Monday, March 30, 2015

পাসপোর্ট করার সহজ নিয়মাবলী

পাসপোর্ট করার সহজ  নিয়মাবলী 
পাসপোর্ট ছাড়া আপনি কি নিজকে বাংলাদেশী নাগরিক ভাবতে পারেন।নিজের পাসপোর্ট থাকা জরুরী পত্রিকা পড়ে অনেকের পাসপোর্ট করা নিয়ে ভিতি ভাব আছে   অফিসিয়াল ব্যাপারগুলো আত্মবিশ্বাসের সাথে করলে একটা না একটা উপায় সহজভাবেই বের হয়ে আসে। বর্তমানে অনলাইনে পাসপোট ফরম জমা দিলে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয় না । পরে নিধারিত সময়ে দালালের খপ্পড় বা পাসপোর্ট অফিসের কারো কোন সমস্যার ছাড়াই একদম সরাসরি যেয়ে ছবি তুলে ও ফিঙ্গারিং করা যায়।
এতে অনাহুত খরচের বালাই নেই।

যারা অনলাইনে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট করতে যাচ্ছেনতাদের জন্য ব্যাপারটাকে আরো সহজ করে তোলার জন্য এই পোস্ট 

আপনিও খুব সহজেই পারবেন কারণ অনলাইনে পাসপোর্ট পাওয়া অনেক অনেক সহজ একটা কাজ যদি একটু জানা থাকে  পাসপোর্ট হাতেপাওয়াসহ সব মিলিয়ে আপনাকে মাত্র তিনদিন যেতে হবে আর সাথে টুকিটাকি যদি জানা থাকে তাহলে আর কথাই নেই 

আসেনএকদম শুরু থেকে শুরু করি অনলাইনে পাসপোর্ট ফর্ম পূরণ করা এবং পরের ধাপের কাজগুলো নিয়ে

প্রথম ধাপ : ব্যাংকে টাকা জমা দেয়া

সোনালী ব্যাংকের কলেজ গেইট শাখায় পাসপোর্ট আবেদনের ফি হিসাবে টাকা জমা দিতে হবে রেগুলার ফি ৩০০০/- টাকা (  মাসের মধ্যেপাসপোর্ট পেতে হলেআর ইমারজেন্সি ফি ৬০০০/- টাকা ( ১৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পেতে হলে। এর সাথে বর্তমানে অতিরিক্ত ১৫% টাকা জমা দিতে হবে।
প্রথমেই টাকা জমা দেয়া প্রয়োজন এই কারণে যে , অনলাইনে ফর্ম পূরণ করার সময় টাকা জমা দেয়ার তারিখ এবং জমাদানের রিসিটের নাম্বারউল্লেখ করার প্রয়োজন হবে তাই টাকা আগে জমা দেয়া থাকলে একবারেই ফর্ম পূরণ করা হয়ে যাবে

 টিপস -ভুলেও আবার আগারগাঁও সোনালী ব্যাংকের শাখায় গেলে - - - - - । সোনানী ব্যাংকের কলেজ গেইট শাখায় বেশ দ্রুত টাকাজমা দেয়া যায় , কারণ এইখানে ভিড়টা কম  আপনার সুবিধামত সোনালী ব্যাংকের শাখায় / ব্রাঞ্চে টাকা জমা দিয়ে রিসিট বুঝে নিন । 
সুখের কথা এখন অনেক বেসরকারী ব্যাংকে যেমেন প্রিমিয়াম ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক সহ কয়েকটি ব্যাংকে টাকা জমা দেয়া যায়।

লাইনে দাঁড়ালে ব্যাংকের কাজ শুরুর আগেই ব্যাংকের লোকজন রিসিট দিয়ে যাবে বা নিজেই টাকা দেয়ার রিসিট সংগ্রহ করে নিন  রিসিট পেলেইংরেজি ব্লক লেটার স্পষ্টভাবে পূরণ করুন। সাথে অবশ্যই কলম রাখুন
আমি যখন টাকা জমা দিয়েছিলাম , তখন আগারগাঁও ব্রাঞ্চ  টাকা জমা নিত , এখন খোঁজ নিয়ে দেখলাম সেখানে টাকা জমা নেয়া বন্ধ ! এছাড়াঅনলাইনে যেসব ব্রাঞ্চের লিস্টগুলো আছে , তার অনেকগুলোতেই টাকা জমা নেয় না  তাই ঢাকায় থাকলে কলেজ গেইট ব্রাঞ্চেই যাওয়া বেটার)

দ্বিতীয় ধাপ - অনলাইনে ফর্ম পূরণ

অনলাইনে ফরম পূরণের জন্য প্রথমেই যান পাসপোর্ট অফিসের এই সাইটে - http://www.passport.gov.bd/http://www.passport.gov.bd/  নির্দেশনা ভালোভাবে দেখুন , সতর্কতার সাথে একাউন্ট করুন আপনার নাম  ব্যক্তিগত তথ্যাদি ( যেমন নামের বানানপ্যারেন্টস এর নাম ) যেন শিক্ষাগত সার্টিফিকেটের মতই হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। টাকা জমা দেয়ার তারিখ এবং রিসিট নাম্বার উল্লেখ করুন

সবশেষে আপনি যেদিন ছবি তোলা  হাতের ছাপ দেয়ার জন্য বায়োমেট্রিক টেস্ট দিতে যেতে চানসুবিধামত সেইদিনটা নির্বাচন করে সাবমিটকরুন অর্থ্যাৎ আপনি নিজের পছন্দসই সময়েই যেতে পারছেন ! ব্যাপারটা খু্বই মজার না !

পুনরায় চেক করার পর সবশেষে সাবমিট করুন  সফলভাবে সাবমিশন শেষ হলে পূরণকৃত ফর্মের একটি পিডিএফ কপি আপনার মেইলে চলেআসবে  এইধাপ এইখানেই শেষ

 টিপস  1 –  অনলাইনে একাউন্ট খোলার পরপরই আপনাকে ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড জানিয়ে দেবে  সেটা সংরক্ষণ করুন আর ছবিতোলার জন্য যেদিন সময় দেবেন সেদিনটা ফ্রি রাখবেন সময় লাগতেও পারে এই দিনে যদি মানুষ বেশী হয় 


তৃতীয় ধাপ – জমা দেয়ার আগে ফর্মের প্রিন্ট এবং সত্যায়ন আপনার পূরণকৃত ফর্মের যেই পিডিএফ কপিটা পেয়েছেনসেটার  কপি কালারপ্রিন্ট করে ফেলুন যেসব জায়গা হাতে পূরণ করতে হবে সেগুলো করে ফেলুন  আপনার সাইন দিন। এবার নিজের চারকপি ছবি , জাতীয়পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং পাসপোর্ট ফর্ম নিয়ে পরিচিত কোন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার কাছ থেকে সত্যায়িত করে নিন পরিচিত কাউকে দিয়েসসত্যায়ন করানো দরকার এই কারণে যে কর্মকর্তার নাম , যোগাযোগ  ফোন নাম্বার ফর্মে লিখতে হয়। সত্যায়ন শেষে পুরো ফর্মটি রিচেককরুন

সত্যায়িত ছবি এবং ব্যাংকের রিসিট আঠা দিয়ে ফর্মের সাথে যুক্ত করুন সাথে জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপিটি নিন। আপনার ফর্ম জমাএখন দেয়ার জন্য প্রস্তুত

টিপস  2 – ফর্মের প্রিন্ট করার সময় এক কপি এক্সট্রা করুন ব্যাকআপ থাকা ভালো  আমার প্রথম পেজ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল শেষ সময়েব্যাকআপ কপির প্রথম পেইজ দিয়ে দিয়েছি
ছবি দুই কপি লাগলেও এক্সট্রা দুই কপি করিয়ে রাখা ভালো , পাসপোর্ট অফিসে চেয়ে বসে মাঝে মাঝে একই কথা জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যাপারেও

চতুর্থ ধাপ – ছবি তোলা এবং অন্যান্য আপনার নির্বাচন করা তারিখে সকাল সকাল পাসপোর্ট অফিসে চলে যান  অবশ্যই সাদা পোষাক পরবেননা , ফর্মাল পোষাক পরার চেষ্টা করুন

সকাল  টার দিকে গেলেই হবে কোন লাইনে দাঁড়াতে হবে না আপনাকে  সরাসরি মেইন গেইট দিয়ে মূল অফিসে যান সেখানে দায়িত্বরত সেনাসদস্যকে জিজ্ঞেস করুন কোন রুমে যাবেন 

প্রথমে আপনাকে আটতলায় যেয়ে ফর্ম দেখিয়ে আনতে হবে খুবই অল্প সময়ের কাজ  ৮০৩ নাম্বার রুম  সিরিয়াল নেবেন। এবার  তলারথেকে আসতে বলবে  তলায়  সেখানে এসেই আসল কাজ । প্রথমে আপনার ফর্মটি চেক করবে এবং সাইন করে দেবে। সাইন শেষে আপনাকেজানিয়ে দেয়া হবে ছবি তোলার জন্য কোন রুমে যাবে  রুমগুলো ঠিক পাশেই সিরিয়াল আসলে ছবি তুলুনফিঙ্গারপ্রিন্ট দিন ব্যস , কাজ শেষ !

এবার আপনাকে পাসপোর্ট রিসিভের একটা রিসিট দেবে সেটা যত্ন করে রাখুন  পুলিশ ভেরিফিকেশান সাপেক্ষেরিসিট পাওয়ার একমাস বা ১৫দিনের মধ্যেই আপনি পাসপোর্ট পাবেন 

আমার টিপস – আবারো বলছি , সাদা পোষাক পরবেন না , ফর্মাল পোষাক পরার চেষ্টা করুন

আর সাথে জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল কপিসহ সত্যায়িত কপিগুলো নিয়ে যান তিনতলায় যেয়ে সেখানকার সেনাসদস্যের কাছ থেকে দেখিয়েনিশ্চিত হয়ে নিন , সব সংযুক্তি ঠিক আছে কিনা। সাথে অবশ্যই কলম রাখুন। আঠাস্ট্যাপলারএক্সট্রা ছবিও সাথে রাখুন

আর যারা সরকারী কর্মকর্তা বা শিশুসহ যাচ্ছেন , তাদের কিছু আলাদা কাগজ লাগবে  সেটার জন্য নির্দেশনা দেখুন  কিংবা ৮০৩  যোগাযোগকরুন

পঞ্চম ধাপ – পুলিশ ভেরিফিকেশান  পাসপোর্ট রিসিভ ডেট ( টিপস সহ)

পুলিশ ভেরিফিকেশানই আমার কাছে ঝামেলার মনে হয়েছে যদি আপনার স্থায়ী আর বর্তমান ঠিকানা আলাদা হয় , তবে দুই জায়গাতেই আপনারভেরিফিকেশান হয়ে থাকে পুলিশের এস বি ( স্পেশাল ব্রাঞ্চএই কাজটা করে থাকে

এবং এইটা করতে যেয়ে পুলিশ বখশিশ হিসাবে টাকা চেয়ে বসে খুবই ইরিটেটিং একটা ব্যাপার  সেটা ৫০০-১০০০ পর্যন্ত হতে পারে !!!!!

তবে স্ট্রিক্ট থাকলে এটা এড়ানো সম্ভব আপনি কীভাবে তাদের ফেইস করছেন সেটার উপর নির্ভর করে সরাসরি বলে দিতে পারেন যেএইটাআপনার দায়িত্বতো টাকা দেয়ার প্রশ্ন কেন কিংবা বলতে পারেন যেআপনি ছাত্র , টাকা দেয়া সম্ভব না  ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি !

যাই হোকভেরিফিকেশান শেষ হলে আপনার মোবাইলে এস এম এস আসবে যেদিন এস এম এস আসবে তারপরেই আপনি পাসপোর্ট সংগ্রহ করতেপারবেন। 

ব্যসএইবার পাসপোর্ট হাতে নেয়ার পালা

ষষ্ঠ ধাপ –পাসপোর্ট সংগ্রহ

এইখানে কাজ সহজ  পাসপোর্ট অফিসে চলে যান লাইনে দাঁড়ান
সাথে রিসিট আর কলম রাখুন   টার দিকে গেইট খুলবে লাইন ধরে প্রবেশ করুন। রিসিট জমা দিন অপেক্ষা করুন

এবার আপনার নাম ডাকবে । সাইন করুন , বুঝে নিন আপনার পাসপোর্ট 

টিপস  3 – হাতে পেয়েই সবার আগে চেক করুন আপনার ইনফোগুলো ঠিক এসেছে কিনা নিজের এবং পিতামাতার নাম , ঠিকানা এবংঅন্যান্যসব তথ্যগুলো মিলিয়ে নিন

এই হচ্ছে একটি ঝামেলাবিহীন পাসপোর্টের আত্মকাহিনী বা আমি যেভাবে খুব সহজেই পাসপোর্ট পেলাম এর আদ্যোপান্ত  আশা করি কাজে লাগবে
সবার জন্য শুভকামনা হ্যাপি পাসপোর্টিং !

সংযুক্তি -

০১আপনার বর্তমান ঠিকানা যদি ঢাকা হয় , তাহলে এখান থেকেই পাসপোর্ট করতে পারেন  আলাদা করে দেশের বাড়ির জেলা অফিসে যাওয়ারপ্রয়োজন হবে না 

০২ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার জন্য যে স্লিপ লাগে , সেখানে আলাদা একাউন্ট নম্বরের প্রয়োজন নেই নতুন পাসপোর্ট করা বা রিনিউ এর জন্যআলাদা স্লিপই থাকে 

০৩) GO: Government order

NOC: NO Objection Certificate

PDS: Proof of retired Date


সরকারীআধাসরকারীস্বায়ত্তশাসিত  রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার স্থায়ী কর্মকর্তা/কর্মচারীঅবসরপ্রাপ্ত সরকারী চাকুরীজীবীরা এই ঘর পুরণ করবেনআর কমেন্ট থেকে জানা গেল যে সরকারী কর্মকর্তাদের পাসপোর্ট নীল রঙের  পুলিশ ভেরিফিকেশান এর ঝামেলা নাই 

এই পোস্ট ভাল লাগলে  কমেন্টে জানান দিয়েন প্লিজ   ধন্যবাদ  

সূত্র -  ইকারুসের ডানা, সামহোয়ার ব্লগ।

0 comments:

Post a Comment