায়ীদের ঘেন্না জানায়া ২৬ মার্চের লেখা দিলাম।
জাতীয় সংগীত নিয়ে আহ্লাদ করাই সহিহ্ দেশপ্রেম!
অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক
কল্লোল মুস্তাফা এ প্রসঙ্গে একটি লেখা লিখেছেন।
‘লেখাটি এরকম’-
‘লাখো কন্ঠে সোনার বাংলা’র মূল উদ্যোক্তা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আর অর্থের বিনিময়ে এটি আয়োজনের দ্বায়িত্ব পেয়েছে এশিয়াটিক এর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান ‘ফোরথট পিআর’নামের একটা পিআর এজেন্সি।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নূর আবার এই ফোরথট পিআর নামের প্রতিষ্ঠানটির ব্যাবস্থাপনা পরিচালক বা ম্যানেজিং ডিরেক্টর!
আসাদুজ্জামান নূর নিজেই সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছিলেন এই অনুষ্ঠান আয়োজন করতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ৫০ কোটি টাকা খরচ হবে, অবশ্য তিনি বলেননি তার প্রতিষ্ঠান ফোরথট পিআর এর ভাগে ঠিক কত পড়েছে।
জনাব নুর এর মাধ্যমে যে গুরুতর অপরাধ করেছেন তা হলো- সরকারি দ্বায়িত্বে থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের লাভজনক পদে থাকা এবং দেশপ্রেমের রেকর্ডের নামে এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাতে তার নিজের প্রতিষ্ঠান সরাসরি লাভবান হয়। ফলে ‘লাখো কন্ঠে সোনার বাংলা’ নামের আয়োজনটি কতটা দেশপ্রেম থেকে করা হয়েছে আর কতটা ব্যাবসায়িক ধান্দা থেকে করা হয়েছে সেই প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক।
কিন্তু এরচেয়ে মারাত্মক সমস্যা হলো- যে ফোরথট পিআর প্রতিষ্ঠানটি লাখো কন্ঠে সোনার বাংলা নামক দেশপ্রেমের প্রদর্শনী ও রেকর্ডের আয়োজন করছে, সেই পিআর প্রতিষ্ঠানটি আবার একই সাথে এশিয়া এনার্জি বা জিসিএম রিসোর্স নামের বহুজাতিক কোম্পানির পিআর এজেন্সি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছে! যে এশিয়া এনার্জি উন্মুক্ত খননের মাধ্যমে জাতীয় সম্পদ লুন্ঠনের পায়তারা করেছে, শেয়ার বাজারে ফুলবাড়ির কয়লা নিজেদের বলে দেখিয়ে ব্যাবসা করছে, যে এশিয়া এনার্জির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে ২০০৬ সালের ২৬ আগষ্ট ফুলবাড়ির আমিনুল, তরিকুল, সালেকিন জীবন দিয়েছেন এবং অসংখ্যা মানুষ আহত হয়েছেন যাদের কেউ কেউ পঙ্গুজীবন যাপন করছেন, সেই এশিয়া এনার্জির দালাল একটি প্রতিষ্ঠান এবং দালাল একজন ব্যাক্তির দ্বায়িত্বে থাকা মন্ত্রণালয় এই কথিত দেশপ্রেমের প্রদর্শনীর আয়োজন করছে!
দেশপ্রেম কাকে বলে আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জিনিসটাই বা কি? দেশপ্রেম কি দেশের মানুষ ও সম্পদকে বাদ দিয়ে কেবল দেশের পতাকা আর জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি লোকদেখানো ভালোবাসার কর্পোরেট প্রদর্শনী?
নাকি দেশপ্রেম বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সংজ্ঞা পাল্টে গেছে! দেশটাকে ভাগা মাছের মতো দেশি/বিদেশী বিভিন্ন কোম্পানির হাতে তুলে দিতে দিতে, হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করতে করতে, দেশের মানুষের বারোটা বাজাতে বাজাতে বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানির আয়োজনে জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে আহল্লাদ করাকেই বুঝি আজকাল সহিহ দেশপ্রেম বলা হয়!
আসলে যেই দেশের শাসকদের মানুষের জীবন ও সম্পদের প্রতি কোন প্রেম নাই, সেই দেশের শাসকদেরকেই কোটি টাকা খরচ করে দেশপ্রেমের প্রদর্শনী করতে হয়- মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিদেশী কোম্পানির দালালদের আয়োজনে ‘লাখো কন্ঠে সোনার বাংলা’ অনুষ্ঠানটি তারই প্রমাণ।
চিত্র ৫: লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা’ এর আয়োজনের সময় জাতীয় পতাকা বসার জন্য ব্যবহৃত হয়। ছবিটি নিয়ে ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ‘লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা'-র উদ্যোক্তা বাংলাদেশ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। আর সার্বিক তত্ত্বাবধান ও সহযোগিতায় রয়েছে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ।
সূত্র - প্রিয়.কম.priyo.com
Wednesday, 26 March 2014 - 9:09pm