সত্য জানি, সত্য মানি এবং সত্যের সাথে থাকি। সকল খবর হোক সত্য ও নিরপেক্ষ।

সত্যকে অস্বীকার কারনে, গত চার দশকে জাতি হিসাবে আমরা মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে পারিনি । স্বাধীনতার প্রায় অধ শতাব্দীতে জাতি তার কাঙ্তিত সাফল্য পায়নি।

মোর নাম এই বলে ক্ষ্যাত হোক – আমি তোমাদেরই লোক

যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এ জাতি সমৃদ্ধিলাভ করেছে - আমরা তাদের ভুলব না । তোমরা অমর হয়ে থাকবে জাতীর ভাগ্যাকাশে। আমাদের ভালবাসা ও দোয়া রইল।

IT BD SOFT. একটি বিশ্বস্থ আইটি ট্রেনিং সেন্টার

------Pls visit http://itbdsoft.tk ------- কম্পিউটার শিক্ষা প্রসার ও বিকাশে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। শিক্ষা হোক সবার জন্য উম্মুক্ত ও সহজলভ্য।

পযটন হোক – জাতীয় উন্নতির একমাত্র হাতিয়ার।

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া। কক্সবাজার, সুন্দরবন, কুয়াকাটা, নীলগিরি সহ হাজারো দৃষ্টি নন্দন অপার সৌন্দার্য ছড়িয়ে আছে এ জমিনে – জানি ও সমৃদ্ধ করি দেশমাতৃকাকে।

IT BD SOFT. একটি বিশ্বস্থ আইটি ট্রেনিং সেন্টার

------Pls visit http://itbdsoft.tk ------- কম্পিউটার শিক্ষা প্রসার ও বিকাশে / এছাড়াও আমরা ডোমিন- হোষ্টিং বিক্রি /আপনার সাইটের ভিজিটর বাড়ানো / সাইটিকে কে গুগল টপে আনতে আমাদের সাহায্য নিন।

Thursday, October 22, 2015

কৃষি নিয়ে পড়ে চাকরি আর চাকরি

কৃষি নিয়ে পড়ে চাকরি আর চাকরি

মো. শাহীদুজ্জামান | 
কৃষিই কৃষ্টি। এ দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। কৃষিতে উন্নতির কারণে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষিকে এগিয়ে নিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একাধিক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। কৃষিতে পড়াশোনা করে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অনেক ভালো চাকরি পাওয়া যায়। রয়েছে দেশের বাইরে কৃষি নিয়ে কাজ করার অপার সুযোগ। সব মিলিয়ে কৃষিবিদদের দিগন্ত এখন অনেক বিস্তৃত।
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশ কয়েকটি অনুষদে কৃষিভিত্তিক পড়াশোনা করানো হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও কৃষি বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি অনুষদের চাকরির ক্ষেত্র বেড়েছে। ভালো ফল করলে সেখানে শিক্ষকতার সুযোগও থাকছে। অনেকেই সরকারি কলেজেও শিক্ষকতা করছেন। বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের (বিসিএস) পরীক্ষায় কৃষিবিদেরা টেকনিক্যাল ও সাধারণ উভয় ক্যাডারে আবেদনের সুযোগ পাওয়ায় দেশের সব কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে পারবেন। তা ছাড়া কৃষি ব্যাংকগুলোতে অগ্রাধিকারসহ দেশের সরকারি ও বেসরকারি সব ব্যাংকে চাকরি করছেন কৃষিবিদেরা। বিভিন্ন সরকারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে লেকচারার হয়ে যোগ দেওয়া যায়।
কৃষি অনুষদ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা বিসিএসের মাধ্যমে উপজেলাগুলোতে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হয়ে যোগ দেন। এই কৃষিবিদদের খুবই পছন্দের জায়গা হলো সরকারি কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ তুলা গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৃত্তিকা গবেষণা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হয়ে যোগ দিচ্ছেন।
এ ছাড়া অনেক কৃষিবিদ উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ একাডেমি ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিলেও কৃষিবিদরা কাজ করছেন। এ ছাড়া সার কারখানা, চিনিকল, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি, কীটনাশক তৈরির কারখানা, ব্র্যাক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানিতেও কাজ করছেন।
দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার আমিষের চাহিদা পূরণে ভেটেরিনারি (পশুচিকিৎসা বিদ্যা) ও অ্যানিমেল হাজব্যান্ড্রি (পশুপালন) স্নাতকদের রয়েছে একচ্ছত্র অবদান। দেশের অন্যতম বড় শিল্প পোলট্রিসহ ডেইরি, পশুখাদ্য উৎপাদন ও পশুর ওষুধ উৎপাদনে কাজ করছেন ওই স্নাতকেরা। পশুচিকিৎসা ও পশুপালন দুটি আলাদা ক্ষেত্রে।

বিসিএসে টেকনিক্যাল ও সাধারণ উভয় ক্যাডারে সুযোগ পাওয়ায় দেশের সব কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে পা​রবেন। 

তা ছাড়া কৃষি ব্যাংকগুলোতে অগ্রাধিকারসহ দেশের সরকারি ও বেসরকারি সব ব্যাংকে চাকরি করছেন কৃষিবিদেরা
ভেটেরিনারি থেকে পাস করে বিসিএস পরীক্ষায় ভেটেরিনারিয়ানরা উপজেলাগুলোতে ভেটেরিনারি সার্জন হয়ে যোগদান করেন। একই পরীক্ষায় পশুপালন অনুষদের স্নাতকেরা উপজেলাগুলোতে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, পশু উৎপাদন কর্মকর্তা কিংবা পোলট্রি উন্নয়ন কর্মকর্তা হয়ে যোগ দেন এবং পরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পান। বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (বিএলআরআই) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হয়ে যোগ দেওয়া যায়। এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে বিভিন্ন সরকারি ফার্ম ও গবেষণা কেন্দ্র আছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটা, সাভারের বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় গো প্রজনন কেন্দ্র ও দুগ্ধখামার, কক্সবাজারের হরিণ প্রজনন কেন্দ্র, সিলেটে ছাগল প্রজনন কেন্দ্র, বাগেরহাটে মহিষ প্রজনন কেন্দ্র, বেশ কয়েকটি জায়গায় কুমির প্রজনন কেন্দ্র এবং বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে শুধু ভেটেরিনারি ও পশুপালন স্নাতকেরাই চাকরি করছেন। বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় ক্যাডারে কিউরেটর এবং নন-ক্যাডারে জ্যু অফিসার হিসেবে চাকরি করতে পারেন এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
তবে বেসরকারি পর্যায়েও কাজের ক্ষেত্র বেশ ব্যাপক। বেসরকারি দুগ্ধ ও পোলট্রির খামার, ব্র্যাক, ফিড মিল, এনজিও এবং আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকরির সুযোগ থাকছে। এসবের মধ্যে আড়ং ডেইরি, কাজী ফার্মস, আফতাব বহুমুখী ফার্ম, মিল্ক ভিটা, সিপি ফুড উল্লেখযোগ্য।
কৃষি প্রকৌশলীরা চাকরি ক্ষেত্রে ভালো স্থান দখল করে আছেন। কৃষি প্রকৌশলীদের পছন্দের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিল, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই), বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি। এসিআই, সিনজেনটা, কাজী ফার্মস ছাড়াও কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন অনেকে। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ানো হয়, যা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি খাদ্য প্রক্রিয়াজাত এবং খাদ্যের গুণগতমান নির্ধারণ করা প্রতিষ্ঠানে চাকরির পথ খুলে দেয়।
মিষ্টি পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের স্থান চতুর্থ। মাছ উৎপাদনে মৎস্যজীবীদের এই অভাবনীয় সাফল্যের পেছনে ফিশারিজ গ্র্যাজুয়েটদের গবেষণা ও অক্লান্ত পরিশ্রম। অনেক ফিসারিজ গ্র্যাজুয়েট ব্যক্তিগত খামার ও হ্যাচারি প্রতিষ্ঠা করে মৎস্য উৎপাদন কয়েক গুণ বাড়িয়েছেন।
বিসিএস পরীক্ষায় মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা বিসিএসের মাধ্যমে টেকনিক্যাল কোটায় উপজেলাগুলোতে মৎস্য কর্মকর্তা এবং মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হয়ে যোগ দেন। এ ছাড়া সাধারণ কোটায় অনেকেই যোগ দিচ্ছেন।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে ময়মনসিংহে স্বাদু পানি কেন্দ্র, চাঁদপুরের নদী কেন্দ্র, খুলনার লোনা পানি কেন্দ্র, বাগেরহাটের চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্র এবং কক্সবাজারে অবস্থিত সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হয়েছে যোগ দেওয়া যায়। এ ছাড়া এর পাঁচটি উপকেন্দ্রে এই সুযোগ থাকছে। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ফিশ সেন্টারে চাকরির সুযোগ থাকছে।
এ ছাড়া অনেক কৃষিবিদ উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ একাডেমি ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট, পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে চাকরি করা যায়। বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান পল্লী কর্মসহায়ক প্রতিষ্ঠান, প্রশিকা, আশা ও ব্র্যাকে রয়েছে অনেক চাকরিজীবী। এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি মৎস্য খামার, ফিড কোম্পানি এবং মৎস্য হ্যাচারিতে চাকরি করা যায়।
কৃষিবিদদের চাকরির ক্ষেত্র সম্পর্কে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আলী আকবর বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন কৃষিবিদদের অবদান। শস্য, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য গবেষণায় চাকরির পাশাপাশি প্রশাসনেও কৃষিবিদদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
কোথায় পড়বেন
কৃষি বিষয়ে পড়তে পারেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
এ ছাড়া স্বল্প পরিসরে কৃষিবিষয়ক পাঠক্রম চালু রয়েছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ফিশারিজ কলেজ ও ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজে।


সিরিয়া - আমেরিকার রুটিতে রাশিয়ার পিঁপড়া

সিরিয়া - আমেরিকার রুটিতে রাশিয়ার পিঁপড়া



সিরিয়ায় রুশ বাহিনীর বিমান হামলার পর থেকে লক্ষণীয় যে, পুরো আরব অঞ্চলে দ্রুতশক্তি ভারসাম্যেপালাবদল ঘটতে শুরু করেছে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর বিশ্বেরব্যালান্স অব পাওয়ারবাক্ষমতার ভারসাম্যনষ্ট হয়ে গিয়েছিল; আমেরিকার একক মোড়লিপনায় যে এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা তৈরি হয়েছিল, আমার প্রতীতি, তা আবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে বসেছে যুদ্ধ অর্থনীতির ওপর একান্ত নির্ভরশীল আমেরিকার কূটচাল এবং তার দোসরদের প্রত্যক্ষ পরোক্ষ কারণে লাখ লাখ সিরীয় নারী-পুরুষ-শিশু দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছে, বাধ্য হয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শরণার্থীর করুণ জীবন বেছে নিতে পশ্চিমা/ন্যাটোর বিমান হামলা, আমরা দেখেছি, আইএসের ধ্বংসলীলা থামাতে পারেনি; আসলে মধ্যপ্রাচ্যে তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং অস্ত্র বিক্রি বাড়ানোই আমেরিকার মূল লক্ষ্য, তারা আসলে আইএসকে থামানোর কার্যকর কোনো চেষ্টাই করেনি; তাদের এই নির্লিপ্ততার কারণেই সিরীয় শরণার্থীর সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে তারা যতটা আসাদবিরোধী ততটা আইএস বিরোধী নয়; তারা বরং চেয়েছে আইএসকে দিয়ে আসাদকে সরিয়ে দিতে আরবের সম্পদ গ্রাসের লোভে মার্কিন জোট চেয়েছে ইরাক লিবিয়ার মতো সিরিয়ায় তাদের বশংবদ কোনো গোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে রাশিয়া, চীন ইরাক যদি আসাদকে সমর্থন না দিতো তাহলে মার্কিন জোট তাদের খায়েশ কবেই মিটিয়ে ফেলত! আসাদ হতো সাদ্দাম নয়তো গাদ্দাফি!  

মার্কিন জোটের এই যুক্তিই তো ভুয়া যে, আসাদ চলে গেলে সিরিয়ায় শান্তি আর গণতন্ত্র আসবে কারণ সাদ্দাম নেই, গাদ্দাফি নেই, শান্তি আর গণতন্ত্র কী এসেছে ইরাক লিবিয়ায়? প্রতিদিন আমরা কেবল ওই দুটি দেশে গৃহযুদ্ধে হতাহতের খবর পাচ্ছি কোথায় উন্নয়ন, কোথায় স্থিতিশীলতা? এই তো সেই আমেরিকা যারা আরব ভূখণ্ডে সাম্রাজ্যবাদী কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যডিভাইড অ্যান্ড রুলপলিসি জারি রেখেছে বহুদিন ধরে; শিয়া-সুন্নির যুদ্ধংদেহী বিভক্তি, ইরানের ওপর হুমকি-ধমকি, আইএসের উত্থান বিকাশ ঘটানো, আরব ভূখণ্ডের এক বিস্তৃত অঞ্চল আইএস যখন দখল করে নিচ্ছে তখন দেখেও না দেখার ভান করা- সবই ওই পলিসির অংশ; আইএসের বিকাশের পেছনে যে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল আর সউদি আরব কাজ করেছে তা এখন দুধের বালকও জানে আইএসকে দমনের ভান এখন তারা করছে বটে কিন্তু তার আসল ইচ্ছা আসাদ রেজিমের পতন ঘটানো; এবং আইএসকে বাড়তে দেওয়ার যে সুযোগ তারা দিয়েছে তার ভেতরেই আমরা খুঁজে পাবো লাখ লাখ সিরীয়বাসীর শরণার্থীর জীবন বেছে নেওয়ার রাজনৈতিক নকশাটি কিন্তু এর মধ্য দিয়ে যে প্যারাডক্সের জন্ম হয়েছে তাহলো মধ্যপ্রাচ্যে ভুল মার্কিন নীতির কারণেই ইরান সুযোগ পেয়েছে সিরিয়ায় আইএস সুন্নিদের ওপর হামলা চালাতে, একইভাবে সাদ্দাম হোসেনের সাবেক সেনারা সুযোগ পেয়েছে আইএসের হয়ে লড়তে 

এই যখন অবস্থা তখন আইএস দমনে ইরানের পাশাপাশি রাশিয়ার বিমান হামলা যুদ্ধের মোড় মৌলিকভাবে ঘুরিয়ে দিয়েছে রাশিয়ার অব্যাহত আক্রমণে আইএস ইতিমধ্যে কাবু হতে শুরু করেছে; মানুষ বুঝে গেছে আইএস আসলে অত শক্তিশালী নয়, মার্কিন/ন্যাটো জোট চাইলে বহু আগেই আইএসকে দমন করতে পারত; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসলে চাওয়ার ক্ষেত্রে মোটেও সৎ ছিল না, তারা বরং আরবের ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের আশায় ছিল কিন্তু সে আশার রুটিতে পিঁপড়ে উঠিয়ে দিয়েছে রাশিয়া বাকি বিশ্ব আইএস লক্ষ্যস্থলে রাশিয়ার হামলাকে তাই স্বাগত জানিয়েছে; পেছনে আছে চীন কাজেই সে দিন খুব দূরে নয়, যখন আমেরিকাকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে লেজ গুটাতে হবে পুতিন কিন্তু সাবেক কেজিবি প্রধান, সহজে ছাড়ার লোক হবেন না তিনি- এই মেসেজটা অন্তত পুরো পৃথিবীকে দিতে তিনি সক্ষম হয়েছেন রাশিয়া জোট মধ্যপ্রাচ্যে এত জোরালোভাবে কখনই নিজেদের এনগেইজড করেনি, খেলায় সফল হলে পুরো পৃথিবীতেই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বড় ধরনের ঝাঁকুনি যে খাবে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় আর এর মধ্য দিয়ে বিশ্বে শক্তির ভারসাম্যের নতুন এক মেরুকরণের আশু সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে মার্কিন কর্তৃত্ব আর মোড়লিপনাই যে শেষ কথা নয়, বিশ্বের তাবৎ শান্তিকামী মানুষের মতো আমিও আত্মম্ভর আশায় সেই বাস্তবতা দেখার অপেক্ষায় আছি লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; robaet.ferdous@gmail.com
সূত্র - রোবায়েত ফেরদৌস, বাংলাদেশ প্রতিদিন

আদিবাসী না উপজাতি : একটি পর্যালোচনা

আদিবাসী না উপজাতি : একটি পর্যালোচনা



বিশ্ব আদিবাসী দিবস পালিত হচ্ছে আজ। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে আদিবাসী জনগণকে ‘উপজাতি, নৃ-গোষ্ঠী, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বা সম্প্রদায়’ হিসেবে অভিহিত করেছে সরকার। সরকারি ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে আদিবাসী নেতৃবৃন্দ তাদের মতো করে দিবসটি পালন করছে।
আদিবাসী নেতাদের মতে, বাংলাদেশে ৪৫টি জাতিসত্তার প্রায় ৩০ লাখ আদিবাসী রয়েছে। আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে পাহাড়ি ও সমতল অঞ্চলের বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠন। আদিবাসীদের দাবি এখন পর্যন্ত এড়িয়ে চলেছে সরকার।
আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র্র বোধিপ্রিয় লারমাও (সন্তু লারমা) জাতিসংঘ ঘোষিত ৯ আগস্টে ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস’ পালন করার পক্ষে। দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনেরও দাবি তার। তার বক্তব্য হচ্ছে, ‘সংবিধানে আদিবাসীদের উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আদিবাসী জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। সংবিধান সংশোধন করে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। বাংলাদেশের আদিবাসী জনগণ নানামুখী শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হয়ে চলেছে। অব্যাহত শোষণ-বঞ্চনার কারণে তাদের আত্মপরিচয়, আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও সরকার কখনো রাষ্ট্রীভাবে আদিবাসী দিবস উদযাপন করেনি।’
সন্তু লারমার দাবি, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে সময়সূচি ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করতে হবে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ২০০৭ সালে গৃহীত আদিবাসী অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্র অনুসমর্থন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
অন্যদিকে আদিবাসী শব্দ ব্যবহার না করার অনুরোধ সরকারের। সরকারের বক্তব্য হচ্ছে, বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী বর্তমানে দেশে আদিবাসীদের কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও বিভিন্ন সময় বিশেষ করে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে ‘আদিবাসী’ শব্দটি বার বার ব্যবহার হয়ে থাকে। পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এমনকি সরকারি ঘোষণায় আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠান, আলোচনা ও টকশোতে ‘আদিবাসী’ শব্দটির ব্যবহার পরিহার করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আলোচনা ও টকশোতে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ এবং সংবাদপত্রের সম্পাদকসহ সুশীল সমাজের প্রতি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আদিবাসী শব্দটির ব্যবহার পরিহারের জন্য পূর্বেই সচেতন থাকতে অনুরোধ পর্যন্ত জানানো হয়েছে।
উইকিপিডিয়ায় প্রদত্ত তথ্য মতে, আদিবাসী জনগণকে প্রাথমিক দিকে প্রথম জাতি, পাহাড়ি জনগোষ্ঠী, আদিম মানুষ, উপজাতি প্রভৃতি নামে চিহ্নিত করা হতো। আদিবাসী শব্দটির প্রকৃত সংজ্ঞা ও তাদের অধিকার নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিতর্ক প্রচুর। জাতিসংঘের বিভিন্ন পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার পরেও আদিবাসীদের ব্যাপারে সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য কোনো সংজ্ঞায় উপনীত হওয়া সম্ভব হয়নি।
সাধারণত কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় অনুপ্রবেশকারী বা দখলদার জনগোষ্ঠীর আগমনের পূর্বে যারা বসবাস করত এবং এখনো করে; যাদের নিজস্ব আলাদা সংস্কৃতি, রীতিনীতি ও মূল্যবোধ রয়েছে, যারা নিজেদের আলাদা সামষ্টিক সমাজ-সংস্কৃতির অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যারা সমাজে সংখ্যালঘু হিসেবে পরিগণিত, তারাই আদিবাসী। আদিবাসীদের উপজাতি হিসেবে সম্বোধন করা একেবারেই অনুচিত, কারণ তারা কোন জাতির অংশ নয় যে তাদের উপজাতি বলা যাবে। বরং তারা নিজেরাই এক একটি আলাদা জাতি।
পাঁচটি মহাদেশে ৪০টির বেশি দেশে বসবাসরত প্রায় ৫,০০০ আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কোটি। নীতি-নির্ধারণী প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ায় যুগে যুগে এদের অনেকে প্রান্তিকায়িত, শোষিত, বাধ্যতামূলকভাবে একীভূত হয়েছে এবং যখন এসব অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে নিজেদের অধিকারের স্বপক্ষে তারা কথা বলেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা দমন নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে। জাতিসংঘের আলোচনায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর এ বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে এবং ১৯৯৩ সালকে ‘আন্তর্জাতিক বিশ্ব আদিবাসী জনগোষ্ঠী বর্ষ’ ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৫ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ‘আন্তর্জাতিক বিশ্ব আদিবাসী জনগোষ্ঠী দশক’ ঘোষণা করা হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল আদিবাসীদের উদ্বেগের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া। এ ছাড়া ১৯৯৫ সালের ৯ আগস্টকে ‘বিশ্ব আদিবাসী দিবস’ ঘোষণা করা হয়। জাতিসংঘ ১৯৮২ সালে সর্বপ্রথম আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেয়।
আদিবাসীদের অধিকার বিশেষ করে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের বিষয়টি অনেক রাষ্ট্রের কাছে স্বস্তিদায়ক নয়। কারণ ওই সমস্ত দেশের জনগণের একটা বড় অংশই আদিবাসী। যেমন- কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত, চীন, পাপুয়া নিউগিনি এবং অধিকাংশ লাতিন আমেরিকার দেশসমূহ। বাংলাদেশ সরকারের মতে ‘বাংলাদেশে কোনো আদিবাসী জনগোষ্ঠী নেই’।
উইকিপিডিয়ায় প্রাপ্ত আরেক তথ্য মতে, উপজাতি এমন জনগোষ্ঠীগুলোকে বুঝায় যারা আলাদা রাষ্ট্র গঠন করতে পারেনি কিন্তু নিজস্ব একটি আলাদা সংস্কৃতি গড়ে তুলেতে সমর্থ হয়েছে। মূলতঃ রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তিতে জাতি বা উপজাতি নির্দিষ্টকরণ হয়ে থাকে। উপজাতি বা নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীসমূহ হচ্ছে- মগ, মুরং, মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা, হাজং ইত্যাদি। বাংলাদেশে উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর শীর্ষস্থানে রয়েছে চাকমা উপজাতির লোকজন।
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি ক্ষুদ্র কিন্তু জনবহুল রাষ্ট্র। জনসংখ্যার অধিকাংশ বাঙালি হলেও অনেকগুলো উপজাতি গোত্রও রয়েছে। বাংলাদেশের উপজাতি জনগোষ্ঠির সিংহভাগ পাবর্ত্য চট্টগ্রাম এবং ময়মনসিংহ, সিলেট ও রাজশাহী অঞ্চলে বসবাস করে। বিবিএস ১৯৮৪ সালের রিপোর্টে ২৪টি নৃতাত্ত্বিক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী এবং মোট জনসংখ্যা ৮,৯৭,৮২৮ জন বলা হয়েছে। উপজাতিগুলো হলো- সাঁওতাল, ওঁরাও, পাহাড়িয়া, মুন্ডা, রাজবংশী, কোঁচ, খাসিয়া, মনিপুরী, টিপরা, প্যাংখো, গারো, হাজং, মার্মা, চাকমা, তংচঙ্গা, চাক, সেন্দুজ, ম্রো, খিয়াং, বোম (বনজোগী), খামি, লুসাই (খুমি)।
পক্ষান্তরে ১৯৯১ সালের রিপোর্টে ২৯টি নৃতাত্ত্বিক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর মোট ১২,০৫,৯৭৮ জন মানুষের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে। নৃতাত্ত্বিক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীগুলো হলো- বংশী, বোম, বুনা, চাক, চাকমা, কোঁচ, গারো, হাজং, হরিজন, খাসিয়া, খিয়াং, খুমি, লুসাই, মাহাতো, মারমা, মণিপুরি, মুন্ডা, মুরুং, ম্রো, পাহাড়িয়া, প্যাংখো, রাজবংশী, রাখাইন, সাঁওতাল, তংচঙ্গা, টিপরা, ত্রিপুরা, ওঁরাও, উরুয়া। লক্ষণীয় বিষয়, এতে প্রচুর তথ্যবিভ্রাট রয়েছে। যেমন টিপরা ও ত্রিপুরা, ম্রো ও মুরুং, ওঁরাও ও উরুয়া একই নৃ তাত্ত্বিক ক্ষুদ্র হলেও রিপোর্টে এদের আলাদা নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী বলা হয়েছে। বিভিন্ন রিপোর্টে প্রচলিত ইংরেজি বানানে ভিন্ন রীতির কারণে এমনটি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বুনা, হরিজন নামে আলাদা কোনো নৃ তাত্ত্বিক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী নেই। কোঁচ জনগোষ্ঠীর বসবাসের মূল এলাকা উত্তরবঙ্গ হলেও এ বিভাগে কোঁচদের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
সর্বশেষ আদমশুমারি ও গৃহগণনা বলছে, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৭টিতেই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসংখ্যা কমেছে। অন্য ১৭ জেলায় বেড়েছে এক লাখ ৭৫ হাজার ৯৭২ জন। তবে বাস্তব অবস্থার সঙ্গে এই হিসাবের মিল নেই। ফলে আদমশুমারির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আদমশুমারি ও গৃহগণনা ২০১১ প্রতিবেদনে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ‘এথনিক পপুলেশন’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, দেশে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যা ২৭টি। এগুলো হচ্ছে: চাকমা (চার লাখ ৪৪ হাজার ৭৪৮), মারমা (দুই লাখ দুই হাজার ৯৭৪), ত্রিপুরা (এক লাখ ৩৩ হাজার ৭৯৮), ম্রো (৩৯ হাজার চারজন), তঞ্চ্যঙ্গা (৪৪ হাজার ২৫৪), বম (১২ হাজার ৪২৪), পাঙ্খুয়া (দুই হাজার ২৭৪), চাক (দুই হাজার ৮৩৫), খিয়াং (তিন হাজার ৮৯৯), খুমি (তিন হাজার ৩৬৯), লুসাই (৯৫৯), কোচ (১৬ হাজার ৯০৩), সাঁওতাল (এক লাখ ৪৭ হাজার ১১২), ডালু (৮০৬), উসাই (৩৪৭), রাখাইন (১৩ হাজার ২৫৪), মণিপুরি (২৪,৬৯৫), গারো (৮৪ হাজার ৫৬৫), হাজং (নয় হাজার ১৬২), খাসিয়া (১১ হাজার ৬৯৭), মং (২৬৩), ওঁরাও (৮০ হাজার ৩৮৬), বর্মন (৫৩ হাজার ৭৯২), পাহাড়িয়া(পাঁচ হাজার ৯০৮), মালপাহাড়ি (দুই হাজার ৮৪০), মুন্ডা (৩৮ হাজার ২১২) ও কোল (দুই হাজার ৮৪৩)।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এইচ কে এস আরেফিন এর মতে, এক সময় পৃথিবীব্যাপী নৃ-বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা উপজাতি (ট্রাইবাল, অ্যাবওরিজিন) ধরনের শব্দ ব্যবহার করতেন। কিন্তু এসব শব্দের ব্যবহার বাতিল হওয়া দরকার। কারণ কেউ জাতি কেউ উপজাতি এটা হতে পারে না। তিনি বলেন, ‘উপজাতি শব্দ ব্যবহার করলে অনেকটাই অধিকারবঞ্চিত মনে হয়।’
তার মতে, আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করলে তার একটি রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে। এ ক্ষেত্রে অধিকারের বিষয়টি বড় হয়ে দেখা দেয়। আদিবাসী মানে তারা এই মাটিরই সন্তান।
পররাষ্ট্র ও পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অতীতের মতো বর্তমান সরকারও মনে করে, বাংলাদেশে কিছু ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী আছে, আদিবাসী নেই। এমনকি জাতিসংঘের আদিবাসীবিষয়ক ফোরামের বৈঠকে অংশ নিয়েও এমন বক্তব্য দিয়েছে সরকারের প্রতিনিধি। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের আদিবাসীবিষয়ক স্থায়ী ফোরামের (ইউএনপিএফআইআই) নবম অধিবেশনে বাংলাদেশ মিশনের এক কর্মকর্তা আলোচনায় অংশ নেন। লিখিত বক্তবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো আদিবাসী জনগোষ্ঠী নেই। তবে পর্যবেক্ষক হিসেবে ফোরামের কার্যক্রমে বাংলাদেশ অংশ নিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে উপজাতি কিংবা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার লোকজন বাস করে। তাদের বেশির ভাগের অবস্থান দেশের তিন পার্বত্য জেলায়।’
২০০৮ সালের ১৯ আগস্ট পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চিঠিতে আদিবাসী বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় একই বছর ৯ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়, দেশে কিছু ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী আছে। কোনো আদিবাসী (ইনডিজেনাস পিপলস) নেই। চিঠিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলার বাসিন্দাদের দুটি ভাগে ভাগ করা হয়- একটি উপজাতি এবং অন্যটি অ-উপজাতি (বাঙালি)।
চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় এর মতে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের ঘোষণা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আদিবাসী অধিকারের স্বীকৃতির বিষয়টি বিশেষ কোনো সুযোগ নয়। কারণ দেশের বিশেষ অঞ্চলের ওই সব মানুষ রাষ্ট্র গঠনে বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ পায়নি। অন্যদিকে বিশেষ প্রেক্ষাপটে তারা বৈষম্যের স্বীকার হয়েছে। কাজেই তাদের সমান অধিকারের সুযোগ দিতে হলে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে করে সমান অধিকার চর্চার তারা সুযোগ পায়। ‘সংবিধানে আদিবাসীদের স্বীকৃতি নেই’ এ ব্যাপারে সন্তু লারমার সঙ্গে একমত হলেও দেবাশীষ রায় মনে করেন, দেশের বিভিন্ন আইনে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের স্বীকৃতি রয়েছে।
জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্মোধনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার উপজাতি সম্মোধনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু সরকার আদিবাসী সম্মোধন করলেই আমরা খুশি হতাম।’
আইএলও কনভেনশন-১০৭ এর অনুচ্ছেদ ১ এর উপ-অনুচ্ছেদ ১(খ) বর্ণিত `আদিবাসী` সংজ্ঞাটি এ রকম- ‘স্বাধীন দেশসমূহের আদিবাসী এবং ট্রাইবাল জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ক্ষেত্রে রাজ্য বিজয় কিংবা উপনিবেশ স্থাপনকালে এই দেশে কিংবা যে ভৌগোলিক ভূখ-ে দেশটি অবস্থিত সেখানে বসবাসকারী আদিবাসীদের উত্তরাধিকারী হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে `আদিবাসী` বলে পরিগণিত এবং যারা তাদের আইনসংগত মর্যাদা নির্বিশেষে নিজেদের জাতীয় আচার ও কৃষ্টির পরিবর্তে ওই সময়কার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আচার ব্যবহারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনযাপন করে।’
অন্যদিকে উপজাতি সম্পর্কে আইএলও কনভেনশন-১০৭ এর অনুচ্ছেদ ১ এর উপ-অনুচ্ছেদ ১(ক) অংশে বলা হয়েছে- ‘স্বাধীন দেশসমূহের আদিবাসী এবং ট্রাইবাল জনগোষ্ঠীর সদস্যদের বেলায় যাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা জাতীয় জনসমষ্টির অন্যান্য অংশের চেয়ে কম অগ্রসর এবং যাদের মর্যাদা সম্পূর্ণ কিংবা আংশিকভাবে তাদের নিজস্ব প্রথা কিংবা রীতি-নীতি অথবা বিশেষ আইন বা প্রবিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অর্থাৎ আদিবাসী হলো `সন অব দি সয়েল`। আর উপজাতি হলো প্রধান জাতির অন্তর্ভুক্ত ক্ষুদ্র জাতি।
`আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকারবিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র ২০০৭` অনুসারে তাদের ৪৬টি অধিকারের কথা লিপিবদ্ধ হয়েছে। এই ঘোষণাপত্রে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর সংজ্ঞা নির্ধারিত হয়নি বা সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত হয়নি। তা ছাড়া ঘোষণাপত্রের ওপর সব সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে সর্বসম্মত সমর্থন নেই। এ কারণে বাংলাদেশ আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকারবিষয়ক ঘোষণাপত্রের ওপর ভোট গ্রহণের সময় তারা ভোটদানে বিরত ছিল। তবে যেকোনো অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর অধিকারের প্রতি সমর্থন রয়েছে সরকারের। সংবিধান অনুসারে, সরকারপ্রধান প্রধান মানবাধিকার চুক্তির প্রতি অনুগত এবং উপজাতিদের অধিকার সমর্থন করে আসছে।
আদিবাসী শব্দটি সংবিধানে সংযোজিত হলে যা হবে : মনে করা হচ্ছে, আদিবাসী শব্দটি সংবিধানে সংযোজিত হলে ২০০৭ সালের `আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকারবিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র` মেনে নিতে হবে; যা হবে বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী। কারণ, ঘোষণাপত্রের অনুচ্ছেদ-৪-এ আছে- `আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার চর্চার বেলায়, তাদের অভ্যন্তরীণ ও স্থানীয় বিষয়ের ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসন এবং স্বশাসিত সরকারের অধিকার রয়েছে ও তাদের স্বশাসনের কার্যাবলির জন্য অর্থায়নের পন্থা এবং উৎসের ক্ষেত্রেও অনুরূপ অধিকার রয়েছে।` অর্থাৎ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করলে ও পার্বত্য অঞ্চলে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের অনুমতি ছাড়া বাংলাদেশ সরকার খাগড়াছড়ির গ্যাস উত্তোলন করে অন্য জেলায় আনতে পারত না। কারণ সেখানকার স্বশাসিত আদিবাসী শাসক নিজেদের অর্থায়নের উৎস হিসেবে সেই খনিজ, বনজ ও অন্যান্য সম্পদ নিজেদের বলে চিন্তা করত।
আবার অনুচ্ছেদ-৩৬-এ আছে, `আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর, বিশেষত যারা আন্তর্জাতিক সীমানা দ্বারা বিভক্ত হয়েছে, তাদের অন্য প্রান্তের নিজস্ব জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আধ্যাত্মিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক কার্যক্রমসহ যোগাযোগ সম্পর্ক ও সহযোগিতা বজায় রাখার ও উন্নয়নের অধিকার রয়েছে।` রাষ্ট্র এই অধিকার কার্যকর সহযোগিতা প্রদান ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। ঘোষণাপত্রের এই নির্দেশ কোনো সরকারই মেনে নিতে পারবে না। কারণ পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক কার্যক্রম অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে। তা ছাড়া বাংলাদেশে পার্বত্য অঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকায় জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি পাবে; যা ক্রমেই সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে জাতীয় উন্নয়ন ব্যাহত করবে।
জাতিসংঘের এই ঘোষণাপত্রের শেষ অনুচ্ছেদ-৪৬-এ সবার মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মান দেখানোর কথা বলা হয়েছে এবং এই কাজটি মহাজোট সরকারের গত আমলে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে। এর আগে পার্বত্য শান্তিচুক্তি অনুসারে ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, সমতা, বৈষম্যহীনতা, সুশাসন এবং সরল বিশ্বাসের মূলনীতি অনুসরণ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রের একাধিক অনুচ্ছেদ অনুসারে, আদিবাসীদের কোনো অধিকার চর্চার ক্ষেত্রে বৈষম্য করা যাবে না। এক্ষেত্রে শিক্ষা, চাকরি ও অন্যান্য বিষয়ে বাঙালিদের মতো তাদেরও সমান সুযোগ দিতে বাধ্য থাকবে রাষ্ট্র। এর আরেক ধরনের ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে, উপজাতিদের `আদিবাসী` হিসেবে চিহ্নিত করলে কোটা সুবিধা বাতিল অনিবার্য হয়ে পড়বে। ফলে তাদের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে বাঙালি-উপজাতি সম্পর্কের মধ্যে বিরূপ ধারণা জন্ম নিতে পারে। মনে রাখা দরকার, এই ঘোষণাপত্রের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ সব দেশে বিপুলসংখ্যক নৃ-তাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর বসতি রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভোটদানে বিরত ছিল রাশিয়া, ভুটান, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, ইউক্রেন, কলম্বিয়াসহ অনেক দেশ। অনুপস্থিত ছিল আরো অনেক উন্নত দেশ।
প্রসঙ্গত, ভারতে বসবাসকারী একই সম্প্রদায়ভুক্ত উপজাতিদের সেখানকার সংবিধানে আদিবাসী হিসেবে সম্বোধন করা হয়নি। সংবিধানে আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরামকে উপজাতি অধ্যুষিত রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী তথা উপজাতিগুলোর উন্নয়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে ১৯৭২ সালের ২২ জুন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রণীত `ইন্ডিজেনাস অ্যান্ড ট্রাইবাল পপুলেশনস কনভেনশন, ১৯৫৭` (কনভেনশন নম্বর ১০৭)-এ অনুস্বাক্ষর করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নৃ-তাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী এবং ট্রাইবাল জাতিগোষ্ঠীর আত্মপরিচয়সহ তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষার জন্য জাতিসংঘের এই সংস্থাটি আবার সংশোধিত `ইন্ডিজেনাস অ্যান্ড ট্রাইবাল পপুলেশনস কনভেনশন ১৯৮৯` (কনভেনশন নম্বর ১৬৯) গ্রহণ করে। এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি দলিল জাতীয় পর্যায়ে উপজাতিদের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা ও কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয়। এখানে ট্রাইবাল বা সেমি-ট্রাইবাল বলতে ওই গোষ্ঠী ও ব্যক্তিদের বোঝানো হয়েছে, যারা তাদের ট্রাইবাল বৈশিষ্ট্য হারানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে এবং এখনো জাতীয় জনসমষ্টির সঙ্গে একীভূত হয়নি। বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত পথে অগ্রসর হয়ে বর্তমান সরকার পার্বত্য শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ি অধিবাসীদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
আদিবাসী নয়, উপজাতি কিংবা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাহাড়িদের বঞ্চনা ও ভূমি বেদখল তৎপরতার দৌরাত্ম্য রোধে কার্যকর উদ্যোগ দিতে হবে। আদিবাসীর ভূমি অধিকার-সংক্রান্ত বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। তবে `আদিবাসী` হিসেবে নয়, উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে এসব দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরতে হবে। আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির দাবি সরকার গ্রহণ করবে না। এ ব্যাপারে সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থান রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রায় এক-দশমাংশ জুড়ে চট্টগ্রাম। পার্বত্য অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ভূসম্পদ এ দেশের অন্তর্গত রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এ সম্পদ ব্যবহার করে জনগণ দেশকে আরো অগ্রসর করতে পারে। কিন্তু সেখানে ক্রমাগত জাতিগত দ্বন্দ্ব, সংঘাত, অন্তঃকলহ ও বিরোধ, নেতৃত্বের টানাপড়েন ও রেষারেষি সাধারণ নিরীহ পার্বত্যবাসীর অশান্তির কারণ হয়েছে। অনগ্রসর, পিছিয়েপড়া ও দরিদ্র মানুষ অনিরাপদ, উদ্বিগ্ন থাকে। এসব সঙ্কট নিরসনের লক্ষ্যে ২ ডিসেম্বর, ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও শান্তিপূর্ণ মনোভাবের প্রতিফলন তাতে ঘটেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এ শান্তিচুক্তি বেশ প্রশংসিত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি, অ-উপজাতি ও স্থানীয় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অগ্রগতি, বিকাশ, নিরাপত্তা, শান্তি ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় যাবতীয় উদ্যোগ গৃহীত হয়। বিভ্রান্তি ও অনিরাপত্তার আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসে যুবশক্তি, বিচ্যুত মানুষ। শান্তিচুক্তির আওতায় জাতীয় জীবনের সঙ্গে অগ্রগতির স্বার্থে উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার অনুমোদিত হয়। পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা ও ইতিবাচক উদ্যোগে অংশগ্রহণের মাধ্যমে পার্বত্যবাসীর স্বার্থ উৎসাহিত হয়। পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণ ও আওতায় জমি, পাহাড় ও বনাঞ্চলের অধিগ্রহণ-হস্তান্তরের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠিত হয় ১৯৯৮ সালে। প্রতিটি পার্বত্য জেলার পাঁচ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন পার্বত্য জেলা পরিষদ` গঠিত হয়। পার্বত্য জনসংহতি নেতা সন্তু লারমাকে চেয়ারম্যান করে ২৫ সদস্যভিত্তিক অন্তর্বর্তীকালীন আঞ্চলিক পরিষদ গঠিত হয়। মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিষয় তিনটি পাবর্ত্য জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর ও নিয়ন্ত্রণাধীন করা হয়েছে। ফিরে আসা উপজাতিদের পুনর্বাসন, অর্থায়ন ও পুলিশবাহিনীতে নিয়োগ করা হয়েছে। উপজাতীয়দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও চাকরির জন্য কোটাব্যবস্থা চালু করা হয়। জাতীয় সংসদ কর্তৃক গৃহীত হয় `ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান বিল, ২০১০`। বর্তমানে উন্নয়ন কর্মকা-ের ৯১ ভাগ উপজাতীয়দের জন্য এবং অ-উপজাতীয়দের জন্য ৯০ ভাগ বরাদ্দ আছে।
পাহাড়িদের বঞ্চনা ও ভূমি বেদখল তৎপরতার দৌরাত্ম্য রোধে কার্যকর উদ্যোগ দিতে হবে। আদিবাসীর ভূমি অধিকার-সংক্রান্ত বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। তবে `আদিবাসী` হিসেবে নয়, উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে এসব দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরতে হবে। আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির দাবি সরকার গ্রহণ করবে না। এ ব্যাপারে সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থান রয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার ২০০৭ সালে গৃহীত আদিবাসী অধিকারবিষয়ক ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেনি। এমনকি ভারত সরকারও `আদিবাসী`র স্বীকৃতি দেয়নি। `আদিবাসী` ধারণাটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার পরিপন্থী বলে এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগেই সরকার সম্মত হবে না। উপজাতি অথবা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী উন্নয়নের জন্য গৃহীত কর্মকাণ্ড বিষয়ে তাদের মতামত ও অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। আদিবাসী হিসেবে নয়, বরং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে এবং বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে যে অধিকার রয়েছে তা যাতে আরো পরিপূর্ণ মাত্রায় বাস্তবায়ন করা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। সবাইকে মিলেমিশে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে শান্তির পক্ষে বসবাস করতে হবে। এটা পরীক্ষিত যে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সংঘাতকে আহ্বান করলে কোনো পক্ষেরই শান্তি আসবে না।

Friday, October 9, 2015

ঢাকার টাস্কফোর্স ও স্বপ্নের পুত্রজায়া

ঢাকার টাস্কফোর্স ও স্বপ্নের পুত্রজায়া

মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর | আপডেট:  | প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকা শহরে যানজট এখন প্রতিদিনের সমস্যারাজধানী ঢাকার নানা সমস্যার সমাধান এবং একটি সুদূরপ্রসারী মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করার জন্য একটি সমন্বয় কমিটি গঠনের দাবি উঠেছে। ঢাকার দুই মেয়রও এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। মেয়র হওয়ার পর তাঁরা এখন বুঝতে পেরেছেন, মেয়রের ক্ষমতা খুব সীমিত। হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া বেশির ভাগ কাজই তাঁদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
সম্প্রতি ঢাকার দুই মেয়র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে রাজধানীর উন্নয়ন ও নাগরিক সমস্যার সমাধানে একটি টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীকে এই টাস্কফোর্সের প্রধান করারও প্রস্তাব দেন দুই মেয়র। প্রধানমন্ত্রীও এই প্রস্তাবে নীতিগত সমর্থন দিয়েছেন বলে সংবাদপত্রের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।
আপাতদৃষ্টিতে অনেকের মনে হতে পারে, খুব ভালো প্রস্তাব ও উদ্যোগ। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হলে তাতে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। এ জন্যই দুই মেয়র এই প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁদের দুজনের লক্ষ্য একটাই: তাঁদের মেয়াদকালে যেন ঢাকার কিছু সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
কিন্তু রাজধানী ঢাকার বৃহত্তর প্রেক্ষাপট থেকে দেখলে এই প্রস্তাবটি ভালো হয়নি। কারণ, এতে মেয়রের ক্ষমতায়ন হবে না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শক্তিতে মেয়র শক্তিমান হবেন। এটা কৃত্রিম। আমরা চেয়েছিলাম, ঢাকার নির্বাচিত মেয়র আইনের মাধ্যমে শক্তিশালী হোক। সব কাজে প্রধানমন্ত্রীর পদকে ব্যবহার করা ঠিক নয়। প্রধানমন্ত্রী সব সরকারি কমিটি বা টাস্কফোর্সেরও ওপরে। প্রধানমন্ত্রীকে যদি একটি কমিটি বা টাস্কফোর্সের প্রধান করা হয়, এতে প্রধানমন্ত্রীর পদকে ছোট করা হয়। ম্যাচে জেতার জন্য কোচ বা ম্যানেজারকে মাঠে নামতে বলা যেমন মানানসই হয় না, এটাও অনেকটা সে রকম।
প্রধানমন্ত্রী যদি এই টাস্কফোর্সের প্রধান হতে রাজিও হন, তাহলেও প্রশ্ন থেকে যায়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনেও সমন্বয়হীনতার সমস্যা রয়েছে। তারা কী দোষ করল? প্রধানমন্ত্রী তো চট্টগ্রামেরও প্রধানমন্ত্রী। তাহলে আমরা প্রস্তাব দেব: প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে চট্টগ্রামেও একটা টাস্কফোর্স গঠন করা হোক। তা কি উচিত হবে? কোনো কিছু প্রস্তাব করার সময় আমরা অতশত ভাবি না। আমরা চাই, আমাদের কাজ উদ্ধার হলেই হলো।
অনেক অদক্ষ মন্ত্রী, মেয়র, এমপি তাঁদের নিজ নিজ কাজ উদ্ধারের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে তাঁদের কাজের সঙ্গে যুক্ত করে ফেলেন। প্রধানমন্ত্রীকে কমিটির প্রধান করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মিটিং করেন। প্রধানমন্ত্রীকে সশরীরে কমিটিতে রাখা হলে তাঁর মূল্যবান সময় নষ্ট হবে। প্রত্যেক বড় মাপের আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি বা টাস্কফোর্সে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদিত তাঁর অফিসের একজন সচিবকে সদস্য রাখলেই তিনি প্রত্যেক কমিটির কাজের অগ্রগতি ও সমস্যা সম্পর্কে অবহিত থাকতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীর অবহিত থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের পরামর্শে প্রধানমন্ত্রী যখন যেখানে প্রয়োজন, সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীকে সারা দেশের নানা উন্নয়ন প্রকল্প এভাবেই তত্ত্বাবধান ও মনিটরিং করতে হয়।
আমাদের মতে, ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেশি মাথা ঘামাবেন। সে কাজেই তাঁর বেশি সময় দেওয়া উচিত। একাধিক মন্ত্রণালয়, মন্ত্রী, মেয়র, এমপি, বিভাগ, অধিদপ্তর এসব সমস্যার সমাধান করার জন্য রয়েছে। এতগুলো লোক মিলে সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না কেন? যদি রাজধানী ঢাকার বা চট্টগ্রামের সমস্যার সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর কোনো নির্দেশ দরকার হয়, সংসদে কোনো নতুন আইন পাস করার দরকার হয়, সে ব্যাপারে মন্ত্রী বা মেয়র কিংবা এমপি প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চাইতে পারেন। কাজ এগিয়ে নেওয়ার পথে যদি কোনো সরকারি গিঁট লেগে যায়, প্রধানমন্ত্রী সেই গিঁট খুলে দিতে পারেন। যাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন কমিটি বা টাস্কফোর্সের প্রধান করতে চান, তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর পদটি ছোট করছেন।
দেশে একটা যুদ্ধ লাগলে, বড় আকারে বন্যা হলে, বড় আকারে ভূমিকম্প হলে, বড় আকারে দাঙ্গা হলে, হাজার হাজার মানুষ মারা গেলে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে টাস্কফোর্স হতে পারে। দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে তখন একযোগে কাজ করতে হবে। দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। তবে সে ধরনের কাজ সাময়িক। তিন-চার মাসের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে। এ ধরনের পরিস্থিতি খুবই ব্যতিক্রম।
রাজধানী ঢাকার সমস্যা সমাধান ও উন্নয়নকাজে সমন্বয় করার জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা করা দরকার। যেহেতু কাজগুলো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত, সেহেতু একজন মন্ত্রীর নেতৃত্বে এই সমন্বয় কমিটি হওয়া বাঞ্ছনীয়। মেয়র ও সব সেবা সংস্থার বিভাগীয় প্রধানেরা এর সদস্য হবেন। এই কমিটি যা সিদ্ধান্ত নেবে, তা বাস্তবায়নে কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বাধা দিতে পারবে না—এই মর্মে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেবেন। আপাতত এই নির্দেশই যথেষ্ট। এই কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিনিধিত্ব করবেন তাঁর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা। তাতেও কাজ হবে না? প্রতিটি মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বসতে হবে? প্রধানমন্ত্রী কি শুধু ঢাকার প্রধানমন্ত্রী?
রাজধানী ঢাকার প্রশাসন পরিচালনার জন্য কোনো একক ওÿ ক্ষমতাবান নেতৃত্ব নেই। তাই আমরা ‘নগর সরকার’র কথা বলেছিলাম। বড় দুটি রাজনৈতিক দল এখনো নগর সরকারের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেনি। তাই নগর সরকারের লক্ষ্যে কোনো কাজ বা আইন প্রণয়নের কথা কোনো সরকারই চিন্তা করেনি। এখন যদি নিদেনপক্ষে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা যায়, তাহলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নগর সরকার বা ঢাকায় একক ও ক্ষমতাবান নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পারবে।
আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রী ঢাকার উন্নয়নকাজে সমন্বয় করার জন্য একজন মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উচ্চÿক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করে দেবেন। এ জন্য বেশি সময়ক্ষেপণ করার প্রয়োজন নেই।
সচিবালয় স্থানান্তর?
একটা কথা শোনা যাচ্ছে, ঢাকার তোপখানা রোড থেকে সচিবালয় শেরেবাংলা নগরে শিল্প প্রদর্শনীর মাঠে স্থানান্তর করা হবে। যেহেতু এখন পূর্বাচলে চীন সরকার স্থায়ী ‘প্রদর্শনী হল’ নির্মাণ করে দিচ্ছে, কাজেই এই জায়গাটি খালি হয়ে যাবে। শেরেবাংলা নগরে এই জায়গাতে নতুন সচিবালয় নির্মাণ করার ব্যাপারে সরকারের নিশ্চিত কোনো সিদ্ধান্তের কথা আমরা জানি না।
আমাদের ধারণা, এ রকম সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে তা ঠিক হবে না। শেরেবাংলা নগর এখন আর অত বড় ভবন করার উপযুক্ত নয়। এত গাড়ি, এত রকম যানবাহন, এত মানুষের চলাচলও ঠিক হবে না। সচিবালয় অনেক বড় একটি অবকাঠামো।
এ ব্যাপারে আমাদের কয়েকটি পরামর্শ রয়েছে। ১. রাজধানীর সচিবালয়, মন্ত্রী পাড়া, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, সরকারি কর্মকর্তাদের বাসভবন, সেনানিবাস একবিংশ শতাব্দীর ঢাকার কোথায় নির্মাণ করা উচিত হবে, তা নিয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, নগর বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশলীদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। ২. অ্যাডহক ভিত্তিতে এসব কাজ করা ঠিক নয়। যা করা হবে তা অন্তত ৫০-৭৫ বছরের ঢাকাকে (নির্মাণের পর) সামনে রেখে পরিকল্পনা করা উচিত। ৩. ঢাকার নতুন ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের মধ্যে সচিবালয়সহ বিভিন্ন বড় সরকারি ভবন চিহ্নিত করা যেতে পারে। ৪. কুয়ালালামপুরের পুত্রজায়ার মতো ঢাকা শহরের বাইরে (পূর্বাচল?) বিভিন্ন সরকারি ভবনের একটি পৃথক উপশহর নির্মাণের কথাও চিন্তা করা যায়। পুত্রজায়া আমাদের সামনে একটি বড় দৃষ্টান্ত।
এসব কাজ কখন শুরু হবে বা শেষ হবে, তা বড় কথা নয়। এ ধরনের কাজ আমাদের করতে হবে—এখন থেকে এই ভাবনা শুরু করা উচিত। কারণ, আমাদের জমির পরিমাণ সীমিত। কৃষিজমি আরও সীমিত। এসব কাজে অনেকগুলো ধাপ থাকে। কোনো একটি সরকার সব কাজ করার সুযোগ পায় না। বর্তমান সরকারের আমলে অন্তত এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া যায় কি না, তার চেষ্টা করা উচিত। আমরা গণতান্ত্রিক দেশ বলে দাবি করি। তাই এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সরকার, সংসদের বিরোধী দল, অন্যান্য বড় রাজনৈতিক দল, বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ, বিভিন্ন পেশাজীবী গোষ্ঠীর প্রতিনিধি—সবার সঙ্গে মতবিনিময় করা যেতে পারে। এতে এই বড় মাপের সিদ্ধান্তে সবার মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে। তার মূল্য কম নয়। পরের টার্মে যদি বর্তমান ক্ষমতাসীন দলই নির্বাচিত হয়, তাহলে তারা আরও পাঁচ বছর কাজ এগিয়ে নিতে পারবে। এ ধরনের বড় প্রকল্প ১৫-২০ বছরের আগে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না।
আমরা আশা করব, সরকার এ ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা শুরু করবে। অন্তত নির্দিষ্ট এজেন্ডা দিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিকে প্রাথমিক ও খসড়া রূপরেখা তৈরির দায়িত্ব দেবে। প্রাথমিক কাজ হিসেবে সেটাও কম নয়। মনে রাখা দরকার, আমাদের জন্য এই ভাবনা আর কেউ ভাববেন না। আমাদেরই ভাবতে হবে।
মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর: মিডিয়া ও উন্নয়নকর্মী।
Source : daily ittefak

রান্না ঘরের যত্ন নিবেন যেভাবে

রান্না ঘরের যত্ন নিবেন যেভাবে
অনলাইন ডেস্ক০৭ অক্টোবর, ২০১৫ ইং ১৪:৪৮ মিঃ
রান্না ঘরের যত্ন নিবেন যেভাবে
ফাইল ছবি
সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে বসবাসের জন্য প্রয়োজন বাড়ি। আর একটি বাড়িতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রান্নাঘর। কারণ এ ঘরে যে রান্না করা হয় তার পরিচ্ছন্নতা ও ভেজালহীনতার ওপর নির্ভর করে পরিবারের সবার স্বাস্থ্য। তাই রান্নাঘরে কাজ করার সময় কিছু বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হবে, তাহলে রান্নাঘরে থাকবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। এমনই কিছু টিপস দেয়া হলো এই প্রতিবেদনে-
 
১. কাচের গ্লাস ও জগ থেকে ঠাণ্ডা শরবত ঢালার পরে কোনো বরফ ফেলে রাখবেন না। তা হলে গ্লাসে ফাটল ধরতে পারে।
২. প্লাস্টিকের বা কাঠের হ্যান্ডেলসমেত ছুরি গরম পানিতে পুরোটা ডুবিয়ে পরিষ্কার করবেন না। প্লাস্টিকের রঙ হালকা হয়ে যাবে। শুধু ছুরির ধারালো অংশ গরম পানিতে ডুবিয়ে পরিষ্কার করুন।
৩. স্টিলের বাসন, বিশেষ করে গ্লাস বা বাটি অনেক সময় একসঙ্গে আটকে যায়, সেক্ষেত্রে ভেতরের বাটি বা গ্লাসে ঠাণ্ডা পানি ঢালুন এবং বাইরের গ্লাস বা বাটিতে গরম পানি ঢালুন। কয়েক মিনিট পর সহজেই আলাদা করতে পারবেন।
৪. ছাঁকা তেলে ভাজার জন্য লোহার কড়াই ব্যবহার করুন। এতে কড়াই ধীরে ধীরে গরম হলেও বেশিক্ষণ গরম থাকবে। কম অাঁচে রান্না করলে তামা বা পিতলের কোটিং দেয়া বাসন ব্যবহার করুন। লোহার কড়াই পরিষ্কার করার জন্য নারকেলের ছোবড়া বা সিনথেটিক স্ক্রাবার ব্যবহার করতে পারেন।
 
৫. রান্না করার পরই গরম বাসনে পানি ঢালবেন না। কারণ, অতিরিক্ত গরম বাসন ঠাণ্ডা পানির সংস্পর্শে এলে বাসনের মেটাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন বেশি দিন সে বাসন ব্যবহারযোগ্য থাকে না।
৭. পিতলের কোটিং দেয়া বাসন পরিষ্কার করার জন্য ভিনিগারের সঙ্গে সামান্য লবণ মিশিয়ে নিন। অ্যালুমিনিয়াম পাত্রে ওয়াশিং সোডা ব্যবহার করবেন না। অ্যালুমিনিয়াম পাত্রে রান্নার কারণে কুকিং সোডা ব্যবহার করলে কালো হয়ে যেতে পারে। ওই পাত্রে সমপরিমাণ পানি ও ভিনিগার দিয়ে ফোটালে দাগ উঠে যাবে। এছাড়া এর পরিবর্তে লেবুর রস ও সমপরিমাণ পানিও ব্যবহার করতে পারেন।
৮. ননস্টিকের বাসন পরিষ্কার করার সময় স্টিল উল ব্যবহার করবেন না। নরম স্পঞ্জ দিয়ে পরিষ্কার করতে পারেন। তেল-মশলার গ্রেভি রয়েছে এরকম লোহার পাত্রে সোডা ও পানির মিশ্রণ দিয়ে ভালো করে ফোটান, তারপর সিনথেটিক স্ক্রাবার দিয়ে পরিষ্কার করুন। ময়দা চেলে নেয়ার পর যে ভুসি পড়ে থাকে, তা স্টেনলেস স্টিলের তেল চিটচিটে বাসন পরিষ্কার করার জন্য দারুণ কাজে লাগে।
৯. কেটলির ভেতর চায়ের কড়া দাগ দূর করার জন্য ওর ভেতরে পানি ও ১ কাপ ছাই দিয়ে ভালো করে ফোটান, তারপর পানি ফেলে দিন, দেখবেন ওর মধ্যে জমে থাকা সব ময়লা বের হয়ে আসবে।
১০. অ্যালুমিনিয়ামের পাত্র ভেতরের দিক দিয়ে পুড়ে গেলে ওর মধ্যে সামান্য পানি ও পেঁয়াজ দিয়ে ভালো করে ফোটান, তারপর ধীরে ধীরে পোড়া অংশ উপরে ভেসে উঠবে ও প্যানের নিচের অংশ পরিষ্কার থাকবে।
১১. চাল ধোয়ার পানি না ফেলে গ্লাস ও স্টেনলেস স্টিলের পাত্র কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন, তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন বাসন চকচক করছে।
১২. প্রতিটি ছোটখাটো বাসন নির্দিষ্ট ক্যাবিনেটে রাখার ব্যবস্থা করুন। প্রতিদিন ব্যবহারের যেসব বাসন, যেমন—লাঞ্চ বা ডিনারের সেট, গ্লাস ও কাপ, চায়ের কাপ-পিরিচ, ছুরি, চামচ; এগুলো খাবার ঘরের সাইড-বোর্ডে রাখার ব্যবস্থা করুন। তাহলে রান্নাঘরে অন্য জিনিস স্টোরেজের জায়গা বের হবে।বাসনপত্র ধোয়ার পর, ভালো করে মুছে তারপর তুলে রাখুন। বাসন মোছার জন্য সবসময় পেপার টাওয়েল ব্যবহার করুন।
১৩. যদি সম্ভব হয় গ্যাস স্টোভের সামনের দেয়ালে জানালার মতো চারকোণা খোপ কেটে নিতে পারেন। আবার এই খোপের তলার অংশটি তাকের মতো ব্যবহার করে রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রাখতে পারেন। তাহলে রান্নার সময় এ ক্যাবিনেট থেকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বের করে হাতের কাছে নিতে পারবেন। সিঙ্কের নিচের ফাঁকা জায়গায় শেলফ বানিয়ে নিন। সেখানে বাসন ধোয়ার সাবান, স্ক্র্যাবার, বাসুন মোছার ন্যাপকিনস গুছিয়ে রাখুন। রান্নাঘরে অবশ্যই একটি ঢাকনা দেয়া নোংরা ফেলার বালতি রাখবেন।
১৪. অনেকদিন বন্ধ থাকা বা অব্যবহৃত ঘর খুললে একটা ভ্যাপসা গন্ধ বের হয়। দু-তিনটে দেশলাই কাঠি জ্বালালে দু-তিন মিনিটের মধ্যে ঘর থেকে গন্ধ চলে যাবে।
Source Daily Ittefaque